দেশে অসামরিক বিমান চলাচলে ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই আমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার পুরো দায় এই সরকারের। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার, পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকারের কোনও হুঁশ হয়নি। নিরাপত্তা বিষয়েও সরকার এতটাই উদাসীন থাকে কীভাবে? এটি অমার্জনীয় অপরাধ।
আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৪৬ জনের মৃত্যুতে সারা দেশে অসামরিক বিমান পরিবহণের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র তিন মাস আগেই এ বিষয়ে মোদী সরকারকে সতর্ক করেছিল সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি। চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদে রিপোর্ট পেশ করে জানানো হয়েছিল, ‘বরাদ্দে অসঙ্গতি’ ও অসংখ্য শূন্যপদের কারণে বিমান যাত্রায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। খোদ অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) ৫৩ শতাংশ পদ ফাঁকা। এছাড়া ব্যুরো অব সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস) এবং এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলিতে কোথায় কত পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে, তারও হিসেব পেশ করে কমিটি। বিমানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো ও দুর্ঘটনা নিয়ে উপযুক্ত তদন্ত চালানোর দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিপর্যয়ের পর নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট। বরাদ্দ ও শূন্যপদ পূরণে মোদী সরকার কি আদৌ কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেডিইউ সাংসদ সঞ্জয় ঝা’র নেতৃত্বে পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত ২৫ মার্চ সংসদে এই রিপোর্টটি পেশ করে। সেখানে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ এভিয়েশন সংস্থাগুলিতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। ২০২৫-২৬ সালে বরাদ্দ মোট অর্থের প্রায় অর্ধেক, ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ডিজিসিএ-র জন্য। সেই তুলনায় বিসিএএস এবং এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ অনেক কম। কমিটির বক্তব্য ছিল, দেশে অসামরিক বিমান পরিবহণ পরিকাঠামোর দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। ২০১৪ সালে দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৭টি। ২০২৫ সালের মধ্যে তা আরও বাড়িয়ে ২২০টি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।
পরিকাঠামো সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিমানের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার উপযুক্ত তদন্তের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আগাম প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সূত্রেই বিভিন্ন সংস্থায় বরাদ্দ অর্থের অসঙ্গতির বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয় কমিটির তরফ থেকে। একই সঙ্গে এইসব সংস্থায় যে প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব রয়েছে, রিপোর্টে তারও উল্লেখ করা হয়। ডিজিসিএ-তে মোট ১৬৩৩টি পদের মধ্যে ৮৭৯টি পদই ফাঁকা পড়ে আছে, সরকারকে এই তথ্য জানায় সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট। বিপিএএসে ৫৯৮টির মধ্যে খালি রয়েছে ২০৮টি (প্রায় ৩৫ শতাংশ) পদ। এএআইয়ের অবস্থা তুলনামূলকভাবে একটু কম খারাপ। ১৯,২৬৯টি পদের মধ্যে ৩,২৬৫টি (১৭৪) ফাঁকা। আহমেদাবাদের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার আবহে সংসদীয় কমিটির ওই রিপোর্ট স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।
এটা স্পষ্ট যে, অসামরিক বিমান পরিবহণের নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের কোনও হেলদোল নেই। এ বিষয়ে সরকারের ন্যূনতম নজর থাকলে এত বড় দেশে যেখানে দুশোর বেশি বিমানবন্দরে প্রতিদিন বিমান ওঠা-নামা করে, সেখানে কোন বিবেচনায় মাত্র ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ডিজিসিএৃর জন্য? বিসিএএস এবং এয়ারকক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ আরও অনেক কম। এছাড়া ডিজিসিএ, বিসিএএস ও এএআই-তে এত পদ শূন্য রাখা হয় কোন ভরসায়, যেখানে বিমান চলাচলে সর্বদা ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা জরুরি। এক্ষেত্রে ১ শতাংশ গাফিলতি তথা অবহেলায় ক্ষতি অপরিসীম।
আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামরিক বিমানে যাতায়াত করেন। তাই অসামরিক বিমানে পরিবহণ নিরাপত্তার বিষয়ে মোদী সরকার গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করে না। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয় না। শূন্য পদ পূরণ হয় না। যার পরিণতিতে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। সরকারের চূড়ান্ত অবহেলায় মাশুল গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে।