টলিউডের মনের যত্নে ফেডারেশনের হাত ধরল পিজি হাসপাতাল

নিজস্ব চিত্র

অতনু রায়

নচিকেতা চক্রবর্তী গানে লিখেছিলেন, “মনের হদিস কেবা জানে; কী যে থাকে মনের ঘরে?/ কেউ জানে না, কেউ জানে না…সেও জানে না যে ধারণ করে”। আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে মস্তিষ্কের যে অপরিণামদর্শী যুদ্ধ হয়ে চলেছে অহরহ, তাতে এই গানের কথাই যেন ভেতর ঘরে ঘুরপাক খায় অহরহ। আজ ঘরে, বাইরে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপে মানুষ দিশেহারা। ফলে খবরের কাগজ আর চ্যানেলে রোজ আত্মহত্যার খবর। সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট, সবাই শিকার এই মানসিক চাপের। আজও চোখের সামনে ভাসে সুশান্ত সিং রাজপুতের মুখ। মানসিক চাপ অসুর হয়ে সুশান্তের মতোই কেড়ে নিয়েছে প্রত্যুষা, জিয়া খান থেকে শুরু করে হালে, বাংলার চিত্রগ্রাহক সৌম্যদীপ্ত গুইন সকলেই হার মেনেছেন।

সাম্প্রতিক অতীতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়তা নিয়ে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন দিপিকা পাডুকোন। কীভাবে লড়েছেন মনের লড়াই, জানিয়েছেন শাহরুখ খান, অনুষ্কা শর্মার মতো অভিনেতারাও। একজন চিত্রগ্রাহক কীভাবে মানসিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কীভাবে তাঁর যুদ্ধের সহ-সৈনিক হয়ে উঠছেন সেই গল্প আমরা দেখেছি আলিয়া ভাট – শাহরুখ খান অভিনীত ‘ডিয়ার জিন্দগী’ ছবিতে। ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছেন ঋত্বিক রোশন থেকে বরুণ ধাওয়ান, কিন্তু কখনও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে শিল্পী ও কলাকুশলীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।


টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলী ও শিল্পীদের জন্য অভিনব এক মানবিক উদ্যোগ নিল ফেডারেশন। এই উদ্যোগে ফেডারেশনের সহযোগী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিখ্যাত ও দেশের অন্যতম সেরা এস.এস.কে.এম. (পিজি) হাসপাতালের ডিরেক্টর ও ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি কর্তৃপক্ষ। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এবং পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রির হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট অমিত কুমার ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতেই আজ ঘোষণা হল এই উদ্যোগের। আরো উপস্থিত ছিলেন পিয়া সেনগুপ্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নীলাঞ্জনা শর্মা, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, অন্নপূর্ণা বসু, নিসপাল সিং রানে, পাভেল, রাহুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

এই বিষয়ে স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “আমরা আমাদের বহু সহকর্মীকে অকালে হারিয়েছি। তাঁরা মানসিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে তাঁদের অমূল্য জীবন শেষ করে দিয়েছেন। এই সমস্যা শুধুমাত্র কলাকুশলীদের নয়। আমাদের অনেক প্রিয় শিল্পীও মানসিক অবসাদে নিজেদের জীবন শেষ করে দিয়েছেন। আজ যেভাবে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এস.এস.কে.এম. (পিজি) হাসপাতালের ডিরেক্টর ও ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি কর্তৃপক্ষ টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির সকল কলাকুশলী ও শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করলেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি আমরা শিল্পী ও কলাকুশলীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারব। আর এই বিষয় সবটাই গোপন থাকবে।”

প্রসঙ্গত, আগামী সাতদিনের মধ্যেই পিজি হাসপাতালের পক্ষ থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফেডারেশনের অফিসে মাসে তিন দিন করে বসবেন; যাঁরা বিভিন্ন মানসিক অবসাদ বা সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনে এই কলাকুশলী ও শিল্পীরা পরবর্তী সময়ে ফেডারেশন এর তত্ত্বাবধানে এস.এস.কে.এম. হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রিতে তাঁদের সুচিকিৎসা করাতে পারেন, তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করবেন।