• facebook
  • twitter
Tuesday, 19 August, 2025

দলের সুসময়, তা সত্ত্বেও ছন্নছাড়া অবস্থা খড়গপুর তৃণমূলে

খড়গপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক ছন্নছাড়া অবস্থা দেখলে কারো মনে হয় না এই দল গত ১৪ বছর ধরে রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে।

খড়গপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক ছন্নছাড়া অবস্থা দেখলে কারো মনে হয় না এই দল গত ১৪ বছর ধরে রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় খড়গপুর শহর কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলেন সূর্য প্রকাশ রাও। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পরেই সূর্য প্রকাশ বিদেশে মেয়ের কাছে চলে যান। ভোট গণনার দিনেও তিনি খড়্গপুরের গণনাকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় ৬ মাস সূর্য প্রকাশের কোন খবর না পাওয়ায় জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুজয় হাজরা পুর প্রধান কল্যাণী ঘোষকে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব দেন।। পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলে শহর জুড়ে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব খুব স্বাভাবিকভাবেই পালন করতে ব্যর্থ হন কল্যাণী।

প্রদীপ সরকারকে পুরপ্রধান পদ থেকে সরিয়ে সেই পদে বসেন কল্যাণী ঘোষ। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর সেই সময় প্রদীপকে পথ থেকে সরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু কল্যাণী ঘোষকে পুর প্রধান হিসেবে মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকেই। ফলে খড়্গপুরে শহর তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক উপদলে ভাগ হয়ে যায়। এরকমই একটি উপদলের নেতৃত্ব আছে পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের উপর। এই উপদলে রয়েছেন উপপূরপ্রধান তৈমুর আলী খান , সিআইসি রিতা পান্ডে, কবিতা দেবনাথরা। এই উপদলের মূল চাবিকাঠি, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবি শংকর পান্ডের হাতে। এই উপদলটির সঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরার সম্পর্ক ভালো। অন্য একটি উপদলের নেতৃত্বে স্বাভাবিকভাবেই প্রদীপ সরকার। প্রাক্তন বিধায়ক এবং পুরপ্রধান হওয়ায় সারা শহর জুড়ে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এই উপদলে রয়েছেন রাজেন্দ্র প্রসাদগুপ্তা, তপন প্রধান, এ পূজা, জয়শ্রী পালের মত কাউন্সিলররা। আরেকটি উপদলের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশীষ চৌধুরী। এই উপদলে রয়েছেন অপূর্ব ঘোষ, বি হরিশ কুমার, নমিতা চৌধুরীর মত কাউন্সিলররা। প্রদীপ সরকারকে পুরপ্রধান পদ থেকে সরাবার মূল কান্ডারী ছিলেন ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ। তিনি একটি উপদলকে নেতৃত্ব দেন। প্রবীর ছাড়াও এই উপদলে রয়েছেন চন্দন সিং, বি মুরলিধর রাও, দেবাশীষ সেনগুপ্ত, আশা দলুই ,জয়ন্তী সিং এর মত কাউন্সিলররা। কোন উপদলের মধ্যেই নেই এইরকম কাউন্সিলর ডি বাসন্তী, ফিদা হোসেন, বিষ্ণু প্রসাদ। এইরকম ছোট ছোট উপদলে ভাগ হওয়ায় খড়গপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক অবস্থা ছন্নছাড়ার মত।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপি একুশ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছে। বিজেপির সাংগঠনিক কোন অস্তিত্ব শহরে নেই। তা সত্ত্বেও এই জয় আসলে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নিজেদের মধ্যে কোন্দলে বিরক্ত সাধারণ মানুষের। এই কোন্দল থামানোর জন্য একজন শক্তিশালী শহর-সভাপতি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সভাপতি পদটারই কার্যত অস্তিত্ব নেই। সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা কবে দলীয় নেতৃত্ব শহর সভাপতির নাম ঘোষণা করেন সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু অপেক্ষাই সার। শহর সভাপতি পদে গত ১০ মাসে কারো নাম ঘোষিত হয়নি। যতদিন যাচ্ছে তত উপদলে বিভক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কোন্দলও চরমে উঠছে। সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা এই ছন্নছাড়া সংগঠনিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছেন।