পার্থ প্রতীম চট্টোপাধ্যায়
আলোর উৎসবের ছোঁয়া ভারতের শেয়ার বাজারেও। গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক বন্ধের ভিত্তিতে Nifty দাঁড়িয়ে আছে অত্যন্ত ভালো জায়গায়। আশার কথা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বেশ কিছুদিন তারা ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ। দাপিয়ে শেয়ার কিনছেন আমাদের দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারীরাও। মিউচুয়াল ফান্ডের সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এর তথ্য অনুযায়ী পিছিয়ে নেই ছোট বিনিয়োগকারীরাও। তারা সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগ না করে SIP এর মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বাজারে। আসার কথা এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে আছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। কর্মজীবনের শুরুতে তারা বেছে নিয়েছেন এসআইপি-কে তাদের বর্তমানের আস্থা এবং ভবিষ্যতের অবলম্বন হিসেবে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এইভাবে বিনিয়োগ করতে যাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও দিন দিন বাড়ছে।
Advertisement
সাপ্তাহিক বন্ধের ভিত্তিতে অবস্থানগতভাবে NIFTY সূচক বন্ধ হয়েছে ২৫৭০৯ এর ঘরে। NIFTY-র পরবর্তী লক্ষ্য ২৬০০০। অনেক বিশেষজ্ঞের মতামত আগের উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যেতে NIFTY, অপেক্ষা কেবল সময়ের। ২৫৫০০ বাজারের টেকনিক্যাল আনালাইসিস এর ভিত্তিতে দুর্দান্ত সাপোর্ট। বাজার ওঠার মুখে ধাক্কা খেতে পারে ২৫৮০০ এবং ২৬০০০ এর ঘরে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি নজর কেড়েছে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর। এর প্রধান কারণ হলো ভালো অর্থনৈতিক ফলাফলের প্রত্যাশা ব্যাঙ্ক গুলির থেকে। এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু বড় বড় ব্যাঙ্ক বিনিয়োগকারীর এই প্রত্যাশা পূরণে যথেষ্ট সফল হয়েছে। ফলে অশ্বমেধের ঘোড়ার মত চলেছে ব্যাঙ্কের সূচকও। বিভিন্ন বিদেশি ব্রোকারেজ সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিদেশি ব্যাঙ্ক ও এই ব্যাপারে একমত যে আগামী দিনে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সুদিন আসতে চলেছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে এসেছে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সংখ্যা , ১.৫% যা কিনা ৯৯ মাসের সর্বনিম্ন। এর ফলে রেট কাট এর আশায় নড়েচড়ে বসেছে বিনিয়োগকারীরা। আবার IMF (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এই সংস্থার মতে FY26 এ ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে 6.6% , যা আগের অনুমানের তুলনায় কিছুটা বেশী। আমেরিকার বাণিজ্য শুল্ক চাপানোর পরেও দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার সম্পর্কে IMF এর এই আশার বাণী অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট ভালো।
সম্প্রতি দেশের অর্থনৈতিক অভ্যন্তরীণ শক্তির আভাস মেলে অটো কোম্পানিগুলির বিক্রির সংখ্যা তেও।
Advertisement
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় GST (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) কম হওয়ার পর থেকে মারুতি কোম্পানি প্রায় 4 লক্ষ নতুন অর্ডার পেয়েছে। সেই হিসাবে দেখতে গেলে কোম্পানিটির সাপ্তাহিক গাড়ি বুকিং এর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এই তথ্য আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক শক্তিকে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। সাপ্তাহিক পারফরম্যান্সের কথা বলতে গেলে বলা যায় মিডক্যাপের পারফরমেন্স ততটা ভালো হয়নি, স্মল ক্যাপের সূচক সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বন্ধ হয়েছে কিছুটা নীচে। অন্যান্য সেক্টরের পারফরম্যান্সের বিচারে নজর কেড়েছে FMCG, consumption, ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, এবং অটো সেক্টর। সাপ্তাহিক বন্ধের বিচারে আইটি সেক্টর এবং মেটাল সেক্টরের সূচক বন্ধ হয়েছে কিছুটা নীচে। খুব স্বল্পকালের মধ্যেই সোনা এবং রুপোর দাম চলে গেছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। যদিও সপ্তাহের শেষে সোনা এবং রুপোর দামের কিছুটা পতন হয়েছে। অনেকের মতে অত্যাধিক দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মুনাফা ঘরে তোলার জন্য এই দুই মূল্যবান ধাতুর দামের পতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আগামী দিনে এই দুই মূল্যবান ধাতুর দামের পতনের সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে টাকার দামেও। টাকার দামের ক্রমাগত পতন বন্ধ হয়ে ডলারের সাপেক্ষে টাকা দাম বাড়তেও শুরু করেছে। গত সপ্তাহের শেষে USDINR এর দাম বন্ধ হয়েছে ৮৭.৯৭ তে।
বিনিয়োগের ব্যাপারে বলা যায় বাজার ওপরে চলছে বলেই এখনই কোন হোমওয়ার্ক না করে পরিকল্পনা ছাড়া বিনিয়োগ করাটা একদম ভাববেন না। মনে রাখবেন বাজারে সুযোগ বাজারে বার বার আসবে, দরকার আপনার ধৈর্যের। বাজারে একটি প্রচলিত বিশ্বাস যে, আপনি যদি ভয় বা লোভের বসবর্তী না হয়ে ধীরে ধীরে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বানাতে চান তাহলে আপনার ১৫ বছর সময় লাগবে। কিন্তু তাড়াতাড়ি যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বানাতে চাইলে আপনার সময় লেগে যাবে ২৫ বছর। সুতরাং বাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে ‘তাড়াতাড়ি ঘটবে’ ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। সমস্ত ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ রাখবেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিনিয়োগ পরামর্শদাতার পরামর্শ মত ফাইন টিউন করে নেবেন। ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ আপনার সম্পদ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট কার্যকরী। অনেক সময় বিনিয়োগকারীর ধারণা থাকে তিনি নিজেই সমস্ত ব্যাপারে বিশেষত বিনিয়োগের ব্যাপারে পারদর্শী। কিন্তু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এই ধারণা সবসময় ঠিক না। সঠিক পরামর্শদাতার আর্থিক পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। অধিকাংশ সফল বিনিয়োগকারী কিন্তু স্বীকার করেন তারা আর্থিক পরামর্শদাতার মূল্যবান পরামর্শে উপকৃত। সুতরাং তাদের গুরুত্বকে কখনোই অস্বীকার করবেন না। বরং চোখ,কান খোলা রেখে চিনে নেবেন আপনার অর্থ যজ্ঞের ‘ধৌম্য পুরোহিত ‘কে, তাহলেই বিনিয়োগের ব্যাপারে আপনি অনেকটাই সফল হয়ে যাবেন। আপনার বিনিয়োগের জীবন হয়ে উঠবে অনেক সহজ এবং আনন্দদায়ক ও।
Advertisement



