প্রশ্ন : সৃজিতের ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে তোমার চরিত্রটা কাকে ইন্সপায়ার করে?
ইশা: এটা সৃজিতদাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। নিজেকে দেখেই হয়তো এই চরিত্রটা লিখেছেন সৃজিতদা। এমন একজন পরিচালক যে চৈতন্যদেবকে নিয়ে কাজ করতে চান। সৃজিতদা নিজেও বহু বছর ধরে এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন। তাই আজ এই ছবিটা হয়েছে। আমার ধারণা ছবিতে শুধু জেন্ডারটা পালটে গিয়েছে।
প্রশ্ন : দিব্য ছবিতে চৈতন্য। একটা স্নিগ্ধতা আছে তোমার মধ্যে। সৃজিত যখন তোমাকে এই প্রোজেক্টের বিষয়ে প্রথম বলেছিল, তখন তোমার রিঅ্যাকশন কী ছিল?
দিব্য: আমি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে ছিলাম। তারপর বলেছিলাম, আমাকে রোগা হওয়ার জন্য একটু সময় দিতে হবে। সৃজিতদা বলেছিলেন, সময় নাও। ফিজিক্যালি নিজেকে বদলেছি, সেটা তো আছেই। আর মেন্টালি অনেক কিছু চলছিল। প্রথম ছবি, তার ওপর সৃজিতদার ছবি। রানা সরকার, এসভিএফ, এসব নিয়েও খুব নার্ভাস ছিলাম।
প্রশ্ন : রোগা হয়েছ বললে, ডায়েটে কী কী চেঞ্জ করেছ?
দিব্য: অনেক কিছু। সব মাপে মাপে। পরিমাণ মত প্রোটিন ইনটেক থেকে শুরু করে যোগা, অ্যারাবিক, মাসল রিলিজ, ফ্যাট বার্ন করেছি। সময় লেগেছে। কিন্তু করেছি। কখনও দিনে একবার খেয়েছি। মাসে একদিন বা দু’দিন উপোস করেছি। এইসব মিলিয়ে মিশিয়েই।
প্রশ্ন: এই ছবিটা থেকে যাওয়ার মত ছবি। চৈতন্যদেবকে নিয়ে এত বড় একটা প্রোজেক্ট। তোমাদের এক্সপেকটেশন কী?
ইশা: একদমই। এই ছবি বাংলা ছবির ইতিহাসে থেকে যাবে। আর চৈতন্যদেবকে নিয়ে এত বড় একটা প্রোজেক্ট আমার মনে হয় আমাদের জেনারেশন দেখেনি। যীশুদা চৈতন্য করেছিলেন। তারপর আর এই নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। আর এই ছবির ভ্যালু এমনিই বেড়ে গিয়েছে। গল্প, কাস্ট, ডিরেক্টর, এসভিএফ, সব মিলে মিশে এই ছবির ভ্যালু অনেক।
প্রশ্ন : দিব্য, তোমার একটা আলাদা ফ্যানফলোয়িং তো আছেই। তারপর প্রথম ছবিতেই এমন একটা ব্রেক। ভগবানের আশীর্বাদ আছে। আর তুমি খুব সুন্দর করে মন থেকে পুজো করো।
দিব্য: হ্যাঁ। আমি শিব পুজো করি। কৃষ্ণ পুজো করি। রাধারানিকে ডাকি। যাই করি, যে নামেই ডাকি ভগবান তো এক। হ্যাঁ, জীবনে যা পেয়েছি বা পাচ্ছি, ওঁদের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: এই ছবি তোমার জীবনে কী চেঞ্জ করল? কী শিখলে?
