বীরভূমের ইলামবাজারের জয়দেব-কেন্দুলির প্রান্তসীমা দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতের ক্ষীণতোয়া অজয় নদের জলে পা তুলে আর পা ফেলে উজানে মাড়ানো যায় অনেকটা জলপথ। এই জলপথে যেমন একদিন ভেসেছে নৌকা তেমনি, প্রতিদিন কাটোয়ার গঙ্গায় ভক্ত জয়দেবের অবগাহন করতে যাওয়ার কষ্ট লাঘব করতে স্বয়ং দেবী গঙ্গা উজানে এসেছেন জয়দেব-কেন্দুলিতে। শেষ পৌষের অজয়ে মকরস্নানে তাই জয়দেব-কেন্দুলিতে গঙ্গাস্নানের পুণ্য।
এখন সরকারিভাবে পরিচালিত জয়দেব-কেন্দুলির মেলার জন্য প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত রকমের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগে ‘গীতগোবিন্দম’-এর রচয়িতা কবি জয়দেবের জন্মভূমি জয়দেব-কেন্দুলির এবারের মেলাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনিকভাবে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আঁটোসাঁটো করতে ৯০০ জন পুরুষ ও ২৩০ জন মহিলা পুলিশ কর্মী ছাড়াও ১ হাজার ৬০০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। মহিলা রাফ রয়েছেন ২০ জন। ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার ছাড়াও নজরদারির জন্য বসানো হয়েছে ১৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। রয়েছে ড্রোনের ব্যবস্থাও। জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ৫টি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে মজুত থাকছে ৫টি মেডিক্যাল টিম। যে ৬টি ঘাটে মহিলারা স্নান করবেন সেখানে মহিলাদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য ৩০টি অস্থায়ী ঘর তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। স্নানের ঘাটে ২টি বোট নিয়ে মজুত থাকছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। এখানে যে ১০০টি স্থায়ী শৌচাগার রয়েছে, তারসঙ্গে আরও ২০০টি অস্থায়ী শৌচাগার করা হয়েছে মেলার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।
সরকারিভাবে সোমবার ১৩ জানুয়ারি পাঁচদিনের ঐতিহ্যবাহী জয়দেব-কেন্দুলির বাউল মেলার উদ্বোধন করা হলো জয়দেব- বাউল মঞ্চে। এদিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। শান্তিকুমার রজকের জলদকণ্ঠে গীতগোবিন্দের পদ উচ্চারণ আর লক্ষ্মদাস বাউল ও বাঁকাশ্যাম দাস বাউলের সঙ্গীত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটা ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলাশাসক বিধান রায়, বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ন নাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক, বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ হালদার প্রমুখ। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলাশাসক তথা মেলা কমিটির সভাপতি বিধান রায় বলেন, জয়দেবের পদ ‘দেহি পদ বল্লভ মুদারম’ পদের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চপীঠের এ জেলা বহু মনীষীর পদধূলিতে রঞ্জিত হয়েছে। এদিন তিনি সকলকে চমকিত করে দিয়ে উদাত্তকণ্ঠে সঙ্গীতও পরিবেশন করেন। এদিন অনুব্রত মণ্ডল তাঁর বক্তৃতায় এই মেলার সাফল্য কামনা করেন। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এদিন সকলের কাছে আবেদন রেখে বলেন, এই মেলার সঙ্গে যে পরম্পরা রয়েছে তাকে রক্ষা করে মেলার আনন্দ উপভোগ করার কথা বলেন। এদিন প্রকাশ করা হয় ‘বাউল তীর্থ’ পুস্তিকা।



