দেশের ইতিহাসে এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি সময় চলছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের ঐক্য, সংহতি, সমন্বিত সদিচ্ছা, ঐক্যবদ্ধ সংকল্প দেখানো জরুরি। একারণেই দলমত নির্বিশেষে সবার মতামত নিতে জরুরি ভিত্তিতে এখনই সংসদের বিশেষ অধিবেশন। ডাকা একান্ত জরুরি। গোটা বিশ্বের কাছে ভারত যে একজোট, সেই বার্তা দিতে পারে এই অধিবেশন। তবে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আদৌ উপস্থিত থাকবেন কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি সর্বদল বৈঠক ডাকলেও তিনি সেদিন হাজির না থেকে চলে গিয়েছিলেন বিহারে নির্বাচনমুখী প্রচারে।
এই মুহূর্তে ঐক্য ও সংহতি প্রদর্শন যখন অপরিহার্য তখন বিরোধীরা মনে করে সংসদের উভয় কক্ষে অবিলম্বে বিশেষ অধিবেশন ডাকা উচিত সব দলের মতামত নেওয়ার জন্য। এর মাধ্যমেই গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত সংকল্প এবং ইচ্ছাশক্তি কতটা জোরালো তা দেখানো সম্ভব হবে। একজোট হয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে, সন্ত্রাস, চালিয়ে ভারতের ঐক্য ভাঙা যাবে না। এই সঙ্কট মুহূর্তে ভারতের দেখানো উচিত যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই একজোট। বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে জনপ্রতিনিধিরা ঐক্য এবং সংকল্পের বার্তা দিতে পারবেন।
রাহুল গান্ধী, খাড়গে সহ বিরোধী নেতাদের সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা নিয়ে বিজেপি বা কেন্দ্রের তরফে সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপির অন্যতম নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে যা বলার সরকার বা সংসদ বলবে। তবে আমার মনে পড়ছে না এভাবে কোনও সন্ত্রাসবাসী হামলার পর স্রেফ জবাব দেওয়ার জন্য ইতিপূর্বে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। কিনা।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা এক চিঠিতে আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, ‘এই সময় পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহতদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একত্রিত হওয়া উচিত। তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো উচিত এবং ভারতীয়রা যে ঐক্য, ন্যায়বিচার ও শান্তির পক্ষে বদ্ধপরিকর— সেকথা আবারও বলার প্রয়োজন আছে। একারণেই শুধুমাত্র পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা একান্ত জরুরি। ভারতের জনগণের নিরাপত্তা, কল্যাণ এবং আকাঙ্ক্ষার উপর সীমান্তের প্রভাব নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
পহেলগামের জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে যৌথ প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হলে গোটা বিশ্বকে এই বার্তা দেওয়া যাবে যে, সঙ্কটের সময় ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলের অবস্থান একই। হামলার ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই বিশেষ অধিবেশন ডেকে যৌথ মতপ্রকাশ জরুরি সংহতি জানানোর জন্য। সাধারণত মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে সর্বসম্মতভাবে সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এখানেই সিপিআই (এম) বিধায়ক ইউসুফ তারিগামী একটি ন্যায্য প্রশ্ন তলেছেন।
তাঁর বক্তব্য হল, রাজ্যের মর্যাদা আইন করে কেড়ে নেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। তবু ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এই নৃশংস ঘটনার নিন্দা করে ক্ষমা চেয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘটনার পর আমিত শাহকে পাঠিয়ে দায় সেরেছেন, নিজে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। মণিপুরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন বলে যৌথ অধিবেশন ডাকার বিষয়েও নিশ্চুপ মোদী।