বাঁকুড়ার চৈত্র সংক্রান্তির কিছু শিবগাজন

Written by SNS April 8, 2024 1:35 pm

বড্ডি গ্রামটি এখন আর নেই৷ গ্রামটি মুকুটমণিপুর ড্যামের জলে ডুবে গেছে৷ শিব মন্দিরটির চূড়া এখনও দেখা যায়৷ চৈত্র সংক্রান্তির প্রাক্কালে এরকম কয়েকটি শিব মন্দিরের গাজনের উল্লেখ করেছেন সুখেন্দু হীরা৷

‘পশ্চিমবঙ্গ আদম সুমারি দফতর’ পাঁচটি খণ্ডে “পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা” নামে সুবৃহৎ গ্রন্থাবলী প্রকাশ করেছিল৷ এখন অবশ্য আর ‘আদম সুমারি’ শব্দটি ব্যবহূত হয় না৷ কারণ ‘আদম’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘পুরুষ’ শব্দকে বোঝায়৷ লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়ার স্বার্থে এখন ‘জনগণনা’ শব্দটি সরকারিভাবে ব্যবহার করা হয়৷

এই গ্রন্থাবলীর প্রথম খণ্ড বেরিয়েছিল ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে৷ চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে৷ চতুর্থ খণ্ডে ছিল বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার উৎসব ও মেলার বিশাল খতিয়ান৷ আজও এই গ্রন্থাবলীর তথ্যগুলোকে প্রামাণ্য ধরা হয়৷ তাই বাঁকুড়া জেলার শিব গাজনের হদিস করার সময় পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলার চতুর্থ খণ্ড খুলে বসতেই হল৷

গ্রন্থে যতগুলি শিব গাজনের উল্লেখ আছে, বাস্তবে তার থেকে বেশি সংখ্যায় গাজনের খোঁজ পাওয়া গেল৷ আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই৷ কারণ এই গ্রন্থের পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত গ্রামের তথ্য সংকলিত হয়নি৷ প্রাথমিকভাবে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা বোর্ডের কর্তৃপক্ষের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল৷ তারপর জনগণনা দপ্তর থেকে সমস্ত গ্রামে চিঠি পাঠিয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ সব গ্রাম থেকে উত্তর আসেনি৷ এই জন্য উক্ত বইয়ের ভূমিকাতে বলা হয়েছে যদি সব গ্রামের তথ্য সংগ্রহীত হ’ত তাহলে এই দুই জেলার বিবরণ আরো কয়েক খণ্ডে প্রকাশ করার প্রয়োজন দেখা দিত৷

আমরা উক্ত বইয়ের তালিকা থেকে বেশি সংখ্যায় গাজন যেমন পেয়েছি, এমনি বইয়ের উল্লেখিত অনেক গাজনের হদিস পাচ্ছিনা৷ খাতরা মহকুমার ক্ষেত্রে অনেক গাজন বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে শুধু আজ জল ঢালা বা বার্ষিক পূজা হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী গ্রামে গাজন হয়, কিন্ত্ত উল্লেখিত গ্রামটি বেশি পরিচিত বলে সেই গ্রামে নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ থানা ভাগ হয়ে দুটি থানা হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে আদি থানার শিব গাজনের তালিকার সঙ্গে মেলাতে গিয়ে সেই গ্রামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ কয়েকটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে৷

খাতড়া থানা ভেঙ্গে হীরবাঁধ থানা হয়েছে৷ তাই পাখুরিয়া, ঝাপানডিহি, কেন্দুয়া গ্রামগুলো আর খাতড়াতে নেই৷ পাখুরিয়া এখন হীরবাঁধ থানার মলিয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন৷ সেখানে অবশ্য এখন গাজন হয় না৷ আগে ভক্ত উঠতো কিনা কেউ বলতে পারছেন না৷ এখন ১১ বৈশাখ পূজা হয়৷ শিবের মাথায় জল ঢালা হয়৷ রাতে ছৌ নাচ হয়৷ খুব ছোটো একটা মেলা বসে, খেলনাপাতি খাবারের দোকান নিয়ে৷

