কয়েক বছর আগেও দিনহাটার আদালত চত্বরে ঢোকার মুখে রাস্তার দুই ধারে টাইপরাইটার মেশিনের আওয়াজ শোনা যেত। আজ কান পাতলেও সেই আওয়াজ সেভাবে শোনা যায় না। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাতে এসেছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ইত্যাদি। আধুনিক এই যন্ত্র মানুষের কাছে বর্তমানে এক অপরিহার্য বস্তু। কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ইতিমধ্যেই অনেকটা দখল করে নিয়েছে আমাদের সাবেক ব্যবস্থাকে। ক্রমশ কমে আসছে টাইপিংয়ের কদরও। ফলে টাইপিংয়ের কাজকে আয়ের অন্যতম উৎস হিসাবে বেছে নিতে এগিয়ে আসছে না বর্তমান প্রজন্ম।
দিনহাটার কাছারি চত্বরে বেশ কয়েক বছর আগেও ৮/১০ টাইপিস্টকে দেখা যেত টাইপিংয়ের কাজ করতে। সারাদিন টাইপ মেশিন চালিয়ে উপার্জিত অর্থেই অনেকটা নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরা। আজ এখানে সেই টাইপিস্টের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩/৪ জন। সাম্প্রতিক অতীতে প্রয়াত হন বিপুল চাকী, মুকুল রায়, অরুণ চক্রবর্তী, হেমন্ত প্রামাণিক। এঁদের উত্তরসূরী যাঁরা এখনো টাইপিংয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তাঁরা হলেন ষাটোর্ধ্ব লক্ষ্মণ চন্দ্র সাহা, সুব্রত মোদক, বিমল মিত্র প্রমূখ। প্রবীণ টাইপিস্ট লক্ষ্মণবাবু জানালেন, ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি দিনহাটার কাছারি চত্বরে বসেন। সেই সময় থেকে টাইপের কাজ করেই তিনি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সংসার চালাচ্ছেন।
Advertisement
পূর্ব পাকিস্তান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে তিনি দিনহাটায় আসেন এবং হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর টাইপকে সঙ্গী করে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এরপর টাইপ মেশিন হয়তো স্থান পাবে মিউজিয়ামে। লক্ষণবাবুর পাশে বসা টাইপিস্ট সুব্রত মোদক হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে ২০০৫ সাল থেকে এই কাজে যুক্ত হন। এই কাজ করে তিনি চারজনের সংসার প্রতিপালন করেন। আরেক সহকর্মী বিমল মিত্র ১৯৯১ সালে দিনহাটা কলেজ থেকে বি.কম পাস করার পর টাইপিংয়ের কাজকেই আয়ের পথ হিসাবে বেছে নেন। পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে তিনিও তাঁর সংসার চালাচ্ছেন কোনোরকমে। টাইপিং ব্যবস্থাই যেখানে প্রায় উঠেই গেছে, সেখানে নতুন প্রজন্ম টাইপিংয়ের কাজে সেভাবে যুক্ত হচ্ছে না বলে তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন।
Advertisement
Advertisement