দিব্য: এই ছবিতে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। তবে যা রিয়ালাইজেশন হয়েছে, তা হল, জীবনে কিছু পারমানেন্ট না। আজ যা আছে, কাল তা নেই। এক জায়গায় একটা সিন করতে গিয়ে বেশি করে মনে হয়েছে। যখন স্ত্রীর জন্য কত কিছু এনে চৈতন্যদেব শোনেন, স্ত্রী মারা গিয়েছেন। জীবনে কোনো কিছুই স্থির না। আমি যা চাই তা সবসময় পাবোই বা হবেই, এর কোনো মানে নেই। চৈতন্যকে ছোঁয়ার সাধ্যি নেই। তবে তাঁকে নিয়ে স্টাডি করে যেটুকু বুঝেছি, যেটুকু করেছি, সেটুকু মন প্রাণ দিয়ে করেছি। অনেক কিছু শিখেছি। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছি, তা হল, সব কিছুর রিপ্লাই দিতে নেই। চুপ থাকতে হয়। জ্ঞান, শিক্ষা, দৃষ্টিকোণে স্নাত একটা মানুষ, জীবনকে যিনি অন্যভাবে দেখেছেন তাঁর চরিত্রে অভিনয় করা পরম পাওয়া।
প্রশ্ন : এবার ইশার কাছে জানতে চাইব, এই ছবিটা করার জন্য রাজি হলে কেন? এই ছবিতে তুমি পরিচালক, একটু আলাদা চরিত্র তোমার।
ইশা: অনেক কারণ আছে। চৈতন্যদেব নিয়ে ছবি। একজন ইয়ং পরিচালক অনেক পড়াশোনা করে এই টপিক নিয়ে কাজ করছে। আসলে এই মেয়েটির চৈতন্য নিয়ে ইন্টারেস্ট। একটু ইন্টেলেকচুয়াল তকমা পাওয়ার পর পরিচালক মেয়েটির মনে হয়েছে এবার অন্যরকম কাজ করবে। সে চৈতন্যকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জানতে গিয়ে কোথাও কানেক্ট করে ফেলেছে। চৈতন্যের জ্ঞানের সাগরে ডুব দিতে চেয়েছে। তাই সে এমন একটা বিষয় নিয়ে ছবি বানাচ্ছে। প্রথমে এই ছবির প্রোপোজাল পাওয়ার পর ভেবেছিলাম ডিরেক্টর হিসেবে ভালো লাগবে আমাকে! তারপর ভাবলাম, কেন না? কেন ভালো লাগবে না? কেন করব না এমন একটা ইন্টারেস্টিং কাজ!
প্রশ্ন: সৃজিতের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
ইশা: আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি যা শুনেছিলাম, তার কিছুই মেলেনি। আমাকে কিছুই ফেস করতে হয়নি। আমি খুব ভালোভাবে কাজ করেছি। শিখেছি। জেনেছি। আমার অভিজ্ঞতা ভীষণ ভালো। এই ছবি করতে গিয়ে আমরা কত কিছু এক্সট্রা জেনেছি। ঢাকুরিয়া ব্রিজের নাম চৈতন্য মহাপ্রভু ব্রিজ আমরা জানতামই না। এমন আরও কত কী!
দিব্য: আরেকটা কথা বলব আমি। এই ছবিতে আমরা পুরীর মন্দিরের ভিতরে শুট করেছি। যেখানে কাউকে ঢুকতেই দেয় না, সেখানে গিয়ে আমরা শুট করেছি। এটা বিশাল পাওয়া।
প্রশ্ন: চৈতন্য মানেই যীশু। তারপর তুমি। এই ব্যাপারটা কেমন লাগছে।
দিব্য: ভীষণ ভালো। আমাকে অনেকেই বলেছে, আমাকে দিব্য লাগছে। আমার ব্যাপারটা খুব ভালো লেগেছে। আমি যীশুদার সঙ্গে শুট করেছি। যীশুদা আমাকে বলেছেন, আমাকে দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। সেই চৈতন্য হিসেবে প্রথম শুটের কথা। এগুলো আমার কাছে প্রাপ্তি।
প্রশ্ন : দর্শকদের কী বলবে?
দিব্য: ২০২৫ অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বছরের শেষটা প্রেমময় হোক। ছবিটা দেখুন। ভালো থাকুন।
ইশা: সব চৈতন্যময় হোক, আমাদের চৈতন্য হোক। বছরের শেষটা আনন্দময় হোক। আপনারা ছবিটা দেখুন। অনেক পরিশ্রম করে আমরা ছবিটা বানিয়েছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।