ঝাপানডিহি ও কেন্দুয়া গ্রাম দুটো পডে় হীরবাঁধ থানার মশিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে৷ ঝাঁপানডিহি গ্রামে বার্ষিক শিব পূজা বৈশাখের ৭ তারিখ৷ এখন কোনও ভক্ত ওঠে না৷ আদিবাসী অধু্যসিত এলাকা বলে আদিবাসী যাত্রা হয়৷ ছোটো করে মেলা বসে৷ করোনার সময় থেকে তাও বন্ধ৷ কেন্দুয়াতে খুব বড় করে চড়ক মেলা হ’ত৷ কিন্ত্ত প্রতি বছর কোনও না কোনও অঘটন ঘটে যাওয়ার দরুন দশ বছর হল গাজন বন্ধ হয়ে গেছে৷

ইন্দপুর থানার হাটগ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন হাটগ্রাম ও সাতানীতে এখন শুধু পূজা হয়৷ বামুনডিহা অর্থাৎ ব্রাহ্মণডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন খট্ গ্রামেও শুধু পূজা হয়; শিবরাত্রির দিন মেয়েরা জল ঢালে৷ গাজন অনেকদিন বন্ধ৷

রানিবাঁধ থানার নারকোলি গ্রামে বাইশে বৈশাখ এক দিনের মেলা বসে৷ শিবের মাথায় জল ঢালা হয়৷ যারা মানত করেন তাঁরা পুকুর থেকে মন্দির পর্যন্ত দণ্ডী কেটে আসেন৷ ঘোলকুঁডি় গ্রামে কোনও শিবগাজন হয় না; গাজন হ’ত ঘোলকুঁডি়র পাশে দেউলভিড়া গ্রামে৷ এখন চৌঠা বৈশাখ শিবের মাথায় জল ঢালা হয়৷
সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হয়েছে বড্ডি গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তির গাজন খোঁজ করতে গিয়ে৷ বড্ডি গ্রামটি এখন আর নেই৷ গ্রামটি মুকুটমণিপুর ড্যামের জলে ডুবে গেছে৷ শিব মন্দিরটির চূড়া এখনও দেখা যায়৷ শীতকালে জল কমে গেলে মন্দিরটিও জেগে ওঠে৷ রানিবাঁধ থানার এই তিনটি গ্রাম রুদ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতে অধীন৷ সিমলাপাল থানার পার্শ্বলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন কুকড়াকোঁদর গ্রামে শুধু জল ঢালা হয়৷
যাইহোক চৈত্র সংক্রান্তির প্রাক্কালে কয়েকটি শিব গাজনের উল্লেখ এখানে করা হ’ল৷
লাপুর গ্রামে বাবা রামেশ্বরের গাজন রামসাগর গ্রাম পঞ্চায়েত, ওন্দা থানা

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মল্লরাজারা ৩৫০ বছর আগে লাপুর গ্রামবাসীদের বাবা রামেশ্বরের মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন৷ গাজনও সেই সময় থেকে৷ বর্তমান মন্দিরটি লাপুর দুর্গা মন্দিরের পিছনে, পুরনো পাথরের মন্দির সংস্কার করা হয়েছে৷

গাজনে ভক্তা হয় ৫০০ থেকে ৬০০ জন৷ দুই ধরনের ভক্তা হয়, পাট ভক্তা ও সাধারণ ভক্তা৷ সাধারণ ভক্তাদের মধ্যে মহিলারাও থাকেন৷ পাট ভক্তার নাম লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল৷ গাজনের পর্বগুলো হ’ল বার কামান, কামলা তোলা, গামীর কাটা, রাজাভাটা, রাত গাজন, দিন গাজন৷

