গণতান্ত্রিক উৎসব

পরিষদীয় গণতন্ত্রে এই ভােট উৎসব না থাকলে গণতন্ত্র প্রাণ পেত না।

Written by SNS Kolkata | April 30, 2019 8:14 am

প্রতীকী ছবি (Getty Images)

পরিষদীয় গণতন্ত্রে এই ভােট উৎসব না থাকলে গণতন্ত্র প্রাণ পেত না।আজ পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী সব দেশ তাকিয়ে আছে ভারতের দিকে যেখানে ৯০ কোটি ভােটার ৫৪৩ জন লােকসভার সদস্য।গােপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন।এদের মধ্যে দেড় কোটি নতুন ভােটার,তারা এই প্রথম ভােটাধিকার পেয়ে তার প্রয়ােগ করবেন।এদের বয়স ১৮ উত্তীর্ণ।মনে তীব্র আকাঙক্ষা ভােট দেওয়ার।এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা পুলকিত।সম্প্রতি শেষ হওয়া বাংলার পাঁচটি আসনের ভােটে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রতীকে এই প্রথম আঙুল ছোঁয়ালেন।দারুণ অনুভূতি।

এক মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দফায় এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলবে।শেষ হবে ২৩ মে ভােটের ফল প্রকাশ দিয়ে।যাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন তাঁরা।জয়ের হাসি হাসবেন,বাকি যাঁরা তাঁরা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ফিরবেন।খেলায় যেমন জয়পরাজয় আছে,ভােটেও তেমনি হারজিত আছে।সুতরাং এই রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে যারা প্রবেশ করেছেন,তাদের জীবনে জয়পরাজয় দুইই আসবে।তা মেনে নিয়েই চলতে হবে।

সারা দেশে এখন ভােটের প্রচার তুঙ্গে।প্রার্থীরা ভােটারদের দ্বারে দ্বারে এসে ভােট চাইছেন,রােড শােতে অংশ নিচ্ছেন,সংশ্লিষ্ট দলের নেতারা তাঁদের জয়ের জন্য খাটাখাটনি করছে।নাওয়াখাওয়া প্রায় ভুলে প্রচার চালাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি,কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি,বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সহ আরও ছােটবড় মাঝারি নেতা।প্রচারে আছেন সােনিয়া তনয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও।

এখন যেমন দৈনিকগুলিতে ভােটের খবর ছাড়া আর কোনও খবর প্রাধান্য তেমন নেই,তেমনি রাস্তাঘাটে পথচলতি মানুষের মুখে মুখে।ভােটের কথাই বেশি।ট্রামে বাসে ট্রেনে যাত্রীদের মধ্যেও ভােটে কেন্দ্রের।শাসক দল বিজেপি না কংগ্রেস জিতবে তা নিয়ে জোর আলােচনা,এমনকী তর্কাতর্কিও।আলােচনায় আছে আঞ্চলিক দলগুলির কথাও।কে প্রধানমন্ত্রী হবেন বিজেপি হারলে,তা নিয়েও বিস্তর কথা,বিস্তর গবেষণা।সম্ভাব্যদের মধ্যে ঢুকে আছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও।আজকাল ভােটের ফলাফল নিয়ে কেউ ভবিষৎবাণী করতে চান না।কয়েক হাজার প্রার্থী দেশের ২৯ রাজ্যে বিভিন্ন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসরে তারা সবাই জয়ের আশা নিয়েই লড়ছেন।নানা অঙ্ক কষছেন—নানাভাবে মিলিয়ে দেখছেন কী হলে কী হতে পারে।কেউ হারতে চান না—আশা ভােট ভাগাভাগির ফলে জিতে যাবেন।কিন্তু জেতার সংখ্যা সেই ৫৪৩।

২০১৯ নির্বাচন অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে ধরেছে।গত পাঁচ বছরের শাসনে বিজেপি দেশকে কী দিল?২০১৪ সালে বিজেপির চমকপ্রদ জয়ের পর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে আসীন হয়েছিল,সেই প্রতিশ্রুতির রক্ষা তাে হয়ইনি,বরং সরকারের কিছু কিছু কাজ মানুষের দুঃখদুর্দশা বাড়িয়েছে।সেই ব্যর্থতা নিয়ে বিরােধীরা সােচ্চার।তার মনে করেন,বিজেপি আবার জিতে সরকার গড়লে নরেন্দ্র মােদিই প্রধানমন্ত্রী হবেন,কিন্তু তিনি সমস্যাদীর্ণ এই ভারতের হালটা তেমন শক্ত করে ধরতে পারবেন না।তাই তারা ভােটে এই দলকে দরজা দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছে।কিন্তু অ বিজেপি দলগুলি সারা বছর জোটগড়া নিয়ে যে লাফালাফি,নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছিল,তা কিন্তু তেমন ফল দেয়নি।সে অর্থে একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গঠিত হয়নি।এখন আবার তারা আশা করছেন,ভােটের ফল বিজেপির বিরুদ্ধে গেলে তারা আবার জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়বেন।বিরােধীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে আগ্রাসী মনােভাব নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন,তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁর দল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস আশা করছে এ রাজ্যের ৪২টি আসনই তারা পাবে।যদি তা হয় তাহলে বিরােধীদের সরকার গঠনে একটি বড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এই দল।আঞ্চলিক দলগুলির প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার পর আসন সংখ্যা যদি সরকার গঠন করার মতাে হন,সে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে একটি প্রশ্ন তখন থেকেই যাবে।

আবার বিজেপি যে ভােটে পর্যুদস্ত হয়ে বিদায় নেবে,তাও বড় বাড়িয়ে বলা।ভারতে এখন একটি স্থায়ী সরকার হওয়া দরকার।যে সরকার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব সমস্যার মােকাবিলা করবে।তাই সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে ভােটের ফলাফলের দিকে।গণতন্ত্রকামী মানুষ চান ভারতে নির্বাচন পর্ব শান্তিতে মিটে গিয়ে একটি শক্তিশালী সরকার গঠিত হােক।