বেআইনিভাবে পাথর, বালি, কয়লা থেকে শুরু করে গোরুপাচারের অন্যতম চোরাপথ বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি থানা এলাকার নাম উঁচুর দিকে রয়েছে। নলহাটি থানার পুলিশের একাংশের সহযোগিতায় এইসব পাচার কারবার রমরম করে চলে বলে অভিযোগ করা হয়। সেইসঙ্গে যাঁরা বৈধভাবে সড়কপথে পরিবহনের ব্যবসা করছেন, তাঁদেরও নানাভাবে হয়রানি করে নলহাটি থানার পুলিশ টাকা আদায় করছে বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এনিয়ে নলহাটি থানার ওসি সুমিত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসার সাথে যুক্তরা।
বলা হয় যে, নলহাটি থানার পুলিশের একাংশের মদতে মূল রাস্তার বদলে বসন্তপুর–সন্তোষপুরের রাস্তা ধরে এইসব পাচার কারবার চলছে। অথচ যাঁরা বৈধভাবে পরিবহন ব্যবসা করছেন, তাঁদের পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। নলাহাটি থানার পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এলাকার মহিলারা ওই ব্যক্তিকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। পরিবহন ব্যবসায়ী এবং এলাকার মানুষদের একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে ‘জুলুমবাজি’র অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশের বিরুদ্ধে জনরোষ আছড়ে পড়ে।
আবার একটা শ্রেণি বলতে শুরু করেন যে, নলহাটি থানার ওসি সুমিত মণ্ডল বেআইনি পাচার বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়ায়, তাঁকে সরাতেই একটা শ্রেণি এসব কাণ্ড করছেন। আর এরই মাঝে নলহাটির তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ নলহাটি থানার বিরুদ্ধে দলীয় নেতৃত্বের কাছে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা দিয়ে, তদন্ত করে দলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান। সেইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পদক্ষেপ নিচ্ছেন তখন, নলহাটি থানার একাংশের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ আর জনরোষ কেন?
আর রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ শিকদার এই পরিস্থিতির মধ্যেই নলহাটি থানার দুই এএসআইকে সরিয়ে দিয়ে থানার ভিতরেই ফ্লেক্স টাঙিয়ে তাতে জানান যে, প্রতি ইংরেজি মাসের তৃতীয় শনিবার তিনি নলহাটি থানায় বিকাল ৫ টা থেকে ৭টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে এলাকার মানুষের কথা শুনবেন। তারপরই দেখা গেল, বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর রাতে একটি নির্দেশিকা জারি করে নলহাটি থানার ওসি সুমিত মণ্ডলকে সরিয়ে দিয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ইন্সপেক্টর মহম্মদ আলিকে নলহাটি থানার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। পুলিশ একে রুটিন বিষয় বলেই জানাচ্ছে।
আর মহম্মদ আলিকে নলহাটি থানার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসতেই বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ‘টাইগার ইস কামব্যাক’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। মহম্মদ আলি ইতিপূর্বে দু’বার নলহাটি থানার ওসির দায়িত্ব সামলেছেন। নলহাটিতে পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে জনমানসে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতেই মহম্মদ আলিকে নলহাটি থানার অতিরিক্ত দায়িত্বে আনা হলো বলেই মনে করা হচ্ছে।