ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে দ্বন্দ্ব

প্রাক স্বাধীনতা পর্বে কংগ্রেস দল সেকুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যে মতাদর্শ পােষণ করত তা মহম্মদ আলি জিন্না ও মুসলিম লিগের নেতারা বাতিল করে দেয়।

Written by SNS Kolkata | October 16, 2020 8:43 pm

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। (File Photo: IANS)

প্রাক স্বাধীনতা পর্বে কংগ্রেস দল সেকুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যে মতাদর্শ পােষণ করত তা মহম্মদ আলি জিন্না ও মুসলিম লিগের নেতারা বাতিল করে দেয়। পরিণামে ভারত ভাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

সংবিধানেও রাষ্ট্রের ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষতা বজায়ের সংস্থান রেখে এবং অতিরিক্ত গুরুত্বে ‘সেকুলারিজম’ তথা ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় রেখে আইনত মান্যতা দেওয়ারও চেষ্টা হয়। কিন্তু নীতিগতভাবে হিন্দু গােষ্ঠীর সংখ্যাধিক্যের কথা মাথায় রেখেই নাকি বর্তমান শাসক দলের আদর্শবাহক পূর্বসূরীরা এমন ব্যবস্থা করেছিলেন।

কিন্তু ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা কখনই ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রবিভাজনের কথা বলে না। অন্যপক্ষে ধর্মীয় বিষয়ে আইন আনা ও প্রশাসনিকভাবে ব্যক্তিগত অধিকারকে আরও নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেয়, বস্তুত বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিস্তৃত হস্তক্ষেপের বিষয়ে সাংবিধানিক সংস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন।

ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল ধর্মীয় সহনশীলতা, যা বিপরীত মতাদর্শ হিসেবে পশ্চিমী উদার মনােভাবাপন্ন দেশগুলিতে রাষ্ট্রকে চার্চ থেকে পৃথক করে দেখাই রীতি। কিন্তু ভারতে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করারই প্রচেষ্টা হয়েছে সংবিধানের প্রস্তাবনায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনায় তাকেই হাতিয়ার করার প্রচেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির এমনই এক প্রশ্ন করে বসেছেন- আপনি কি হঠাৎই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে পড়লেন? যা প্রেক্ষিত অনুযায়ী প্রণিধানযােগ্য। এই প্রশ্নে বহু বিষয়ই লুকিয়ে রয়েছে।

প্রথমত মনে হয় এখনই মন্দির খােলার দাবি মেনে না নেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষপাতমূলক ধারণা কাজ করেছে। মন্দির বন্ধ রয়েছে করােনাভাইরাসের বেশি সংখ্যায় সংক্রমণ এড়ানাের জন্যই। ধর্মীয় স্থানগুলি খােলা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্যসরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার এক্তিয়ারভুক্ত।

এক্ষেত্রে রাজ্যপালের প্রশ্ন করার কোনও এক্তিয়ার না থাকলেও তিনি সেকুলারিজমের বা ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই পেড়েছেন। দ্বিতীয়ত, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, রাজ্যপালের মতে মুখ্যমন্ত্রী পূর্বে ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না, এখন তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই পাড়ছেন। মনে রাখা জরুরি রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী উভয়েই তাদের দায়িত্বভার গ্রহণের সময়ে যে শপথ গ্রহণ করেন সেই অনুযায়ী কোনও মতপার্থক্য বা আদর্শগত কোনও পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পালনীয়।

উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের সময়ে সম্পূর্ণপক্ষে অধর্মনিরপেক্ষ হলেও বা একটি ধর্মের গোঁড়া সমর্থক হলেও তাকে এ ক্ষত্রে ধর্মনিরপেক্ষ না হয়ে উপায় নেই। অন্যপক্ষে সাংবিধানিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রাজ্যপালকেও তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষতা পালন করছেন না এমন অসাংবিধানিক মন্তব্য করার পর রাজ্যপালের পদও আঁকড়ে থাকার কোনও অধিকার থাকে না। এব্যাপারে অবশ্যই রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেবেন আশা করা যায়।