বার কামান হয় ২০ চৈত্র থেকে ২৬ চৈত্র পর্যন্ত৷ কামলা তোলা হয় ২৬ শে চৈত্র দেশবাঁধ পুকুর থেকে৷ দেশবাঁধের দূরত্ব মন্দির থেকে প্রায় এক কিমি৷ ২৭ চৈত্র গামীরকাটা, যদু বলদার পুকুর পাড় থেকে গামার গাছের ডাল কাটা হয়৷ ২৮ চৈত্র রাজাভাটা৷ সব ভক্তারা মালপুর রায়পুর পরিবার, লাপুর ভট্টাচার্য পরিবার, মণ্ডল পরিবারে রাজাভাটা করতে যায়৷

২৯ শে চৈত্র রাত গাজন৷ সকালে ‘মেলের ঘরে’ পূজা অর্থাৎ সকলে মিলে পূজা দেয়৷ যা সব জায়গায় নীল পূজা বলে খ্যাত৷ দুপুরে ভট্টাচার্য বাডি় থেকে ভৈরব আনা হয় এবং ভক্তারা প্রণাম সেবা খাটে৷ বিকেলে সকল ভক্তা দেশবাঁধ পুকুর পাডে় যায়৷ সঙ্গে নিয়ে যায় মন্দিরের পাট৷ সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়৷ অর্ঘ্য দেওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া হয়৷ খাওয়া হয় ফল৷ পাট স্নান করিয়ে ভক্তারা মন্দিরে ফিরে আসে৷ ফিরে আসার সময় কিছু মানুষ, যাদের মানসিক থাকে, তারা ভক্তাদের পা ধোয়ায়৷ রাত্রে বাণ ফোঁড়া হয়৷ বাণ ফোঁডে় কুডি় জন মতো৷ বাণ থাকে তিন রকম, পঞ্চবাণ, লুরকাবাণ, জিহ্বাবাণ৷

দিন গাজন চৈত্র সংক্রান্তির দিন৷ এ দিন সকালে চড়ক (শালকাঠ) পুকুর থেকে তোলা হয়৷ চড়ক ডোবানো থাকে রক্ষিত পুকুরে৷ তারপর হয় আগুন সন্ন্যাস৷ সব ভক্তারা আগুনের উপর দিয়ে হাঁটে৷ তারপর হয় হিন্দোল সেবা, দশজন মতো ভক্তা আগুনের উপর দোলে৷ দুপুরে মন্দিরে এসে ফল খায়৷ ফলের সঙ্গে থাকে বুটের ছাতু৷ বিকালে চড়ক ঘোরে৷ ৩০ জন মতো পিঠে বড়শি ফুঁডে় ঘোরে৷ চড়ক ঘোরার পর রাতে পাট স্নান করতে নিয়ে যাওয়া হয় আগড়া পুকুরে৷
এদিন বিকালে বসে ‘মিনাবাজার’ মেলা; খেলনা, খাবার, পাঁপড় ইত্যাদি৷ ছোটখাটো মেলা বলে ‘মিনাবাজার’ মেলা বলে৷ এক বিকালের মেলা৷

পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ আঁশপান্না, ভক্তাদের জন্য৷ গ্রামের কিছু মানুষ নিমন্ত্রিত থাকেন৷ রাত গাজনের দিন, রাত্রি জাগরণের জন্য বাউল, কীর্তন ইতাদী হয়৷ গাজন আয়োজন করে লাপুড় দ্বাদশ তিলি ষোলআনা সমিতি৷ বাবার নামে কিছু পুকুর ও জমি আছে৷ লাপুড় সব্জি বাজারটা দ্বাদশ তিলি ষোলআনা সমিতির৷ বর্তমান পুরোহিতের নাম সত্যরঞ্জন মুখার্জি ও দিলীপ ভট্টাচার্য৷ পুরোহিতদ্বয় বংশ পরম্পরা সূত্রে পূজার অধিকার পেয়েছেন৷
নূতন গ্রামের শিবগাজন: লছমনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গাজল ঘাঁটি থানা
নূতন গ্রামের শিব মন্দিরের নাম রত্নেশ্বরী শিব মন্দির! ঠিক শুনলাম? রত্নেশ্বর হওয়া উচিত? না ঠিকই শুনেছি! আসলে এর পিছনে একটি ইতিহাস বা গল্প আছে৷ এখানে মা রত্নেশ্বরী সতী হয়েছিলেন৷ তিনি এই শিব ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ এই জন্য নাম রত্নেশ্বরী শিব মন্দির৷ মা রত্নেশ্বরী ছিলেন গোস্বামী পরিবারের গৃহবধূ৷

