সম্প্রতি লেক টাউন মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাবের মিলন উৎসব ২০২৫। বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাবের কেন্দ্রীয় সম্পাদক কাওসার আলীর পরিচালনায় আনুষ্ঠানিক দীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড: তানিয়া দাস ও ড: গৌরীশঙ্কর সা। অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে সক্ষম একঝাঁক শিশুর উপস্থাপনা খুব প্রশংসা পায়। সম্বলহীন অনাথ শিশুদের জন্য কেক কেটে উৎসব পালন উপস্থিত সকলের উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন লাভ করে। অনুষ্ঠানে পিয়ালী বসু রায়ের পরিচালনায় সুন্দর সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরধ্বনি সংস্থা, বাগুইআটি নৃত্যাঙ্গনের সঙ্গীত বিভাগের গান সুর-তাল-লয়ের মেলবন্ধনে অসাধারণ। রিঙ্কু শীলের পরিচালনায় কোমল গান্ধারের গান ও কবিতার কোলাজ ছিল মনে রাখার মতো।
নন্দিনী মন্ডলের গাওয়া দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। একক নৃত্যে বাগুইআটি নৃত্যাঙ্গনের নৃত্যশিক্ষিকা জয়িতা বিশ্বাসের রবীন্দ্রনৃত্য, জয়িতার বিশ্বাসের ছাত্রী দেবাঙ্গী সরকারের আধুনিক নৃত্য এবং অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে ছোট্ট যন্ত্রশিল্পী প্রজিৎ বসুর গিটারের মূর্ছনা উপস্থিত দর্শকদের মোহিত করে রাখে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী স্বরলিপি, রিদম ডান্স অ্যাকাডেমি প্রভৃতি সংস্থার দলগত পরিবেশন প্রশংসিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষজন।
Advertisement
বাঙালিবাদীর আত্মকথা
মধ্যবিত্ত সমাজকালের মধ্যে বাঙালির নবজাগরণের বীজ খুঁজেছিলেন তিনি। মানুষকে বলেছিলেন, ‘ভালো থাকুন, বাঙালি থাকুন’। সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে ছাপা, বিলেতফেরত চিকিৎসক ও নেফ্রোলজিস্ট ডা. পার্থসারথী মুখোপাধ্যায়ের লেখা সেই বই, মানুষের পছন্দের বই ‘বাঙালিবাদীর আত্মকথা’র নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হলো, দক্ষিণ কলকাতার ‘রিড বেঙ্গলি বুকস্টোর’-এ। সঙ্গে বইমেলায় প্রকাশিতব্য তাঁর পরের বই ‘মধ্যবিত্তের পাঁচালী’র প্রচ্ছদ উন্মোচন। ছিলেন শংকরলাল ভট্টাচার্য ও ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, সৈয়দ হাসমত জালাল, ইমানুল হক প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা। এ যেন বাঙালির চাঁদের হাট। ছিল ‘বাংলা, বাঙালি, বাঙালিয়ানা— অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ’ বিষয়ক আলোচনাসভা।
Advertisement
‘যুগাগ্নি’র নাট্যোৎসব ‘রঙ্গবঙ্গ মিলনমেলা’
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘যুগাগ্নি’র নাট্যোৎসব ‘বঙ্গরঙ্গ মিলনমেলা’। বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে ২৫ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলেছে নাটকের আসর। নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হয় সমকালীন সংস্কৃতির নাটক ‘বিষবৃক্ক’, নেতাজীনগর সরস্বতী নাট্যশালার ‘নষ্ট তারার গল্প’, অসমের নাটক ‘কাঠফুলা’, আকাশগঙ্গা বিহার-এর নাটক ‘আজ কা যথার্থ্’, শূদ্রক হায়দ্রাবাদের নাটক ‘এবার ধর্মরাজ্য’। ২৭ নভেম্বর মঞ্চস্থ হয় ‘যুগাগ্নি’র নিজস্ব প্রযোজনা ‘হিমযুগ’। কৌশিক রায়চৌধুরীর লেখা এবং জেলার বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক দেবাশিস সান্যাল পরিচালিত এই নাটকটি ‘যুগাগ্নি’ যথেষ্ট মুন্সীয়ানার সাথেই উপস্থিত করেছিল প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ দর্শকদের সামনে। নাটকের বিষয়বস্তুকে যথাযথ রূপদান করায় আয়োজক সংস্থা পূর্ণমাত্রায় সফল। এমনটাই মনে করছেন নাটক দেখতে আসা শহরের বিশিষ্টজনেরা। তারা জানান, দুর্দান্ত অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চ, আলো, আবহ, পোশাক, রূপসজ্জার