মর্যাদাহানি

আবারও ক্ষুন্ন হল শীর্ষ আদালতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা। বিদায়ী বিচারপতি অরুণ মিশ্র’র বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যা ঘটল তা শুধু অপ্রীতিকর নয়, অবমাননা।

Written by SNS Kolkata | September 10, 2020 4:28 pm

সুপ্রিম কোর্ট (File Photo: iStock)

আবারও ক্ষুন্ন হল শীর্ষ আদালতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা। বিদায়ী বিচারপতি অরুণ মিশ্র’র বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যা ঘটল তা শুধু অপ্রীতিকর নয়, অবমাননা। এই ধরনের বিদায়ী সভার রীতি হল, বার অ্যাসােসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সমস্ত আইনজীবীর প্রতিনিধি হয়ে বিচারপতির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে থাকেন। কিন্তু বার অ্যাসােসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দুষ্মন্ত দাভে যখন বলতে উঠলেন তখন দেখা গেল তাঁর মাইকটি মিউট করা রয়েছে। বার অ্যাসােসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের কণ্ঠ রােধ করে কার্যত শীর্ষ আদালতের সকল আইনজীবীদের অস্বীকার করা হল। 

খবরে প্রকাশ বিদায়ী বিচারপতি অরুণ মিশ্রের সঙ্গে দাভের ব্যক্তিগত সমীকরণ মসৃণ নয়। সম্প্রতি প্রশান্ত ভূষণের আদালত অবমাননার মামলায় দাভে ভূষণের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। সেই সময় বিচারপতি মিশ্রের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয়েছিল। সেই জন্যই কি তাঁকে বলার সুযােগ দেওয়া হল না? এতে কি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, বিচারপতি মিশ্রের মর্যাদা রক্ষা পেল? সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল, সলিসিটর জেনারেল প্রমুখ, তাদের সামনেই এমন একটি ঘটনা প্রমাণ করল যে আদালত তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। 

দাভে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবীদের প্রতিনিধি হিসেবে, তাঁকে বলতে না দিয়ে বিচার বিভাগ ও তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ আইনজীবীদের মধ্যে একটা তিক্ততা তৈরি হল। বিচারবিভাগের প্রতিনিধিরা কি ভুলে গেলেন যে তাঁরা প্রত্যেকেই জীবন শুরু করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে। তাঁরাও একদিন কোনও না কোনও বার অ্যাসােসিয়েশনের সদস্য ছিলেন, এই ঘটনা অ্যাসােসিয়েশনের সদস্য হিসেবে তাদের মর্যাদাও ক্ষুগ্ন করল। 

তারা কি এতই ছেলেমানুষ হয়ে গেলেন যে বুঝতে পারলেন না। আজকের সমাজ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমের যুগে এই ভাবে কণ্ঠ রােধ করা অসম্ভব। দুষ্মন্ত দাভে ঘটনার প্রতিবাদে প্রধান বিচারপতিকে যে প্রতিবাদ পত্রটি লিখেছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা আসমুদ্র হিমাচল ছড়িয়ে পড়েছে। পৌঁছে গিয়েছে সাগরপারেও। তাই তাঁর রােধ তাে সম্ভব হয়ই নি, উল্টে সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছেছে যে, বিচারপতিরা যদি এমন হীন আচরণ করেন, তবে সাধারণ মানুষ তাদের কাছে কী প্রত্যাশা করবেন? 

গণতান্ত্রিক দেশে সুপ্রিম কোর্টের মতাে প্রতিষ্ঠানে কোনও একটি অংশের অতি-সক্রিয়তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এক পক্ষ যদি অন্য পক্ষকে অবাঞ্ছিত মনে করেন, তবে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য হানিকারক। ইদানিং নানান ভুল কারণে সুপ্রিম কোর্ট খবরের শীর্ষে স্থান পাচ্ছে, এরকম চলতে থাকলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যেটুকু শ্রদ্ধা অবশিষ্ট আছে, তা বিলােপ পাবে।