চিকিৎসকদের দক্ষতায় ইতিহাস গড়ল আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতাল। সাধারণত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া এ ধরনের অস্ত্রোপচার অসম্ভব বলে ধরা হয়। অথচ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই পেলভিস বোন ভাঙা ১৮ বছরের কিশোরীর জটিল অপারেশন সফল করলেন জেলার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আর দশ দিনের মাথায় মেয়েটি নিজের পায়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ারের নাংডালা চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা এরিনা বাগোয়ার বাড়িতে অসাবধানতাবশত চেয়ার থেকে পড়ে যায়। সেই দুর্ঘটনায় তাঁর দুই হিপ জয়েন্টে গুরুতর চোট লাগে। যন্ত্রণায় কাতর কিশোরীকে কোনওরকমে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, হাঁটার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়েছে সে। একমাত্র জটিল অস্ত্রোপচারই তাঁকে সুস্থ করতে পারে।
Advertisement
কিন্তু জেলা সদর হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যায় পড়েন চিকিৎসকরা। সাধারণত রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজেই এই ধরনের সার্জারি হয়। তবু হার মানেননি হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক শুভেন্দু সিকদার। বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালেই ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা হয়। সব রকম সাবধানতা নিয়েই অপারেশন হয়।
Advertisement
ফল মেলে হাতেনাতে। মাত্র দশ দিনের মধ্যে এরিনা ফের হাঁটতে শুরু করে। চতুর্থীর দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় সে। হাসপাতাল সুপার ডা. পরিতোষ মণ্ডল গর্বের সঙ্গে জানান, ‘সাধারণত এই অপারেশনের পর রোগীকে স্বাভাবিক হাঁটাচলায় ফিরতে অন্তত এক মাস সময় লাগে। কিন্তু এরিনা মাত্র সাত থেকে দশ দিনের মধ্যেই দিব্বি হাঁটতে শুরু করেছে। আমরা অত্যন্ত খুশি।’
এদিকে নিজের সুস্থতায় আনন্দিত এরিনা জানায়, ‘ভেবেছিলাম এ বছর আর দুর্গাপুজো দেখতে পারব না। কিন্তু ডাক্তাররা অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছেন। আমি এবার পায়ে হেঁটেই ঠাকুর দেখতে যাব।’
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক ও রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘এই অপারেশন জেলা সদর হাসপাতালে প্রথমবারের জন্য সফল হয়েছে। হাসপাতাল সুপার ও চিকিৎসকদের তৎপরতায় জেলা হাসপাতালের সক্ষমতার নতুন নজির তৈরি হল।’
Advertisement



