বলিউডে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাসের আরেক রাজ্যজয়- আন্তর্জাতিক মাধ্যমে নিজস্ব টক শো

হলিউড মহলে প্রিয়াঙ্কার এক নতুন পদক্ষেপ- নতুন স্বাদের এক টক শো- ‘ইফ আই ক্যুড টেল ইউ জাস্ট ওয়ান থিং’।বলিউডের পাশাপাশি হলিউডেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। ইউটিউবের এই অরিজিন্যাল শোটি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাসের আরেক রাজ্যজয়।

গত ২৭শে মার্চ প্রিয়াঙ্কার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ হওয়া এই শোটির মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের রোজকার লড়াই সহজ করার জন্য  তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ইন্সপায়ারিং কিছু মানুষের দেওয়া জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ টিপ্‌স। আধ ঘন্টার এই শোটির প্রথম এপিসোডে দেখা গেল আমেরিকা যুক্ত্ররাষ্ট্রের অলিম্পিক সোনাজয়ী সিমন বাইলস্‌, ইউটিউবার- র‍্যাপার-অভিনেত্রী অকাফিনা এবং খ্যাতনামা ডিজাইনার ডিয়ান ভন ফার্স্টেনবার্গ কে। প্রথম এপিসোডেই মাল্টিকালচারাল এবং বহু চর্চিত মহিলা অতিথিদের নির্বাচন আন্তর্জাতিক বাজার জয় করতে সহায়ক হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বিষয়ে পরিচালকের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারা যায় না।

শোটির শুরুতেই প্রিয়াঙ্কার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের এক মনোহর দৃশ্য দেখা যায় যার মধ্যে ভারতীয় ছোঁয়া নেই বললেই চলে। আধুনিক ভ্লগারদের একচেটিয়া আধিপত্য মিনিমালিস্ট গৃহসজ্জা- শৌখিনতা ও আভিজাত্যের মোড়কে এক অত্যাধুনিক ট্রেন্ডিপণা যার মধ্যে প্রাণ বা পারিবারিক উষ্ণতার কোন স্থান নেই। সেই প্রাণহীন প্রাসাদের মধ্যে এক জগাখিচুড়ি হলি-বলি মিশ্রণে অভিনয় প্রিয়াঙ্কার যার মধ্যে সাবলীলতার খোঁজ করা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার সমান।


তবে শোটির অতিথিরা ভারী চমৎকার। প্রত্যেকে অস্বাভাবিক সাবলীল এবং আত্মবিশ্বাসী। জড়তাহীন ভাবে বলে যাচ্ছেন মনের কথা। সিমনের জীবনের মূল মন্ত্র – ঝুঁকি নেওয়া এবং তা তিনি শিখিয়ে দিলেন প্রিয়াঙ্কাকে। প্রাক্তন কোচের দ্বারা যৌন নিপীড়ন, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে থেরাপির প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি সামাজিক ট্যাবু নিয়ে কথা বললেন প্রিয়াঙ্কার অত্যধিক চড়ামাত্রার অভিনয়ের মাঝেই।

অকাফিনার লড়াই সমবেদনা এড়ানোর।তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা – জীবনের অবশ্যম্ভাবী ওঠাপড়া।

ডিয়ান এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব- অস্বাভাবিক প্রভাবশালী এই মহিলার আকর্ষণ উপেক্ষা করা অসম্ভব। তাঁর থেকে বয়সে অনেক ছোট হওয়া সত্বেও প্রিয়াঙ্কার গ্ল্যামার ডিয়ানের ব্যক্তিত্বের কাছে ম্রিয়মান। তিনি প্রিয়াঙ্কাকে শেখালেন নিজের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে।

তিনজন অতিথির সঙ্গে কথা বলার পর তাদের কথাকে এক সুতোয় বাঁধতে গিয়ে ক্যারিওকির সাহায্য নেওয়া হাস্যকর। পাশাপাশি নিক জোনাসের স্ক্রিপ্টেড উঁকি এবং প্রিয়াঙ্কার ততোধিক স্ক্রিপ্টেড চিরাচরিত ভারতীয় স্ত্রীসুলভ বিদায় সম্ভাষণ কৌতুকের উদ্রেক করে।

শো-টিতে মানবতাবোধ এবং নারীবাদের ফিউশনে নতুন কিছু বলার এবং গথে বাঁধা সোফায় বসে তেত-আ- তেতের পরিবর্তে  নতুন স্বাদ পরিবেশনের প্রয়াস অনন্য কিন্তু প্রিয়াঙ্কার স্ক্রিপ্টের বাইরে গিয়ে সাবলীলভাবে অভিনয় করতে না পারায় সম্পূর্ণ শোটিই ভারী মেকী লাগে। বিশেষত আকাশছোঁয়া হিল, প্রয়োজনহীন ক্লিভেজ প্রদর্শনের মাধ্যমে নারীত্বের প্রকাশ করতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কার ব্যক্তিত্ব অনেকখানি চাপা পড়েছে- তাঁর অস্বস্তি ক্যামেরায় প্রকট এবং দর্শকের কাছে তা একপ্রকার নেকামি হিসাবেই পৌঁছচ্ছে।

তবে শোটি ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ভারতীয় মেয়ের বিদেশে নিজস্ব শো হাতিয়ে নিতে প্রিয়াঙ্কাকে যে নিজের পরিশ্রমের ও প্রতিভার উপর ভরসা রাখতে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। আশা করা যায় শোটির পরবর্তী এপিসোডগুলি আরও মনোগ্রাহী ও জীবনমুখী হবে।