হাঁসুয়ার কোপে মৃত্যু

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি (Photo: iStock)

তৃতীয় দফার ভােটে বাংলায় হিংসা ফণা তুলল। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভােটেও অশান্তি হল, কিন্তু মৃত্যু দেখল তৃতীয়তে। মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবান গােলায় গ্রামাঞ্চলের একটি বুথে ছেলে ও তার বাবা ভোট দিতে এসে হিংসার বলি হলেন বাবা।

জীবনে প্রথম ভােট দিতে এসে ছেলে দেখল হাঁসুয়ার কোপে তার পিতার ছিন্ন দেহ। তিনি একজন কংগ্রেস কর্মী, কিন্তু যারা তাকে হত্যা করল, তারা যে দলের যে মতেরই হােক না কেন, হিংসার উন্মত্ততায় মেতে উঠল। তাই সম্প্রতি ও সৌহার্দ্যের বাংলা ভােটে অতীতের কালিমা বহন করেই মৃত্যু দেখল।

সবচাইতে পরিতাপের, যেখানে হাঁসুয়ার কোপ পড়ল এই কংগ্রেস কর্মীর দেহে, তার আশেপাশেই পুলিশ ছিল, ছিল কেন্দ্রীয় ফোর্সের জওয়ানরা- তারা এই প্রাণটা বাচাতে পারল না?


তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কেন এই কেন্দ্রীয় ফোর্স আনা– শুধু কি লােক দেখানাে দ্রুত পদচালনা ও বুটের শব্দ তুলে রুট মার্চ করা? রাজ্য পুলিশর ওপর আস্থা নেই, তা তাে ঘটনাস্থলেই জানা গেল শাসক দলের একজন নেতার মুখ থেকে।

একজনের মৃত্যু হলেও, তা মৃত্যু। যে পরিবারটির মারা গেল, সেই পরিবারটি পথে বসল। কমিশন যখন বলে, আপনারা নির্ভয়ে ভােট দিন। আর এই কংগ্রেস কর্মী তার ভােটাধিকার প্রয়ােগ করতে এসেই জীবন দিলেন।

এর কোনও সদুত্তর নেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের মুখে, যিনি সাংবাদিক সম্মেলন শুরুই করলেন ভােট শান্তিপূর্ণ বলে। কোনও ব্যাখ্যা নেই দুজন পর্যবেক্ষকের কাছও, তারা তাে এসেছেন শান্তিপূর্ণ ভােট করাতে।

যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই ঘৃণ্য কাজের অভিযােগ উঠল, তখন দলের একজন নামি নেতা বললেন, দুই পরিবারের মধ্যে কলহ ছিল তারই পরিণাম। তাই ভােট দিতে এসে এই কলহেই প্রাণ গেল।

তাহলে এই লােকসভায় পশ্চিমবঙ্গে হিংসা নিবারণার্থে সাত দফায় ভােট, এত কেন্দ্রীয় ফোর্সের আমদানি, এত মাত্রা অবজারভার, বেছে বেছে দু’জন পর্যবেক্ষক নিয়ােগ রাজ্য প্রশাসনের সশস্ত্র পুলিশ মােতায়েন– ওই যে ব্যাপক আয়ােজন, এর একটি মাত্র উদ্দেশ্যই তাে এ রাজ্যে ভােট যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তা দেখা।

পশ্চিমবঙ্গে হিংসায়, সংর্ঘষে, রক্তপাত না ঘটলে এবং সর্বোপরি মৃত্যুহীন ভােট হয় না, এই অপবাদ ঘােচাতেই এবার এত এলাহি আয়ােজন করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন । তৃতীয় দফাতেই এই আয়ােজন মুখ থুবড়ে পড়ল ।

বিচ্ছিন্ন অশান্তির ঘটনা ঘটল, তখন কমিশন সিদ্ধান্ত নিল, ৯২ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় ফোর্সের জওয়ানরা থাকবেন  তখন আশ্বস্ত হওয়া গিয়েছিল তৃতীয় দফায় শান্তিপূর্ণ ভােটই হবে। কমিশনের কথায় শান্তিপূর্ণ ভােট হয়েছে কিন্তু একজনের প্রাণ গেছে। কয়েকজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

যে পাচটি কেন্দ্রে তৃতীয় দফায় ভােট হয়েছে, কমবেশি সবাটিতেই অশান্তির নানা ঘটনা ঘটেছে। যদিও কোনও কোনও বিরােধী রাজনৈতিক দল মনে করে কেন্দ্রীয় ফোর্স বেশি থাকাতে অপেক্ষাকৃত শান্তিতে ভােট হয়েছে। এদিন ছােটখাটো ঘটনা ঘটলেও এখন চতুর্থ দফায় নির্বিঘ্নে ভােট হবে এই আশা নিয়েই বসে থাকা।

মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিস বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া, অন্য কিছু দেকতে পাচ্ছেন না। একজনের যে প্রাণ গেল, তাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হল। আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের তরফে বলা হয়েছে, তাদের দায়িত্ব নাকি শুধু ইভিএম রক্ষা করা।

ভগবানগােলায় এই মৃত্যু নিয়ে কোনও বড় নেতাই দুঃখপ্রকাশ করেননি– আমরা আশা করব বাকি চার দফার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। কোনও হিংসার ঘটনা ঘটবে না। সব রাজনৈতিক দল, তাদের প্রার্থীরা, ভােটদাতারা এবং সাধারণ মানুষ সহযােগিতা করবেন যাতে পরের দফার ভােট শান্তিপূর্ণ হয়। তা যদি সত্যিই হয়, তাহলে তাে তা অত্যন্ত স্বস্তির, আনন্দের।

অন্য রাজ্যগুলিতে ভােটে অশান্তির যখন তেমন কোনও খবর নেই, তখন বাংলায় ভােটে আশান্তি, অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যে বাংলা শিক্ষাদীক্ষায়, সংস্কৃতির বিকাশে অন্যান্য বাজের তুলনায় অনেক এগিয়ে, সেখানে ভােট এলেই বাতাস ভারী হয়ে উঠবে , হিংসা ক্ৰমে থাবা বসাবে তা