এই গোস্বামী পরিবার আসলে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী নয়৷ এনারা আসলে ব্রাহ্মণ৷ শোনা যায় কাশীপুর রাজার কাছ থেকে এই অঞ্চলের তাঁরা জমিদারি পায়৷ তারও আগে তাঁরা নাকি বাংলার বাইরের কোনও পশ্চিম দিকের দেশ থেকে এসেছিলেন৷
স্থানীয় লোকের দাবি ঠাকুর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আনুমানিক ৪৩০ বছর আগে৷ গাজন ৪০০ বছরের পূরাতন৷ গাজনটি এখনও গোস্বামী পারিবার নিয়ন্ত্রিত৷
মাত্র দু’জন ভক্তা হয়৷ একজন মাকুরা ভক্তা এবং পাট ভক্তা৷ মাকুরা ভক্তার কাজ গ্রামের ঘরে ঘরে পাট নিয়ে পরিক্রমা করা৷ পাট ভক্তার নাম জীতেন সূত্রধর, তিনি অবশ্য বংশপরম্পরায় পাটভক্তা নন৷
গাজনের ৪ রকম পর্ব হয়৷ (১) বারের দিন বুট কলাই বিতরণ (২) ঘরে ঘরে পাট ঘোরানো (৩) হোম পর্ব (৪) নিয়ম কলসি পর্ব
বার কামান হয় ২৪ চৈত্র৷ ২৯ চৈত্র কামলা তোলা হয় গ্রামের তালপুকুর থেকে৷ তালপুকুর মন্দির থেকে ১০০ গজ দূরে অবস্থিত৷ গামীরকাটা হয় না৷ রাজাভাটা হয় না৷

২৯ চৈত্র রাতগাজন৷ এদিন শিবের উপাস অর্থাৎ সবাই শিবের নামে উপবাস করে৷ এদিন বিকেলে পাট স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তম পুকুরে৷ মন্দির থেকে উত্তম পুকুর ১০০ মিটার দূর৷ এ দিন বাডি় বাডি় পাট ঘোরানো হয়৷ এ দিন রাত্রি ১২ টার পর হয় নিয়ম কলসি পর্ব৷ তালপুকুর থেকে কলসি করে পাট ভক্তা মাথায় করে জল মন্দিরে নিয়ে আসা হয়৷ ঐ জলেই পরের দিন ঠাকুরের নিমিত্তে পানা দেওয়া হয়৷
চৈত্র সংক্রান্তির দিন দিনগাজন৷ আগে আগুন খেলা হ’ত৷ বানফোঁড়া হয় না৷ চড়ক ঘোরে না৷ মেলাও বসে না৷ এখন শুধু কাল ভৈরবের সামনে ছাগ বলি হয় এবং পানা (গুড় জল) বিলি করা হয়৷
ভক্তাদের জন্য লক্ষণভোজনের ব্যবস্থা থাকে৷ গাজনের খরচ ওঠে তালপুকুরের মাছ বিক্রির টাকা থেকে৷ গাজনের আয়োজন করেন গোস্বামী পরিবার৷ বর্তমান পুরোহিতের নাম দয়াময় মিশ্র৷ বর্তমান পুরোহিত অবশ্য বংশপরম্পরায় নন৷

