দেশের প্রায় সমস্ত বিদ্যালয়ে দেখাতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শৈশব নিয়ে তৈরি একটি শর্ট ফিল্ম ‘চলো জিতে হ্যায়’। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব এই নির্দেশ পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মধ্যশিক্ষা অধিদপ্তর (সিবিএসই), কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন (কেভিএস) ও নবোদয় বিদ্যালয় সমিতি (এনভিএস)-কে। নির্দেশ মতো তারাও নিজেদের অধীনস্ত বিভিন্ন স্কুলে তা পাঠিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি মোদীর শৈশব নিয়ে তৈরি শর্ট ফিল্মটি পুনরায় দেশজুড়ে আবার প্রকাশ করার কথা ঘোষণা করেছে শিক্ষামন্ত্রক। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রায় সমস্ত স্কুলে তা দেখানোর নির্দেশও জারি হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের উপস্থিতিতে এই সিনেমাটি প্রকাশ করা হয়। কেন্দ্রের মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, মহেশ শর্মা, এম জে আকবর ও রাজ্যবর্ধন রাঠোরের উপস্থিতিতে এই সিনেমার প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন পুরনো সংসদ ভবনের অডিটোরিয়ামে তা দেখানো হয়। সপ্তাহান্তে এর স্বত্ব হটস্টারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। যথারীতি চরিত্র গঠনের নামে মোদীকে নিয়ে এই বিজ্ঞাপনী প্রচার কেউ দেখতে উৎসাহ বেধ করেননি। অগত্যা দিনকয়েকের পরেই তা ইউটিউবে পোস্ট করে দেওয়া হয়।
Advertisement
তবে নরেন্দ্র মোদীর গুণগান গাওয়ায় যথারীতি সে বছর এই সিনেমাটি জাতীয় পুরস্কার পায়। বিদেশের বেশ কয়েকটি ফিল্ম উৎসবেও এই সিনেমা দেখানোর জন্য সুপারিশ করেন সিনেমাটির পরিচালক মহেশ হাদাওয়ালে ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্যও নাম পাঠানো হয়। তবে সেখানেও সুপার ফ্লপ। মাসখানেকের মধ্যে এই সিনেমাটির কথা সকলেই ভুলে যান।
Advertisement
স্বাধীনতা-উত্তর গুজরাতের বাডনগরে নরেন্দ্র ওরফে নারু নামের এক দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এই সিনেমাটি। এই চরিত্রের মাধ্যমেই মোদীর ছেলেবেলাকে তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমায় দেখা যাচ্ছে, অবচেতন মনে নরেন্দ্র কখনও বিবেকানন্দ, কখনও ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেবের থেকে ব্যক্তিগত উপদেশ পাচ্ছে। তাঁদের উপদেশে সে একের পর এক কাজে সফল হচ্ছে। এই সিনেমার মূল উদ্দেশ্যই মোদীর জয়গান।
কিন্তু শিক্ষামন্ত্রকের ফরমানে বলা হচ্ছে, ‘এই সিনেমায় স্কুল শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের পাঠ মিলবে। এছাড়াও তাদের নৈতিক বিবেচনা, সামাজিক অনুভূতি, সহানুভূতি, আত্মবিশ্লেষণ ও যুক্তিবোধের অনুপ্রেরণা মিলবে।’
দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এমন স্তরের বিজ্ঞানী প্রচার সাধারণত অতীতের স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রে হতো। ভারত ছাড়া আর কোনও গণতান্ত্রিক দেশে সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশনামার ভিত্তিতে জোর করে স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রী প্রধানমন্ত্রীর শৈশব নিয়ে তৈরি আষাঢ়ে গল্প দেখানো হয় না।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মোদীর শৈশব নিয়ে তৈরি এই সিনেমার মহৎ উদ্দেশ্য প্রমাণে সরকারি প্রচার মাধ্যম পিআইবি বিবেকানন্দকেও জড়িয়ে নিয়েছে। পিআইবি-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সিনেমা দেখার মাধ্যমে নাকি বিবেকানন্দের ভাবদর্শের প্রতি সম্মান জাননো হবে। পিআইবি-র দাবি, সিনেমায় যেহেতু দেখানো হয়েছে যে মোদী শৈশবে অবচেতন মনে খোদ বিবেকানন্দের উপদেশ পেতেন, তাই এই সিনেমা না দেখলে মোদী এবং বিবেকানন্দ, দু’জনকেই অসম্মান করা হবে।
বছর সাতেক আগে তৈরি সিনেমাটি ‘ফ্লপ হওয়ার পরে ইউটিউবে দেওয়া হলেও দর্শক মেলেনি। তাই পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নতুন করে মোদীর ইমেজ গড়ে তোলার চেষ্টায় সরকারি প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা, বিলে-নরেন্দ্রনাথ বা বিবেকানন্দের ছেলেবেলা ভুলিয়ে দিয়ে মোদীর ছেলেবেলা স্থান পেতে চাইছে ইতিহাসে। সে গুড়ে বালি। ইতিহাস মিথ্যাকে প্রশয় দেয় না, ক্ষমতাকেও তোয়াক্কা করে না।
Advertisement



