পহেলগামের গণহত্যার বদলা নেওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছিল তার বিরতি হল আমেরিকার মধ্যস্থতায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সোস্যাল পোস্টে এই সংঘর্ষের অবসানের কথা প্রথম ঘোষণা করা হয়। তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে, আমেরিকা প্রমাণ দিল, সে সুপার পাওয়ার এবং তার কথা শুনতে হবে। কিন্তু এই যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা সত্ত্বেও, কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শনিবার রাত থেকেই পাকিস্তান গুলি চালাতে থাকে। বিএসএফের জওয়ানরা তার যোগ্য জবাব দেয়। সুতরাং সংঘর্ষ বা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। অভ্রান্ত প্রমাণ মিললো যে, জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না। বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশকে বিশ্বাস করা গেলেও, পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না। তবে আমেরিকার মধ্যস্থতা পাকিস্তান মেনে নিল এমন একটা সময় যখন ভারতীয় জল, স্থল এবং বায়ু সেনারাও তাদের শৌর্যবীর্যের পরিচয় দিয়ে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল।
ভারতের তিন স্তরের বীর সেনারা পাকিস্তানের ড্রোন আক্রমণ বন্ধ করে একের পর এক ড্রোনকে বিধ্বস্ত করেছিল। পাকিস্তানের এয়ার বেস ধ্বংস করেছিল। পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলি ক্রমাগত গুলি বর্ষণ এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলিকে অকেজো করে দিয়েছিল— পাকিস্তানের বড় বড় শহরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। যুদ্ধ জাহাজ বিক্রান্ত থেকে ক্রমগত গুলি বর্ষণ এবং আধুনিক সব অস্ত্র প্রয়োগ করে করাচি বন্দরকে অচল করে দিয়েছিল। অর্থাৎ জলে স্থলে এবং আকাশে পাকিস্তান নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছিল। চন্দ্রভাগার লকগেট খুলে দিয়ে শিয়ালকোট এবং অন্যান্য শহরে বন্যার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং কোনও দিক থেকে যখন পাকিস্তান ভারতের পাল্টা প্রত্যাঘাতের সঙ্গে পেরে উঠছিল না তখন সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেকে গর্বিত করা আমেরিকার শরণাপন্ন হল যুদ্ধ বিরতিতে সাহায্য করতে। আর কিছুদিন ভারত যদি সংঘর্ষ চালিয়ে যেত তাহলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হতো পাকিস্তান। ১৯৭১-এর যুদ্ধে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার খবরদারি সহ্য করেননি। যদিও আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজ পাকিস্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। প্রায় ৯২ হাজার পাক সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এভাবে বশ্যতা স্বীকার করাকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন। তাঁরা বলেছেন এটা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বকে অপমান করা হলো। কারণ গত তিন-চার দিনের সংঘর্ষ প্রমাণ করল ভারতীয় সেনাবাহিনী কতটা শক্তিশালী, কত বেশি শক্তিধর ১৯৭১-এর তুলনায়। মোদীর এই সংঘর্ষ বিরতি মেনে নেওয়া সিমলা চুক্তিকে লঙ্ঘন করে। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনও বিষয় বিরোধের সূচনা হলে তৃতীয় কোনও পক্ষের মধ্যস্থতা করা চলবে না। কিন্তু এই সংঘর্ষ থামাতে আমেরিকার প্রস্তাবকে মেনে নেওয়া এই চুক্তিকে লঙ্ঘন করার সামিল।
ভারত-পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনার কথা, যদিও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। সুতরাং এই বৈঠক কতটা কার্যকরী হবে তা এখনই বলা যায় না। কারণ সংঘর্ষবিরতি নিয়ে যে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হলেও, পাকিস্তান যে পরবর্তী সময় তা লঙ্ঘন করবে না তা বলা যায় না। পাকিস্তানকে যে বিশ্বাস করা যায় না, আমরা আগেই তা বলেছি। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর বড় বড় কথা কোথায় হারিয়ে গেল। যদিও প্রধানমন্ত্রী তাঁর নানা কথায় নানা আলোচনায় একবারও সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেননি।
এই কয়েকদিনের সংঘর্ষে ভারতের সবচাইতে বড় লাভ, জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যে সব জঙ্গি ঘাঁটিগুলি পাকিস্তান পরম যত্নে এবং প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লালন পালন করে চলেছিল, সেই ঘাঁটিগুলিকে উড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। শুধু ধ্বংস নয়, বিস্ফোরণে ওড়ানো হলো বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা জঙ্গি নেতাদের গ্রাম ও বাড়ি। তারা যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট তা বোঝা গেল যখন তাদের কফিন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে আল্লাহো আকবর ধ্বনি তুলে সমাহিত করা হল। প্রধানমন্ত্রী কি ভাবছেন যে, এরপর পাকিস্তানের মদতে আর ভারতে জঙ্গি হানা হবে না অদূর ভবিষ্যতে? কারণ ওই যে বললাম পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না। তার প্রমাণ অতীতে যেমন অনেকবার পাওয়া গেছে, এবারেও তা পাওয়া গেল। আশ্চর্যের ব্যাপার, সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাবটা সর্বপ্রথম জানা গেল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সোস্যাল পোস্টে। এরপর কি আর বোঝার বাকি থাকে আমেরিকার চাপেই ভারতও বশ্যতা স্বীকার করল।
যদিও ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংঘর্ষ বিরতি ভারত মেনে নিলেও পাকিস্তান তা লঙ্ঘন করে গুলি গোলা চালিয়েছে, ভারতও তার সমুচিত জবাব দিয়েছে। তবে এইবার একটা সুযোগ এসেছিল পাকিস্তানকে সামরিকভাবে এমন শিক্ষা দেওয়ার, সে যেন ভবিষ্যতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু সে সুযোগ হারাতে হলো ভারত সরকারের নরম মনোভাবের জন্য।
তবে ১৪০ কোটি ভারতবাসী স্যালুট জানাবে ভারতের তিন বাহিনীর সেনাদের। তাদের দক্ষতা ও পরাক্রমের জন্য। তারা চেয়েছিল পাকিস্তানকে একটা চরম শিক্ষা দেওয়া হোক। সে সুযোগও এসেছিল, তবে তা হেলায় হারাতে হলো। আমরা যুদ্ধ চাই না— আমরা শান্তির পথের পথিক। কিন্তু পাকিস্তান যদি তাদের জঙ্গিদের দিয়ে ভারতের ভুখণ্ডে নাশকতামূলক কাজ করাতেই থাকে, তার প্রত্যাঘাত না করে পারা যায় না। পাকিস্তান ভবিষ্যতেও যেসব জঙ্গি এখনও প্রাণে বেঁচে আছে তাদের মদত দিয়ে ও অর্থ সাহায্যের মাধ্যমে সংগঠিত করে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে নাশকতামূলক কাজে বহাল করে তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী তার যোগ্য জবাব দেবে। ১৯৭১-এর যুদ্ধে যে অবস্থা হয়েছিল পাকিস্তানের, তার থেকে কোনও শিক্ষা যে তারা নেয়নি তা আবার বোঝা গেল। প্রমাণও মিলল।