• facebook
  • twitter
Monday, 19 May, 2025

‘ন্যাক’ কেলেঙ্কারি

সব মিলিয়ে মোট ২৮ লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে

প্রতীকী চিত্র

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কেন্দ্রীয় মূল্যায়ন পর্ষদ অর্থাৎ ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল (ন্যাক)-এর বেলাগাম দুর্নীতি ও বেআইনি লেনদেনের খবর এবার প্রকাশ্যে এল। নিট, নেট ও এনটিএ কেলেঙ্কারির পর এবার এই দুর্নীতির ঘটনায় কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রকের নাম জড়ালো। এই কেলেঙ্কারিতে এবার ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে সিবিআই। তাঁরা সবাই দেশের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক এবং আরএসএস ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি অভিযুক্তদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘুষের বিনিময়ে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার এক ‘অস্তিত্বহীন’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ন্যাক-এর আওতায় ‘প্রথম শ্রেণির’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় খোদ ন্যাক-এর সমীক্ষক কমিটির চেয়ারপার্সন সহ ৬ সদস্যের সবাইকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সিবিআই-এর দায়ের করা এফআইআর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে ‘কনেক লক্ষমাইয়া এডুকেশন ফাউেন্ডশন’ নামক সংস্থাটির উৎকর্ষের শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে বহুদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। গোটা লেনদেনের খুঁটিনাটি বিষয় সহ দরাদরির যাবতীয় তদারকি করেছিলেন সমীক্ষক কমিটির অন্যতম সদস্য, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-র এক অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে সমীক্ষক কমিটির চেয়ারপার্সনকে ১০ লক্ষ টাকা এবং বাকি সদস্যদের মাথাপিছু ৩ লক্ষ টাকা ও একটি করে ল্যাপটপ ‘উপহার’ দেওয়া হয়। এই বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য জিপি সারধি ভার্মা, সহসভাপতি কনেরু রাজা হারীন ও অধ্যক্ষ এ রামকৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও রামচন্দ্র চন্দ্রবংশী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ন্যাক সমীক্ষক কমিটির চেয়ারপার্সন ড. সমরেন্দ্রনাথ সাহা এবং জেএনইউ-র অধ্যাপক রাজীব সিজোরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি সমীক্ষক কমিটির সদস্য বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম হনুমান থাপা, ন্যাক বেঙ্গালুরুর উপদেষ্টা এম এস শ্যামসুন্দর, দেবনাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী দেবরাজা প্রমুখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে মোট ২৮ লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে। তদন্ত মারফত জানা গিয়েছে, ন্যাক সমীক্ষকদের তরফে প্রথমে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। জেএনইউ-র অধ্যাপকের মধ্যস্থতায় তা কমিয়ে আনা হয়। এই সমীক্ষার রিপোর্ট তিনিই তৈরি করবেন বলে জানানো হয়। গোটা লেনদেনে রাজীব সিজারিয়ার ছেলে ফলিত সিজারিয়াও অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক বিশ্বব্যিালয়ের অধ্যাপককে এই দুর্নীতির অভিযোগেগ্রেপ্তার অথবা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় বিজয়ওয়ারা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পালামু, সম্বলপুর, ভোপাল, বিলাসপুর, গৌতমবুদ্ধ নগর ও দিল্লির প্রায় ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। অন্তত ৩৭ লক্ষ টাকা, ছয়টি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন সহ বিভিন্ন সন্দেহজনক নথি উদ্ধার হয়েছে। দেশের অন্যান্য শহরেও ন্যাক সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি ও বেআইনি লেনদেন চলেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এদিকে জেএনইউ-র ধৃত অধ্যাপক রাজীব সিজারিয়ার পরিচয় সামনে আসতেই এই ঘটনাকে ঘিরে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জেএনইউ-র ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক সিজারিয়া আরএসএস ও তার শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ও অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘের (এবিআরএসএম) সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত। একাধিক সোশ্যালমিডিয়া হ্যান্ডেলে সঙ্ঘ ও বিজেপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মিলেছে। তবে গ্রেপ্তারির পরেই এই সংক্রান্ত যাবতীয় পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে। জেএনইউ-র একাধিক শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন উপাচার্য এবং বর্তমানে ইউজিসি-র অধ্যক্ষ এম জগদীশ কুমারের তত্ত্বাবধানে পর্যাপ্ত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপকের চাকরি পান রাজীব। সঙ্ঘের ’আশীর্বাদে’ তিনি ‘অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন’ (এমআইসিটিই)-র উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য হন। জেএনইউ-র এক অধ্যাপক ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গৈরিকীকরণের প্রধান কাণ্ডারী হিসাবে সিজারিয়াকে চিহ্নিত করেন। বাম ছাত্র আন্দোলন ভাঙতে এবং তাঁরই প্ররোচনায় ও প্রচ্ছন্ন সমর্থনে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা বিশ্ববিদ্যালেয় চত্বরে ঢুকে প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের নিগ্রহ, বেধড়ক মারধর ও যৌন হেনস্থায় উৎসাহী হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গ্রেপ্তারির পর আপাতত তাঁকে বরখাস্ত করেছে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ।

কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারিতে নির্বিকার ও অবিচল মোদী-শাহ সরকার। সমাজের সর্বস্তরে বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে এই ধরনের জঘন্য কাণ্ডের পরও হিন্দুত্ব বিস্তারে ও গৈরিকিকরণের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে সঙ্ঘ পরিবার।