যোগ্য সঙ্গতই এ নাটকটিকে পৌঁছে দিয়েছে এক অন্য মাত্রায়। শিপ্রা সেন, শ্যামল দাস, প্রিয়তোষ ঘোষ, বৃষ্টি চক্রবর্তী, মৃন্ময় হালদার, প্রশান্ত অধিকারী প্রমুখ তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয় ছিল দেখার মতো। অন্যান্যরাও যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখেন। এই নাটকে শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলো, শান্তনু মজুমদারের আবহ, রাহুল চক্রবর্তীর মঞ্চ এবং সুগত সেনের পোষাক নাটকটির উল্লেখযোগ্য সম্পদ। নাটক দেখতে আসা নাট্যপ্রেমী দর্শকরা জানান, ‘বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে, বাংলা নাটককে কেবলমাত্র উপস্থাপনার গুণে এরকম উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া যায়— ‘যুগাগ্নি’ তা আরও একবার প্রমাণ করল। এ বিষয়ে পরিচালক দেবাশিস সান্যাল এর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এমন একটি নাটকের সাক্ষী থাকলাম আমরা, যা আমাদের স্মৃতিতে থাকবে অমলিন।’
বহরমপুরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাসভা
‘সৃজা ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে গত ২৮ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের বহরমপুর স্টুডেন্টস হেলথ হোমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একটি সেমিনার। ‘যুব সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং তার নিরসনে মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এই সেমিনারের প্রধান বক্তা ছিলেন বিশেষজ্ঞ মনস্তাত্ত্বিক মোহিত রণদীপ। আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন বহরমপুরের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং শহরের গুণীজন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিল বহরমপুর স্টুডেন্টস হেলথ হোম, ‘কোরাস— এ ড্রিম ফ্যামিলি’ এবং ‘একাত্মা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনুষ্ঠানে বহরমপুরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক এবং শহরের বিশিষ্ট মানুষ ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের আগে শহরের দুঃস্থ শিশুদের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। সংগীত পরিবেশন করেন ‘কোরাস: এ ড্রিম ফ্যামিলি’র সদস্য শিল্পীরা।
প্রসঙ্গত, একবছর আগে মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন সৃজা দাশগুপ্ত। খাগড়া জিটিআই উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ড. সন্দীপ দাশগুপ্তের কন্যা ছিলেন সৃজা। মেয়ের অকালপ্রয়াণ মেনে নিতে পারেননি সন্দীপবাবু ও তাঁর পরিবার। মেধাবী সৃজার মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে তাঁরা গড়ে তোলেন ‘সৃজা ফাউন্ডেশন’। সন্দীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘সৃজার কিছু মানসিক সমস্যা ছিল। আমরা মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলরদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলাম। কিন্তু ও চলে যাওয়ার পরে আমরা উপলব্ধি করেছি, এই সমস্যাটা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। এর সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হবে। শারীরিক রোগের মতো মানসিক এই রোগ যদি আমরা নিরাময় করতে না পারি, তাহলে কখনো সমাজে পরিবর্তন আসবে না। সমাজের মধ্যে যে অন্যায়-অবিচার রয়েছে, মানুষের মধ্যে যে দ্বিচারিতা ও বিভিন্ন রকমের লোভ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে না পারলে আজকের যুব সমাজ হারিয়ে যাবে। সুন্দর সমাজ গড়তে গেলে, যুব সমাজকে তৈরি করতে হবে আগে। সেই লড়াইটা আমি লড়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি। সেজন্যই ‘সৃজা ফাউন্ডেশন’ তৈরি করা হয়েছে।’
Advertisement



