মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের এখনই স্বস্তি পাওয়া মুশকিল

Written by SNS March 22, 2024 3:50 pm

দিল্লি, ২১ মার্চ– শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলছে দেশের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশ৷ সংখ্যার নিরিখে মূল্যবৃদ্ধিকে যেমনই দেখাক না কেন, সাধারণ মানুষের এখনই স্বস্তি পাওয়া মুশকিল৷ আবার পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কার্যত তলানিতে থাকলেও সেখানেও খাবারদাবারের দাম বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের উপরে৷ এই বাজারের দামের প্রভাব খুচরো বাজারে পড়তে কিছুটা সময় লাগে৷ তবে মূল্যবৃদ্ধির উপরে তার বিরূপ প্রভাব যে কার্যত অনিবার্য, তা স্পষ্ট৷ একমাত্র রান্নার গ্যাসের দাম কমা আংশিক স্বস্তি দেবে গৃহস্থকে৷

দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে এনেই আত্মতুষ্টির শিকার হতে চান না তাঁরা৷ তাঁদের লক্ষ্য, এই হারকে ৪ শতাংশের নীচে নিয়ে আসা৷ গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই দেখা গিয়েছে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা করে নামছে৷ ফেব্রুয়ারিতে তা হয়েছে ৫.০৯%৷

এই কিন্ত্ত বৃহস্পতিবার শীর্ষ ব্যাঙ্ক থেকে মুদ্রিত মার্চের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দামের চাপই সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হারকে দ্রুত নামতে দিচ্ছে না৷ শীর্ষ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্রের নেতৃত্বাধীন একটি দল এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে৷ প্রতিবেদনের মত লেখকদের নিজস্ব বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ গত বার অনিয়মিত বর্ষা এবং বিরূপ আবহাওয়ার জেরে পেঁয়াজ, টোম্যাটো-সহ বিভিন্ন আনাজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে৷ চাল-ডালের দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷ খাদ্যপণ্যের এহেন সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণের প্রার ওষ্ঠাগত৷ এরই মধ্যে গত অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ৪.৮৭ শতাংশে নেমে আসে৷ পরের চার মাসে তা ছিল যথাক্রমে ৫.৫৫%, ৫.৬৯%, ৫.১% এবং ৫.০৯%৷ পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্যে সেই সময় থেকেই বার্তা স্পষ্ট ছিল যে, তেল ও খাদ্যপণ্যের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাদে অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হার (কোর ইনফ্লেশন) ৩ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে৷ কিন্ত্ত খাদ্যপণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই চডে়৷

ওয়াকিবমহলের বক্তব্য, গত কয়েক মাসের মূল্যবৃদ্ধির হারের প্রবণতা দেখলে বোঝা যাবে, চাল, ডাল, আনাজ, মশলা, ফল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত খাদ্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী৷ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি উত্তাপ হারাচ্ছে৷ বেশ কয়েকটি এগিয়ে থাকা অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমছে৷

আগামীদিনে তা আরও কিছুটা স্তিমিত হতে পারে৷ উল্টোদিকে, কর্পোরেট ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শক্তিশালী হিসাবের খাতা, দেশের বাজারে চাহিদা, পরোক্ষ কর সংগ্রহ এবং ভর্তুকি কমার হাত ধরে ভারতে বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী৷ ২০২১-১৪ সালের মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির গড় ৮ শতাংশের উপরে৷ এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে আগামীদিনেও তাকে ৮ শতাংশের উপরে ধরে রাখা অসম্ভব নয়৷ উল্লেখ্য, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৪%৷ তার আগের দুই ত্রৈমাসিকেও সংশোধিত হার ৮ শতাংশের বেশি৷ যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের উদ্বেগ, বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হলে ভারতে রফতানির বাজার ফের ধাক্কা খেতে পারে৷ তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে জাতীয় অর্থনীতির উপরে৷ সে ক্ষেত্রে শুধু দেশের বাজারের চাহিদার উপরে নির্ভর করে বৃদ্ধির উঁচু হার ধরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে৷