আসছে দীপাবলি। আলোর উৎসব। অন্ধকার থেকে আলোর উৎসরণের উৎসব। সেই সঙ্গে তিলোত্তমার বুকে ফাটানো হবে নিষিদ্ধ বাজি, শব্দ বাজি। তিলোত্তমার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। কলকাতার দূষণের মাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়বে, বাড়বে বায়ু দূষণ। বাড়বে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত নানা অসুখ। কলকাতা জনবহুল শহর— শহরের বুকে প্রতিদিন চলে অসংখ্য গাড়ি। সুতরাং কালো ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হয়—দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তারপর দীপাবলির শব্দবাজি ও নিষিদ্ধ শব্দবাজি কমানোর জন্য শহরের পরিবেশ আরও দূষিত হয়। আলোর উৎসব শুধু আলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এখন যেমন পুজো দেবীর পিতৃগৃহে আগমনের আগেই শুরু হয়— মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহরের বেশ কয়েকটি পুজো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে— তেমনই দীপাবলির বেশ কয়েকদিন আগেই শহরগুলিরও বাজি পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই শহরে এবং শহরের বাইরে অনেক জায়গায় শব্দবাজি ফাটানো শুরু হয়ে গেছে। অপেক্ষা আর সইছে না। গোপনে নিষিদ্ধ বাজি কেনাবেচাও চলছে। পুলিশ তার খবর রাখে কি?
Advertisement
প্রতি বছরই দীপাবলির আগে শব্দবাজি ও নিষিদ্ধ শব্দবাজি বন্ধের অনেক কথা আমরা শুনি। কলকাতা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পরিবেশবিদরা বড় গলায় বলেন, এবার নিষিদ্ধ শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কমবে। তার জন্য নানা বিধিব্যবস্থার কথা শোনানো হয়। কিন্তু প্রতি বছরই তাদের কথা কথাই থেকে যায়। ব্যাপক হারে নিষিদ্ধ শব্দ বাজি ফাটানো হয়— তার বিকট শব্দে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগীরা বিশেষ করে যাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাঁরা চরম অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। কলকাতা পুলিশ এবারও আশ্বাস দিয়েছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি শহরের নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হবে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের নগরপাল সদলবলে শহিদ মিনার ময়দানে বাজির যে মেলা বসেছে তা ঘুরে দেশে এসেছেন, কিন্তু নিষিদ্ধ বাজির কোনও সন্ধান মেলেনি। নগরপাল মহাশয় শহরবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন এবার তাঁরা নিষিদ্ধ শব্দবাজির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। সেই মতো পুলিশ কাজ করছে। সুতরাং শহরবাসী অপেক্ষা করে থাকবেন মাননীয় নগরপালের আশ্বাস বাস্তবে মেলে কিনা। প্রতি বছর দীপাবলিতে শব্দবাজির দাপটে সাধারণ মানুষ চরম অস্বস্তি বোধ করেন। এমনকি হাসপাতালগুলির সামনেও শব্দবাজি পোড়ানো চলে— পুলিশ কোথা থেকে এই বাজি ফাটানো হচ্ছে ধরতে ব্যর্থ। কলকাতার বড় বড় আবাসন ও অলিগলি বেয়ে লুকিয়ে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো হয় অবলীলায়— পুলিশের কিছু করার থাকে না। প্রতি বছরই এই জিনিস চলছে।
Advertisement
প্রতি বছরই দীপাবলি আসার অনেক আগে থেকেই কলকাতা পুলিশ শহরজুড়ে অভিযান চালায় নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারের জন্য। তারা বেশ কিছু নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করে। কিন্তু তা অতি সামান্য। দীপাবলির রাতে দেখা যায় নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো হচ্ছে শহরের চারদিকে এবং শহরতলিতে। পুলিশ তার সন্ধান পায় না কোথায় এই বাজি ফাটানো হচ্ছে। দীপাবলির রাতে এবং তার পরে কয়েকদিন ধরে যে শব্দবাজি ফাটানো হবে, তাতে শহরের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ দারুণভাবে বেড়ে যায়। শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাব্যক্তিরা দীপাবলিতে ব্যাপক শব্দবাজি ফাটানোর জেরে শহরের দূষণ যে ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়, তা নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজে পান না। তাঁরা মুখে বলেন শব্দবাজির দূষণ থেকে মানুষকে যথাসম্ভব রক্ষা করা হবে। কিন্তু তাঁদের কাজে আমরা কিছু দেখতে পাই না! কলকাতা একটি জনবহুল শহর— আবার দূষণের মাত্রাও বেশি। তাছাড়া শহরের বুকে বিপুল পরিমাণ গাড়ি চলে প্রতিদিন। অনেক গাড়ি খারাপ হয়ে গেলেও তা চালানো হয়। তার থেকে যে কালো ধোঁয়া নিঃসরণ হয়, তাতে শহরের বাতাস আরও দূষিত হয়ে পড়ে। পর্ষদের কর্তা-ব্যক্তিদের কলকাতাকে দূষণমুক্ত করার জন্য বছরভর কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। পরিবেশবিদরাও দীপাবলিতে যে ব্যাপকভাবে শব্দবাজি ফাটানো হয়, তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরাও দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে বড় বড় কথা বলা ছাড়া আর তেমন কিছু করতে পারেন না। একজন পরিবেশবিদ বলেন, দীপাবলির রাতে যেভাবে শব্দবাজি ফাটানো হয়, তা ভয়াবহ!
Advertisement



