দোলের দিন যেভাবে শহর এবং জেলায় মানুষ করোনা বিধি উড়িয়ে দিয়ে রং খেলায় মেতেছিলেন তার জেরে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পায় কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন চিকিৎসক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, দুর্গাপুজোর শেষ চারদিন দর্শনার্থীরা যেভাবে শহরের বড়সড় পুজো প্যান্ডেলের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন, তার ফলে অল্পদিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পেতে থাকে।
Advertisement
দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে মৃত্যুও। অনেকেই তাকে তৃতীয় ঢেউ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
Advertisement
যখন সংক্রমণ বাড়তেই থাকল, তখন প্রশাসন আবার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মানার নির্দেশিকা জারি করল।
বেশ কিছুদিন ধরে দৈনিক আক্রমণের নিরিখে শহর কলকাতা শীর্ষে থাকে। তারপর উত্তর চব্বিশ পরগনা। স্কুলগুলিতে ওপরের ক্লাস চালু হলেও আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শহরে অনেকগুলি কনটেনমেন্ট জোনও চালু হয়। শহরগুলির বাজারগুলি প্রতিদিন চালু রাখার ব্যাপারে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞার আশ্রয় নিতে হয়।
তারপর গঙ্গাসাগর মেলা, কলকাতা পুরসভার নির্বাচন এবং পরবর্তী পর্যায়ে চারটি পুরনিগমের নির্বাচনে করোনা বিধি অবজ্ঞা করে প্রচার চলে।
ফল প্রকাশের পর শাসক তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে। সবুজ আবিরের মাখামাখিতে চলে উদ্দাম নৃত্য শহরের রাজপথে। এর কারণে করোনা সংক্রমণ আবার কিছুটা মাথা তোলে।
তারপর সারা রাজ্যে ১০৮ পুরসভার নির্বাচন হয় করোনা বিধি মেনে নির্বাচন হবে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষণআ করলেও তা মানা হয়নি।
বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা বিধি ভেঙেই প্রচার চালান। রক্ষে এ যাত্রায় সংক্রমণ ছড়ায়নি, বরং আস্তে আস্তে তার কামড় কমতে থাকে।
সম্প্রতি চিকিৎসক এবং প্রশাসনকে স্বস্তি দিয়ে করোনার ছোবল অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
গত দু’তিন সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে আক্রমণের হার নিম্নমুখী। বেশ কয়েকদিন করোনায় মৃত্যুহীন ছিল বাংলা। এর চেয়ে স্বস্তি আর কিছু হতে পারে না।
পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির ফলে জীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসছে। এখন করোনা নিয়ে চিকিৎসক এবং প্রশাসনের চিন্তা অনেক কম।
প্রায় দু’বছর পর আবার প্রাইমারি স্তর থেকে স্কুলগুলি খোলা হল। নীচের ক্লাসে কচিকাচাদের পঠনপাঠন শুরু হল। বাচ্চারা তাদের স্কুলের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল।
দীর্ঘদিন পর রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি আবার খোলায় অভিভাবকদের স্বস্তি মিলল। তারা আনন্দিত। খুশি শিক্ষা দফতরও।
ইতিমধ্যে বসন্ত উৎসব এসে গেল। এই উৎসবে আবির খেলা, রং মাখামাখি সহ নাচগানের আসর বসে।
রং দেওয়া, রং মাখা নিয়ে মাতামাতি– সুতরাং দোল খেলার আনন্দে মেতে উঠলেন রাজ্যবাসী। গত দু’বছর করোনার দাপাদাপিতে আবির খেলা নিয়ে হুল্লোড় হয়নি।
একজন চিকিৎসক বললেন, যখন দোলে রঙের খেলা চলছিল, করোনাবিধি একেবারে ভুলে গিয়ে, তখন চিন্তা হচ্ছিল এই অবাধ মেলামেশা এবং রং খেলার কারণে করোনা আবার না মাথা তুলে ওঠে।
চিকিৎসকদের এই উদ্বেগ কিছুটা মিলে গেল যখন সম্প্রতি রাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা একটা ছোট্ট লাফে বেড়ে দাঁড়াল ৭৫-মৃত্যু দুই।
এর আগের দু’দিন আক্রান্তের সংখ্যা ৩০-এ নেমে এসেছিল। মৃত্যু তো ছিলই না। সুতরাং সাবধান।
চিকিৎসকদের কথায়, দোল উৎসবের পর ১৪ দিন না গেলে বোঝা যাবে না করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। করোনা বঙ্গ ছাড়েনি।
বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ আলগা করে দিলে কিন্তু চলবে না। মাস্ক না পরে বাড়ির বের হওয়া একেবারেই উচিত নয়।
আর যেসব বিধিনিষেধ আছে তাও পুরো জলাঞ্জলি দিয়ে প্রমোদে গা ভাসালেও চলবে না। সুযোগ পেলেই করোনা কামড় বসাবে।
Advertisement



