আবার ব্যাঙ্ক ধর্মঘট

এটা খুবই স্পষ্ট যে প্রতিবাদের পরিকল্পনা এমনভাবে সাজানাে হয়েছে যাতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বানচাল হয়ে যায় এবং জনগণ ও শিল্পকে যতটা সম্ভব অসুবিধায় ফেলা যায়।

Written by SNS Kolkata | September 18, 2019 1:12 pm

প্রতীকী ছবি (Photo: IANS)

কাজের মধ্যে একটা সুদৃঢ় ভাব আমার দিক থেকে কিছু কিছু ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের বিষয়টি হয়ত যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু কাজ সম্পর্কে মৌলিক মনােভাবের একটা পরিবর্তনেরও প্রয়ােজন আছে। ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে মিলিয়ে ৪টি ব্যাঙ্কে পরিণত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ব্যাঙ্ক অফিসারদের ৪টি কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন ২৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ও ২৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দু’দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

এটা খুবই স্পষ্ট যে প্রতিবাদের পরিকল্পনা এমনভাবে সাজানাে হয়েছে যাতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বানচাল হয়ে যায় এবং জনগণ ও শিল্পকে যতটা সম্ভব অসুবিধায় ফেলা যায়। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ও রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ব্যাঙ্কের ছুটি। আর ধমর্ঘটে ডাক দেওয়া হয়েছে তার আগের দু’দিন ২৬শে ও ২৭শে সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ টানা চারদিন ব্যাঙ্কের কাজকর্ম শিকেয় উঠবে।

ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের বিষয় নির্ধারিত ব্যাপার হলেও পুজোর মুখে টানা চারদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার একটা জের ব্যবসাপওরের ওপর অবশ্যই পড়বে। কারণ পুজোর আগে শেষ সপ্তাহে কেনাবেচার ব্যাপারটা অনেকটাই ব্যাঙ্কিং লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে ছােট ছােট ব্যবসায়ীরা যে সমস্যায় পড়বেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পুজোর সময় আর্থিক কারবার তুঙ্গে ওঠে, যা উৎসবের মরশুমে একটা উল্লেখযােগ্য দিক।

টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর ব্যাঙ্কের দরজা খােলা থাকবে। সেই দু’দিন ব্যাঙ্কে যে কী ভয়ানক ভিড় হবে তা সহজেই অনুমেয়। সেই দু’দিন রেহাইয়ের পর ২ অক্টোবরের গান্ধি জয়ন্তীতে আবার ব্যাঙ্কের ছুটি। ৩ ও ৪ অক্টোবর ফের ব্যাঙ্কের দরজা খুললেও পুজো ঘিরে উন্মাদনার আবহে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারপর ৮ অক্টোর পর্যন্ত পুজোর ছুটির জন্য ব্যাঙ্ক বন্ধ।

প্রকৃত বিচারে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর— এই ১৩ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক কর্মীদের মাত্র ৪ দিন কাজ করতে হবে। সত্যি ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের প্রতি তারা কত সদাশয়! এটা পুজোর ছুটিকে টেনে লম্বা করে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা ছাড়া কিছু নয়। এই মনােভাব ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের তত্ত্বকে প্রহসনে পরিণত করবে। সংযুক্তিকরণের ভালাের দিকটা উপেক্ষিতই থাকছে।

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ‘কাজ না করার’ ঔদ্ধত্যপূর্ণ অধিকার ব্যাঙ্কের কাজকর্মের ওপরে প্রাধান্য পাচ্ছে। ব্যাঙ্কের সঠিক কাজকর্মই একমাত্র ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি সেদিকে যাচ্ছে না। প্রায় এক পক্ষকাল ধরে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম বিপর্যস্ত হতে চলেছে।

সত্যি কলতে কী, সংগঠিত ক্ষেত্রের একাংশ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এবারেও নিশ্চয় এটিএমের টাকা ফুরিয়ে যাবে, যা ধর্মঘট বা ব্যাঙ্ক বন্ধের সময় প্রায়শই ঘটে থাকে। এই সময়টায় এটিএমে নিয়মিত টাকা ভরা হবে এমন আশ্বাস কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। এটিএমের সামনে লম্বা লাইনের জন্য গ্রাহক তাে বটেই, ব্যাঙ্ক কর্মীদের পর্যন্ত ভুগতে হবে। ধর্মঘটের আগে ও পরে সাধারণ ছুটি নেওয়া কঠোরভাবে বন্ধ করা উচিত। গােটা প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্ক গ্রাহকরাই যে মূলত দুর্ভোগের শিকার হবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।