শ্যাম বেনেগলকে চিঠি লিখতে চান রজিত

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রশ্ন: ‘দ্য সিধুজ্ অব আপার জুহু’ দশ বছর পার করল। নাটকে আপনার চরিত্র বলবিন্দর সময় ও সমাজের নিরিখে কতটা বদলালো?

রজিত: স্ত্রীর সঙ্গে বলবিন্দরের সম্পর্ক, চাকরি, শহরকেন্দ্রিক জীবনের স্ট্রেস, সব কিন্তু একই আছে। দশ বছর আগে লোকটার ভেতরের যে পাগলামি ছিল, এখনও আছে। যদি স্ট্রেসের কথা বলি – সেটা বরং বেড়েছে। আমাদের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন বদলেছে, ক্রিকেট তো আছে! এটা অনেকটা সেরকমই। শুধু একই ইস্যু নিয়ে দশ বছর পরেও দর্শকদের সঙ্গে কানেক্ট করতে হচ্ছে।

প্রশ্ন: অনামিকা কলা সঙ্গমের আমন্ত্রণে কলকাতায় এলেন, অন্যান্য শহরেও তো যেতে হয়। নতুন প্রজন্মের থিয়েটার দেখার প্রবণতা কেমন বুঝছেন?


রজিত: কিছুক্ষেত্রে বেড়েছে। ক’দিন আগে মুম্বইতে একটা ম্যানেজমেন্ট কলেজে ‘টুয়েলভ্ অ্যাঙ্গরি জুররস্’ করলাম। নাটক শেষে অনেক স্টুডেন্ট ব্যাকস্টেজে দেখা করতে আসে। অনেকেই বলল, তারা আগে কখনও নাটক দেখেনি এবং এই নাটক দেখার পরে তাদের আরও দেখার ইচ্ছে তৈরি হয়েছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লাইভ পারফরম্যান্সটা তাদের কাছে হয়ত মিউজিক শো এবং ব্যান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার কভারেজের কারণে। কিন্তু এবার নাটকের ‘ইনটেনসিটি লেভেল’টা তারা বুঝছে। বলছে, ম্যাজিক্যাল। আমি বললাম, থিয়েটার ম্যাজিক্যাল কারণ তোমরা লাইভ ইন্টার‌্যাকশন সেই মুহূর্তেই দেখছ, অনুভব করছ, রিয়্যাক্ট করছ।

প্রশ্ন: আমরা স্কুলবেলা থেকেই থিয়েটার দেখেছি। এখন ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্টরা প্রথমবার থিয়েটার দেখছে! অদ্ভুত না?

রজিত: অবশ্যই। আসলে সব জায়গার দর্শকও একরকম হয় না। কলকাতায় সবসময়ই থিয়েটারের নিয়মিত দর্শক রয়েছে। চেন্নাইতে নতুন প্রজন্ম নাচের অনুষ্ঠান খুব পছন্দ করে। তারা ছোট থেকেই দেখা শিখেছে, কারণ দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে নাচটা খুব সহজভাবে এসেছে। আবার মারাঠিরা নিয়মিত থিয়েটার দেখে। মারাঠি থিয়েটার উইক-ডেজেও হয়, একেবারে কলকাতার মতো। আমি কলকাতার সেই কালচারটা দেখেছি। কুড়ি বছর আগে মানুষ নিয়মিত থিয়েটার দেখতে আসত। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত’র মতো অভিনেতারা নিয়মিত থিয়েটার করেছেন এবং সবসময় দর্শক ছিল। যদিও বর্তমান অবস্থা সেভাবে বলতে পারব না।

প্রশ্ন: এখানে অনেক শিল্পী বলেন, তাঁরা মনের তাগিদে থিয়েটার করেন। কিন্তু শুধু থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়…অনেকে যদিও ভিন্নমত পোষণ করেন।

রজিত: না, শুধু থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে না।

প্রশ্ন: মুম্বইতে বা জাতীয় স্তরেও কি একই অবস্থা?

রজিত: সব জায়গায়। জাতীয় স্তরে শুধু নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই। যদি ইংল্যান্ডেও দেখি, শুধুমাত্র থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহ করা খুব কষ্টকর। তবে বিদেশে ব্যাপারটা অনেক গোছানো, তাও মাসে অন্তত কুড়ি-পঁচিশটা শো করতে হয়। সেখানে গুজরাটি বা মারাঠি নাটকের ক্ষেত্রে মাসে অন্তত চল্লিশটা শো করতে পারলে শুধুমাত্র থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহ সম্ভব। নাহলে সাপোর্টে অন্য উপার্জন থাকতেই হবে।

প্রশ্ন: মুম্বইতে এখন ব্ল্যাকবক্স থিয়েটার খুব হচ্ছে। এটা কি নতুন প্রজন্মের সার্ভাইভাল স্ট্র্যাটেজি?

রজিত: অবশ্যই এটা সার্ভাইভাল স্ট্র্যাটেজি। নতুন ছেলেমেয়েরা একটা থিয়েটার করতে চাইলে কী করে করবে? বড় বড় অডিটোরিয়ামের ভাড়া তো ছোট দলগুলোর সামর্থের মধ্যে থাকে না। তাদের জায়গা খুঁজে বার করতে হবে। সেটাই তারা খুঁজে নিচ্ছে। আমার মনে হয় কলকাতাতেও এরকম স্পেস তৈরি হচ্ছে। একজন আমন্ত্রণও জানিয়েছেন এমন স্পেস দেখতে যাওয়ার জন্য। অবশ্যই দেখতে চাই।

প্রশ্ন: কলামন্দিরে আপনার ‘লভ লেটারস্’ দেখেছিলাম। আজ সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের যুগে যদি আবার কাউকে চিঠি লেখার সুযোগ পান, কাকে লিখতে চাইবেন?

রজিত: কাকে চিঠি লিখতে চাইব! খুবই কঠিন প্রশ্ন…

প্রশ্ন: …তাও একজনের নাম বেছে নিতে হলে…

রজিত: যাঁকে আমি চিঠি লিখতে চাইব, তিনি আজ এই পৃথিবীতে নেই। ‘মিস্টার শ্যাম বেনেগল’। ওঁর কাছে আমি যা শিখেছি সেটা কোনো কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে শিখতে পারতাম না।

প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুতেই শ্যাম বেনেগল, গোবিন্দ নিহালানি, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত’র মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজ করার পরে আপনি কি খুব ‘চুজি’ হয়ে গিয়েছিলেন?

রজিত: আমাকে ‘চুজি’ বলতেই পারেন। কোনো চরিত্র যদি আমাকে ‘এক্সাইট’ করে, যদি চরিত্রটায় আমার নতুন কিছু দেওয়ার থাকে বা সেটা খুব কঠিন, যা নিজেকে আরও এক্সপ্লোর করার সুযোগ দেবে, তখনই আমি চরিত্রটা করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে ‘ব্যোমকেশ’ নিয়ে কথা বলতেই হয়। এখনও যে কেউ ‘ব্যোমকেশ’ হলে একবার আপনার নাম ওঠেই। আপনার পরে যাঁরা ব্যোমকেশ করেছেন, তাঁদের কারোর কাজ দেখেছেন?

রজিত: না, আমি খুবই কম দেখেছি। সুযোগ হয়নি। তবে দেখতে চাই। আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ একবার দেখেছিলাম, তখন কলকাতায় এসেছিলাম। অবশ্যই সুশান্তের (সিং রাজপুত) ব্যোমকেশ দেখেছি। নতুন প্রজন্মের যারা ব্যোমকেশ করছে আমার খুব ইচ্ছে তাদের দেখার। কয়েক বছর আগে গৌরব চক্রবর্তী ব্যোমকেশ করেছে, সেটাও দেখতে চাই।

প্রশ্ন: শ্যাম বেনেগলের সঙ্গে ‘মুসলিম ট্রিলজি’ করেছেন। ‘মাম্মো’, ‘সরদারি বেগম’ আর ‘জুবেইদা’। ওই সময়ে এরকম ট্রিলজি সম্ভব হয়েছিল। সময় বদলের সাথে ছবির বিষয়ও কি শর্তাধীন হয়ে উঠেছে?

রজিত: সিনেমার ফিনান্স আর ব্যবসার পদ্ধতিই অন্যরকম হয়ে গেছে। যাঁরা সিনেমাতে লগ্নি করছেন, তাঁরা কী বানাচ্ছেন, কেন বানাচ্ছেন, কার জন্য বানাচ্ছেন সেসব নিয়ে অনেক সাবধানী। আগে ছিল, আমি এটা বানাতে চাই, বানাবো। এখন ব্যবসার দিকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ একজন অভিনেতাকে কতটা বদলে দেয়?

রজিত: এটা একদম সাময়িক। যখন পেয়েছিলাম, একটা উত্তেজনা তো কাজ করেই ছিল। কারণ, ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’! জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত হচ্ছি! তারপরে তো এগিয়ে যেতেই হয়।

প্রশ্ন: বাঙালির কাছে আপনি ‘চরাচর’-এর প্রিয় পাখিওয়ালা ‘লখা’। পরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দুটো ছবি ছাড়া বাংলা ছবি আপনাকে আর সেভাবে পায়নি। বাংলা ছবিতে ফিরবেন?

রজিত: হ্যাঁ। যদি আমার চরিত্রটা খুব ‘এক্সাইটিং’ হয়, অবশ্যই আসব। কেন আসব না!