পম্পেইয়ে অপূর্ব ছবি, ছাই-লাভা সরাতেই অন্যবদ্য ইতিহাস

Written by SNS April 13, 2024 1:47 pm

পম্পেই, ইটালি— ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্নু্যৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ সেই শহর ও পার্শ্ববর্তী হারকিউলেনিয়াম-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা৷ ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে এখানে দফায় দফায় খননকার্য চলেছে৷ ছাই ও জমে যাওয়া লাভা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে গোটা একটা শহর৷ সেখানেই উদ্ধার এক ঘরের দেওয়াল অবাক করে দিয়েছে সবাইকে৷ ১৯৪৫ বছর ধরে জমাটবদ্ধ লাভা ও পুরু ছাইয়ের তলায় চাপা পডে়ছিল উঁচু দেওয়ালের ঘরটি৷ সেই আস্তরণ সরাতেই বেরিয়ে এল ঝলমলে ফ্রেস্কো, দু’হাজার বছর আগের কোনও নাম না জানা শিল্পীদের অপূর্ব কীর্তি৷

দক্ষিণ-পশ্চিম ইটালির বন্দর নগরী পম্পেই৷ বর্তমানে বছরে ২৫ লক্ষ পর্যটক পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসেন৷ দু’শো বছরের বেশি সময় ধরে পম্পেই ও তার আশপাশের এলাকায় খনন চললেও এখনও পর্যন্ত এখানকার এক তৃতীয়াংশ এলাকা ছাই ও লাভার তলায় চাপা পডে় রয়েছে৷ সে রকমই একটি এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে বেরিয়ে এসেছে একটি বিশাল ঘর৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এটি একটি ব্যাঙ্কোয়েট রুম বা পালা-পার্বণে ব্যবহূত ভোজ-কামরা৷ বিশাল এই ঘরটির মেঝে ১০ লক্ষেরও বেশি ছোট ছোট সাদা টাইলসের টুকরো দিয়ে মোজাইক করা৷ দেওয়ালগুলির রং কালো৷ আর সেই কালো রংয়ের উপরে কমলা, সবুজ, নীল ও হলুদের মতো উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে গ্রিক প্রত্ন কথার নানা দৃশ্য৷

ছাই-লাভার পলেস্তারা সরিয়ে এখনও পর্যন্ত দু’টি ফ্রেস্কো বার করেছেন প্রত্নবিদেরা৷ একটি ছবিতে সূর্য ও সঙ্গীতের গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো রাজকুমারী কাসান্দ্রাকে প্রেম নিবেদন করছেন৷ অ্যাপোলোর হাতে বীণা৷ আর একটি ছবিতে রয়েছেন ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস ও স্পার্টার রানি হেলেন৷ হেলেনের পাশে সম্ভবত তাঁর পরিচারিকা৷ প্যারিসের পায়ের কাছে একটি বাঘ বসে রয়েছে৷ কথিত, প্যারিসের প্রেমে পডে় স্বামী-সংসার ত্যাগ করে ট্রয় পাডি় দিয়েছিলেন হেলেন৷ হেলেন-প্যারিসের এই কীর্তির পরেই ট্রয় আক্রমণ করেন গ্রিক রাজারা, দশ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পরে ট্রয়ের পতন হয়৷ গ্রিক কবি হোমার তাঁর দু’টি মহাকাব্যে সেই যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনাক্রমকে অমর করে গিয়েছেন৷

হোমারের প্রায় ন’শো বছর পরে একটি রোমান নগরীর দেওয়ালে গ্রিক প্রত্নকথা-সম্পর্কিত এই ছবি ইতিহাসবিদদের পম্পেই সম্পর্কে নতুন করে ভাবাচ্ছে৷ পম্পেই পুরাতাত্ত্বিক এলাকার দায়িত্বে থাকা গবেষক গাব্রিয়েল জ়ুকট্রিগেলের কথায়, ‘‘পম্পেইকে এত দিন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ভেবে এসেছি৷ কিন্ত্ত সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আমাদের এই প্রাচীন নগরীর অন্য একটি সত্তা তুলে ধরল৷ পম্পেই যে রোমান সাম্রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থানও ছিল, সে বিষয়ে আমাদের আর সন্দেহ নেই৷’’