পাটপুর গ্রামে বুড়োশিব গাজন: রামসাগর গ্রাম পঞ্চায়েত, ওন্দা থানা:
পাটপুর গ্রামে যে বুড়োশিব আছে, তাঁকে অনেকে উমা মহেশ্বর বলেন৷ উমা-মহেশ্বর মন্দিরের বয়স প্রায় ১৫০ থেকে ১৭৫ বছর৷ বুড়োশিব আবির্ভাব হওয়ার একটি জনশ্রুতি আছে৷ বাসুলি পদবীর এক চাষি জমিতে লাঙ্গল দিয়েছিলেন৷ তখন লাঙ্গলের ফলায় একটা পাথর লাগে৷ সেটিকে তিনি তুলে পাশে সরিয়ে রাখেন তারপর সেই জায়গা থেকে আর নড়ানো যায় না৷ তারপর সেখানে বুড়োশিবকে প্রতিষ্ঠা করে মন্দির নির্মিত হয়৷ বর্তমানে পুরনো মন্দির নতুন করে সারাই করা হয়েছে৷
উমা-মহেশ্বর মন্দিরে গাজন হয়৷ এই গাজনের বয়স বুড়োশিবের আবির্ভাবের সমসাময়িক৷ গাজনে ভক্তা হয় ৬০ থেকে ৭০ জন৷ পাটভক্তার নাম শম্ভুনাথ মণ্ডল৷ গাজনের পর্ব – বার কামান, গামীর কাটা, রাজাভাটা, কামলা তোলা, রাত্র গাজন, দিন গাজন, চড়ক৷

বার কামান হয় ২৭ চৈত্র৷ মন্দির থেকে এই পুকুরে দূরত্ব অর্ধ কিমি৷ ২৮ চৈত্র রাজাভাটা হয়৷ এই দিন প্রথমে মুখার্জি বাডি়তে যায় ভক্তারা, তারপর অন্যান্য বাডি়তে৷ এদিন কামলা তোলা হয নিশি ভোর রাত্রে৷ কামলা তোলা হয় গ্রামের ছিরমা পুকুর থেকে৷

২৯ চৈত্র রাত গাজন৷ পাটপুর সায়েরে পাট স্নানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সন্ধ্যায়৷ পাটপুর সায়ের মন্দির থেকে এক কিমি দূর৷ পাটপুর সায়ের থেকে ভক্তরা পূজা করে গরান সেবা করে আসে শিব মন্দির৷ রাতে বাণফোঁড়া হয়৷ বাণফোঁডে় ২৫-৩০ জন৷ তিন রকম বাণ ফোঁড়া হয় – লুড়কা বাণ, জিহ্বা বাণ, পঞ্চবাণ৷ ভক্তারা বাণফোঁড়া অবস্থায় শিব মন্দিরে আসে৷ ফিরতে ফিরতে পরদিন ভোর হয়ে যায়৷
চৈত্র সংক্রান্তিতে দিন গাজন৷ সকালে সব ভক্তারা আগুন সন্ন্যাসী হয়৷ অর্থাৎ সকলে আগুনের উপর দিয়ে হাঁটে৷ বিকালে হয় চড়ক ফোঁড়৷ চড়কে ঘোরে ২৫-৩০ জন৷

পয়লা বৈশাখ আঁশ পান্না৷ শুধু ভক্তাদের জন্য৷ গাজনে যাত্রা হয় একদিন৷ আরেক দিন ছোটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, বাউল, লোকসংগীত ইত্যাদি৷ কোনও মেলা বসে না৷ তবে কয়েকটি খাবারের দোকান আসে৷
গাজনের আয়োজন করে গ্রামের মানুষেরা একত্রভাবে৷ গাজনের খরচ আসে গ্রামের লোকের চাঁদায় এবং কিছু মানুষের সাহায্য৷ পুরোহিতের নাম মহাদেব রায়৷ তিনি বংশপরম্পরায় সূত্রে আছেন৷