রাজ্য সরকারগুলির বিলম্বের পরে ইএল নিলামের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নিয়ম সংশোধন করার পাঁচ মাস পর অবশেষে, খনি মন্ত্রক এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্স (ইএল) ব্যবস্থার অধীনে নিলামের প্রথম কিস্তি চালু করেছে।
এই কিস্তিতে ১০টি রাজ্যের ১৩টি ব্লক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা সোনা, তামা, হিরে, দস্তা, বিরল মৃত্তিকা উপাদান (রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস) ভ্যানেডিয়াম এবং জিরকোনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির আমানতকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইলেকট্রনিক্স এবং রিনিউএবল এনার্জি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ সংক্রান্ত শিল্পের জন্য যেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোয়ায় এই নিলামের সূচনা অনুষ্ঠানে, খনি সচিব ভি এল কান্তা রাও বলেন, ‘বিদেশে বেসরকারি সংস্থাগুলি যেভাবে নিজেরাই অনুসন্ধান করে এবং তারপরে সেই অনুসন্ধান থেকে উপকৃত হয়, আমরা এখানে সেই ধারণাটি প্রবর্তন করছি। আমরা বেসরকারি কোনও সংস্থাকে কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার দেব এবং তারা, একটি বেসরকারি সংস্থা হিসাবেই অনুসন্ধান করবে। যদি সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পাওয়া যায়, তাহলে সেই আবিষ্কারের ভিত্তিতে সংস্থাটি আগামী ৫০ বছরের জন্য আয় করতে পারবে।’
নিলামের জন্য নির্ধারিত ১৩টি ব্লকের মধ্যে ছত্তিশগড় (হিরে), ঝাড়খণ্ড (সোনা ও তামা) এবং মহারাষ্ট্র (ট্যানটালাম ও দস্তা), অন্ধ্রপ্রদেশ (রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট), অরুণাচল প্রদেশ (দস্তা), গুজরাট (ভ্যানেডিয়াম), কর্ণাটক (সোনা ও তামা), মধ্যপ্রদেশ (প্ল্যাটিনাম-গ্রুপ উপাদান), রাজস্থান (রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট) এবং উত্তরপ্রদেশে (জিরকোনিয়াম) একটি করে ব্লক রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির অনুসন্ধান বিনিয়োগকারীদের মজুতের মূল তথ্য সরবরাহ করবে, যার ফলে নিলামে আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ব্লক নিলামে তোলা হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের অপর্যাপ্ত আগ্রহের কারণে অনেক নিলাম বাতিল করা হয়েছে।
এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্স নিলামের সূচনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি বলেন, ‘প্রথমবার ভারত একটি কাঠামোগত ও স্বচ্ছ নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদ্ধতিগত প্রাথমিক পর্যায়ের অনুসন্ধান শুরু করছে। এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা খনিজগুলির আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়ে তুলবে এবং ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি ও শিল্প উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বনির্ভর, ভবিষ্যতের জন্য পথ সুগম করবে।‘
বেসরকারি অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার জন্য, ক্ষুদ্র খনির সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের আগস্টে খনি ও খনিজ (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করা হয়।ইএল ব্যবস্থার অধীনে, লাইসেন্সধারীরা এই ব্লকগুলি অন্বেষণ করবেন এবং যদি কার্যকর খনিজ মজুদ পাওয়া যায়, তবে ব্লকগুলি একটি খনির লাইসেন্সের (এমএল) জন্য নিলাম করা হবে। ইএল নিলাম প্রক্রিয়াটি একটি বিপরীত দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, যেখানে চূড়ান্ত এমএল ধারক কর্তৃক, প্রদেয় নিলামের প্রিমিয়ামের সর্বনিম্ন শতাংশ ভাগ উদ্ধৃত করে দরদাতাকে ব্লক প্রদান করা হয়।
বেসরকারি এক্সপ্লোরারদের জন্য ঝুঁকি আংশিকভাবে এড়াতে, ন্যাশনাল মিনারেল এক্সপ্লোরেশন ট্রাস্ট (এনএমইটি) জুন ২০২৪ সালে একটি প্রতিদান প্রকল্প চালু করেছিল, যা জিওফিজিক্যাল তদন্ত, এক্সপ্লোরেটরি ড্রিলিংয়ের মতো ক্রিয়াকলাপের জন্য যোগ্য ব্যয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত-২০ কোটি টাকা কভার করে।
ইএল-এর জন্য ব্লক হস্তান্তর করার এই পর্যায়ে, ১৪টি রাজ্য সরকারের মধ্যে মাত্র ছয়টি রাজ্য সরকার নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করার পর, গত বছরের অক্টোবরে খনি মন্ত্রক ইএল নিলামের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত খনিজ সম্বলিত এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্স ব্লকের নিলামে, যে-কোনও বিলম্ব এই খনিজগুলির অনুসন্ধান ও উৎপাদন শুরু করার উপর প্রভাব ফেলে। গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত খনিজগুলিতে আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য, সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, এমনটাই একটি আদেশে উল্লেখ করেছে মন্ত্রক।
বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সমন্বয়হীনতা, এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্স অকশনে, সাড়া না পাওয়ার কারণ হতে পারে। খনি মন্ত্রক সরকারি সংস্থাগুলির অধীনে অনুসন্ধান কার্যক্রমও জোরদার করছে। ন্যাশনাল মিনারেল এক্সপ্লোরেশন ট্রাস্ট (এনএমইটি) এর জন্য ৩,০০০ কোটি টাকা এবং জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) এর জন্য ৪,০০০ কোটি টাকা বাজেটের সঙ্গে, জাতীয় খনিজ মিশন ২০৩০-২০৩১ সাল পর্যন্ত, ১,২০০টি অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনুসন্ধান প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে।