পায়ে লিখে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, এ যেন এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার ঐকান্তিক প্রয়াস। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার অন্তর্গত করকাই বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক সেন্টারের এক ছাত্রের। মনের জোর ও অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে, স্থির লক্ষ্যে এগিয়ে চলা বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং হবে। তবে এর মধ্যেই বাদ সেধেছে শারীরিক বিশেষ সক্ষমতা। শরীর এবং মনের সঙ্গে দিনের পর দিন চলে লড়াই, তবু জীবন যুদ্ধে হার মানেনি সে। নিজের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে চলেছে নিরন্তর। দুটো হাতে কর্মক্ষমতা না থাকলেও, পায়ে লিখে দিচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তার স্বপ্ন বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং হওয়ার। সেইমতো প্রতিদিন প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। জেঠুর বাইকে চেপে বাবাকে পেছনে বসিয়ে পরীক্ষা দ্বিবাদ আসা তার। তারপরেই আবার বাড়িতে গিয়ে পড়তে বসা। অন্যান্য স্বাভাবিক ছেলে মেয়েদের মতো চলাফেরার ক্ষমতা থাকলেও হাতে তার কোনো জোর নেই। স্বাভাবিক হাতের থেকে অনেকটাই ছোট তার হাত। হাতে রয়েছে চারটে করে আঙুল। সে একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্র। তার রয়েছে অন্ধ, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা জীববিদ্যার মতো বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের বেরুয়া গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কল্যাণ বেরা। পিওর সংয়োদের ছাত্র সে। মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছে করকাই বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে। শারীরিক অসুস্থতার কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে তার বাবা-মায়ের। সারাদিনের পরিশ্রম এবং পড়ার জন্য নিরন্তর মনের সঙ্গে যুদ্ধ ভাবলেই বেদনা বোধ করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কল্যাণ। প্রতিদিন আর পাঁচজন ছেলে মেয়েদের দেখে সে, দু’হাত দু’পা আছে তাদের। দু’হাত দিয়ে সবাই যা করে, সেটা করতে পারে না সে। তবে মনের জোর ছাড়েনি। প্রত্যন্ত গ্রামের সামান্য মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সে। বাবা চাষাবাদ করে সংসার চালায়। সামানা ছিটেবেড়া বাড়ি থেকেই বড় হয়ে ওঠা। একদিকে সাংসারিক অর্থাভাব অন্যদিকে মনের সঙ্গে লড়াই, এভাবে প্রায় ১৮টা বছর নিচের জীবন অতিবাহিত করেছে সে।
বরাবরই মেধাবী ছাত্র কল্যাণ। জন্মের পর থেকেই দু’হাত অকেজো। বিশেষ এক শারীরিক। অসুস্থতার কারণে। দু’হাত স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই ছোট। ফলত, সেই দুই হাতের কোনও কার্যক্ষমতা নেই। স্বাভাবিকভাবে ছোট থেকেই পা দিয়ে লেখা অভ্যাস করেছে সে। যে পা দিয়ে চলাফেরা করে, সেই পা ভরসা উচ্চমাধ্যমিকে লেখার জন্য। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমন এক কৃতী ছাত্রকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে। তার এই কঠোর অধ্যাবসায়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলে। তার লক্ষ্য বি-টেক করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। পছন্দের বিষয় রসায়ন। সময়ের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিদিন মনের জোরে এগিয়ে চলেছে সে।