ফেডারেশনই পরিবার; স্বরূপে বিশ্বাস রেখেই ‘বন্ধু’ পরম

অতনু রায়: ইঙ্গিত আগেই ছিল। এবারে তাতে শুধু শিলমোহর পড়ল। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-কে (FCTWEI) কে ইমেইল এবং ভিডিও বার্তায় পরিচালক-অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন পরিবারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে আর আদালত ঢুকতে দেবেন না। বুধবারই ফেডারেশনকে এই মর্মে ইমেইল করেছেন পরমব্রত।

সূত্রের খবর, ভিডিও বার্তায় পরমব্রত উল্লেখ করেছেন,” নিজেদের ভেতরের ব্যাপার আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। এর পিছনে কিছু ভুল তথ্য, বিশ্লেষণ আর কনফিউশন কাজ করেছিল। পরিবারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে আইনি পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করাটাই শ্রেয়। আগামীতে যদি এরকম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আমি সেটাই করব।” নিজের বার্তায় গভর্নিং বডিগুলো সুসংগঠিত ভাবে কাজ করছে জানিয়ে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের প্রশংসাও করেন পরমব্রত।

প্রসঙ্গত, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বিদুলা ভট্টাচার্য, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেন সহ ১৩ জন পরিচালক। সেই দলে ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ‌্যায়ও। প্রায় একবছর চলার পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সেই মামলা খারিজ করে হাইকোর্ট। তবে বাকি পরিচালকরা এখনও সুর নরম না করলেও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন পরমব্রত। এমনকী সেই সময়ে পরিচালকদের তৈরি করা সংগঠন ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (DAEI) থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।


সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নজিরবিহীন ভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয় ফেডারেশন। ফলে কথা ছড়িয়ে পড়ে, বিদ্রোহী পরিচালকদের একাংশ চলচ্চিত্র উৎসবের সামনে সারিতে থাকার ফলেই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে ফেডারেশন। একদিনের জন্যও চলচ্চিত্র উৎসবে আসেননি ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। কিন্তু পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন যে ফেডারেশনের সঙ্গে আর কোনও রকমের আইনি জটিলতায় যেতে চান না তিনি।

ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উদযাপন করা হল কিংবদন্তি পরিচালককে। প্রথম দিনেই ঋত্বিক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ‘প্রেজেন্ট’ করেছেন পরমব্রত।

সে এক সময় ছিল। একদল যুবক স্টুডিওকর্মী আর শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শুরু করলেন। স্টুডিয়োয় তো বটেই, কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়েও তাদের অসহায়তা আর দুঃখের কথা শুনতেন তাঁরা। স্টুডিও চত্বরগুলো মুখর হল বিভিন্ন দাবি আদায় আর ‘স্টুডিওয় অনাচার বন্ধ করতে হবে’ স্লোগানে। এই আন্দোলনের সবচেয়ে সামনের লোকটার নাম ছিল, ঋত্বিক ঘটক।

কাট টু – নভেম্বর, ২০২৫। ঋত্বিক দৌহিত্র পরমব্রত ভিডিও বার্তায় বললেন: শ্রমিক ঐক্য দীর্ঘজীবী হোক। ফেডারেশন দীর্ঘজীবী হোক। সমাপতন বোধহয় একেই বলে!

পরমের ঘরে ফেরা প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি স্বরূপ বিশ্বাসকে। তবে একথা বলাই যায়, স্বরূপে বিশ্বাস রেখেই আবার বন্ধু পরম।