এখনও জানা গেল না পাকিস্তানের সঙ্গে তিনদিনের সংঘর্ষে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। তবে ভারতের সামরিক বাহিনী যে প্রবল বিক্রমে পাকিস্তানকে আঘাত করেছে, তাতে পাকিস্তানের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে— তা স্বীকার করেছে পাক সেনা কর্তৃপক্ষ এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের সামরিক ছাউনি ধ্বংস হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে বহুলাংশে বায়ুসেনা বেস। চিনের কাছ থেকে অধিক শক্তিশালী পিএল-১৫ মিসাইলও কার্যকরী হয়নি। ভারতের যুদ্ধবিমান সেই ক্ষেপণাস্ত্র আকাশপথেই ধ্বংস করে দিয়েছে— যার ভগ্নাবশেষ পাকিস্তানের মাটিতেই পড়েছে। বিশ্ব দেখল ভারত সামরিক দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং শক্তিশালী। দীর্ঘ সময় এই সংঘর্ষ চললে বলা যায় না পাকিস্তান কীভাবে ভারতের সামরিক বাহিনীর মোকাবিলা করত। পহেলগামের পর্যটক হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারত যে প্রত্যাঘাত করেছে পাকিস্তানকে ‘সিঁদুর অপারেশন’ নামে, তা সফল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশও তা মেনে নিয়েছে।
তাই বলে ভারতের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তা বলা যায় না। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও শক্তিধর, তা অস্বীকার করা যায় না। ভারতের প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা একটি বেসরকারি টিভির আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে শক্তিশালী তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে কোনও কারণেই হোক এই তিনদিনের সংঘর্ষে ভারত যে প্রত্যাঘাত করেছে, পাকিস্তান সামরিক শক্তি তা সেভাবে সামাল দিতে পারেনি। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধানের মন্তব্য জেনে বলা যায় যখন যুদ্ধে দুই পক্ষই সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়— তখন উভয়পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়— তা হয়তো কমবেশি। তুলনায় এবং স্বল্পদিনের সংঘর্ষে পাকিস্থানের ক্ষতি বেশি হয়েছে। তা প্রাক্তন বায়ুসেনার মন্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়।
তাহলে কী ক্ষতি হল— ক’টা যুদ্ধবিমান ধ্বংস হল, বা আর আর ক্ষেত্রে সফলই বা কত, দেশবাসী তা এখনও জানে না। শুধু জানে ভারত পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দিয়েছে। সন্দেহ নেই, পহেলগাম কাণ্ডের পর বারতের প্রত্যাঘাত হানার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। প্রত্যাঘাত করতে যে দেরি হয়েছে, তা দেরি নয়— কারণ এই প্রত্যাঘাতের পিছনে ছিল নিখুঁত পরিকল্পনা এবং কৌশল। ভারতের সেনাবাহিনীর তিন শাখা স্থল, জল ও বায়ুসেনা শাখা নির্ভুল স্ট্রাটেজি নিয়েছিল পাকিস্তানকে আঘাত করার জন্য। যখন প্রত্যাঘাত শুরু হল, এবং ভারতের সফল হওয়ার খবর আসতে লাগল, তখন দেশবাসী আনন্দিত, পুলকিত। কারণ পাকিস্তান ভারতের একটি শত্রু দেশ এবং সেই শত্রুর ক্ষমতা খর্ব করার খবরে দেশের ১৪০ কোটি মানুষের কাছ তা আনন্দের তো হবেই। প্রত্যাঘাতের ওই সাড়ে তিনদিন দেশে রাজনৈতিক দলগুলিরও কোনও কর্মকাণ্ড ছিল না। তারাও সাগ্রহে শুনেছে ভারতের জয়ের কাহিনি। যে কথাটি বলা হচ্ছিল, ভারতের ক্ষয়ক্ষতি কী হল? ভারতের এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে সাফ জানালেন, সংঘর্ষ কিন্তু থামেনি, স্থগিত হয়েছে মাত্র। কারণ সংঘর্ষ বিরতির পরও কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গি হানা চলছে পাকিস্তানের মদতে। তাতে ছয়জন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে ভারতীয় সেনারা।পাইনঘেরা জঙ্গলে জঙ্গিদের সন্ধান পেতে এখনও তল্লাশি চলছে। এই মুহূর্তে তাই বলা যাবে না ভারতের ক্ষয়ক্ষতির কথা। তবে হিসেব-নিকেশ চলছে। সময়ে দেশবাসী তা জানতে পারবে। এয়ার মার্শাল ভারতী জানান, যুদ্ধ বিমানের পাইলটরা তাঁদের কর্তব্য সমাধান করে ফিরে এসেছেন। ভারতের দাবি, কমপক্ষে ১০০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে সিঁদুর অপারেশনে। অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা ঢুকে জঙ্গিদের আবাস বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানের ৩০ থেকে ৪০ জন সেনাও নিহত হয়েছেন।
তাহলে কি সংঘর্ষ কি সত্যিকারের থামল? এই প্রশ্নের উত্তরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানালেন, না থামেনি। কারণ সব জঙ্গিদের তো নিকেশ করা যায়নি। তারা আবার সংগঠিত হয়ে আগের মতো নাশকতামূলক কাজে অংশ নিতে পারে। তার জন্য ভারতের সেনাবাহিনীকে সর্বদাই প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে পহেলগামে যে জঙ্গিরা ২৫ জন পর্যটককে হত্যা করেছিল, তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানের সামনে, সেই জঙ্গিদের এখনও পর্যন্ত ধরা যায়নি। তাদের ধরার জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতীয় সেনাদের শৌর্য বীর্য্যের প্রশংসা করেন। তাঁরা দেশের মান উজ্জ্বল করেছে। তাঁরা দেশের গর্ব। তিনি নিজের হাতে একজন সেনার মুখে মিষ্টি তুলে দেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, পাকিস্তানের পরবর্তী পরিকল্পনা কী? ভারতের বিরুদ্ধে আবার লড়ার কথা ভাববে, নাকি দেশের উন্নয়নে মন দেবে। মনে হয় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আর সংঘর্ষ চায় না। কারণ তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আহ্বান জানাতেন না, ‘আসুন আমরা কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসি।’ এতে বোঝা যায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে পাকিস্তানের। এই হাস্যকর প্রস্তাব দিল্লির সাউথ ব্লক উড়িয়ে দিয়েছে। কারণ পাকিস্তান নামক দেশটিকে বিশ্বাস করা যায় না। কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গিদের নাশকতার কাজে মদত দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাউন্টার পার্টের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করতে ঘরে আলোচনা, বাইরে আগুন খেলে। এই হল পাকিস্তান।