প্রশ্ন: একের পর এক ছবি। প্রযোজক, অভিনেত্রী। আবারও একটা নতুন ছবি তোমার ঝুলিতে ম্যাডাম সেনগুপ্ত। নামটার সঙ্গেই একটা অরা জড়িয়ে। মনে হয় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে এই ছবির গল্পেই চমক। কী বলবে সব মিলিয়ে।
উত্তর: এটা তো পরিচালক প্রযোজকের ব্যাপার। সে বিষয়ে বলতে পারব না। তবে সায়ন্তন ঘোষাল এখন দারুণ কাজ করছেন। ওর মাথা থেকে দারুণ সব বিষয় বেরোয়। গল্পটা খুবই ভাল। তবে সব হয়ে যাওয়ার পর আমি জানতে পারি ছবির নাম ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’। আর এই ছবিতে ম্যাডাম সেনগুপ্ত হওয়া মানে অনেক রেসপন্সিবিলিটি। মা, সোশ্যাল কাজকম্ম, কার্টুনিস্ট আরও অনেক কিছু। লম্বা লিস্ট। তবে কাজটা করতে ভীষণ ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবনেও ঋতুপর্ণার অনেক শেড। মা, অভিনেত্রী, প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী, ভালো গান করেন, ভালো ক্যারাম খেলেন, সম্প্রতি ভালো ড্রাইভিং করছেন, সোশ্যাল কাজ করেন। মানে দশভূজা আক্ষরিক অর্থে। তো রিল লাইফেও এত্ত কিছু একসঙ্গে করছো। এই ছবির জার্নি কেমন?
উত্তর: প্রতিটা ছবিই আমার জীবনে একটা নতুন জার্নি। আমার ভালোবাসার জায়গা ছবি। ভালোবেসে কাজ করি। আর কাজে থাকতে পছন্দ করি। আর এটাই জীবনের জার্নি হওয়া উচিত। আমার মেয়ে বলে, মা পুরোপুরি হলিডে নেয় না। কাজ থাকেই। তো এই ছবিতেও আমার অনেক শেড। পরিচালক আমাকে এই ছবিতে মাল্টিটাস্কিং বানিয়েছেন।
প্রশ্ন: সায়ন্তন ঘোষাল এখন দারুণ দারুণ কাজ করছেন। ওর একটা আলাদা সিগনেচার আছে। তোমার কেমন লাগল ওর সঙ্গে কাজ করে?
উত্তর: এর আগে একটা অ্যাড, মিউজিক ভিডিও ওর সঙ্গে করেছি। দারুণ ব্যাপার হল কাজটা দারুণভাবে হ্যান্ডেল করেছিল ও। ছোট ছোট ডিটেলিং, অল্প সময়ে অনেক কিছু বলেছিল। সেই থেকেই আলাপ। পরে এই ছবির কথা হয়। একটা ডিটেকটিভের ভূমিকা আছে এই ছবিতে আমার। এর আগে আমি এমন চরিত্রে অভিনয় করিনি। সায়ন্তনই বলেছিল, এমন একটা ছবি হলে বেশ হয়। সব মিলিয়ে অসাধারণ কাজ হয়েছে।
প্রশ্ন: আগে ঋতু নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতেন। এখন নতুন প্রযোজকদের সঙ্গে কাজ করছেন।
উত্তর: হ্যাঁ। নতুনদের সঙ্গে কাজ করার মজা আলাদা। অনেক জানা যায় শেখা যায়। নতুনরা অনেক সাজেশন চায়। ভালো কাজ হয়। সব মিলিয়ে দারুণ। আমার কিছুদিন বাদে আরেকটা সিনেমা আসছে। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে। সেই সিনেমাতেও প্রযোজক নতুন। বাঙালি নন তিনি। কেরালার। সেই ছবিটাও অসাধারণ একটা গল্প নিয়ে তৈরি। ছবির নাম গুড বাই মাউন্টেইন।
প্রশ্ন: ছবি নিয়ে ঋতু কিন্তু বরাবরের দায়িত্ববান। এমনও সময় গিয়েছে, ডেলিভারির এক মাস আগেও ঋতু শুটিং করেছে। যাতে পরিচালক প্রযোজকদের অসুবিধা না হয়।
উত্তর: আমি আগেও এই ভাবনাতে থাকতাম। এখনও থাকি। আমার মনে হয় অভিনয় করে ছেড়ে দেওয়া কাজ নয় আমার। একটা ছবি আরেকটু ভালো করতে গেলে পরিচালক প্রযোজকদের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে। এখনও আমি সেভাবেই কাজ করি। টাকা কম বা বেশি পাই কিনতি দায়িত্বটা থাকা জরুরি।
প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নতুন কাজ এলে কমিউনিকেশন যেভাবে করেন, আর কেউ সেভাবে কিন্তু করে না।
উত্তর: আমার মনে হয় এটা করি উচিত। একটা কাজ একটা ছবিকে একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে হলে, মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হলে মিডিয়া একয়াতা বড় ভূমিকা পালন করে। তাই আমার মনে হয়, এটা করা উচিত। মিডিয়ার কাছ থেকেও অনেক ভালোবাসা পাই। এ কথাও ঠিক।
প্রশ্ন: কাজ আর পরিবার সামলাও কীভাবে? ভাগাভাগি করে নিয়েছো।
উত্তর: হ্যাঁ। এখন ম্যানেজ হয়ে গেছে। ভাগাভাগি করে নিয়েছি। হাফ সময় পরিবার। আর হাফ সময় ছবি। ছবি রিলিজের আগে মাথা ঠিক থাকে না। হাজব্যান্ড বোঝে। এখন ছেলেমেয়েরাও। ওরা জানে মায়ের ছবি রিলিজ মায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর বর এত বছরে বুঝে গেছে।
প্রশ্ন: একটা প্রশ্ন, একটু আলাদা। তোমরা এত বছর ধরে কাজ করছো। মনে হচ্ছে টলিউডের পরিবেশটা একটু নষ্ট হচ্ছে?
উত্তর: একদমই। বড় হলাম এই ইন্ডাস্ট্রিতে। ৩০ বছর কম নয় কিন্তু। অনেক উত্থান পতন দেখলাম। তবে আমার মনে হয়, আলোচনায় সব হয়। এই মিডিয়াম এমন এলটা মিডিয়াম যেখানে তুমি একা সব পারবে না। এটা একটা টিম ওয়ার্ক। তাই সবার সমস্যা মিটিয়ে কথা বলে পরিবেশকে ভালো রাখলে, ভালো কাজ হলে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ভালো হবে। এখন বাইরের অনেক কাজ বাংলাকে নিয়ে হচ্ছে। কোনও ছবি সিনেমায় বাংলা পরিবার থাকছে, গল্পে বাঙালি থাকছে। তাই এখানে এসে কাজ করতে পারলে তো আরও ভালো হয়। সব সুযোগ সুবিধা পরিকাঠামো ভালো হোক, এটুকুই চাওয়া।
প্রশ্ন: ছবি নিয়ে কিছু বলো।
উত্তর: ৪ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে এই সিনেমা। অনুরণনের পর আবার বহু বছর পর একসঙ্গে রাহুল বোস আর আমি বড়পর্দায়। দারুণ গল্প। আশা করি আপনারা দেখবেন।