বড়ো পর্দায় মুক্তি পেল কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহী পরিচালিত সিনেমা ‘তোর্ষা একটি নদীর নাম’! এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক, সমাজ গঠনমূলক এবং এই অস্থির পৃথিবীর জন্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক চলচ্চিত্র। এই সিনেমা আপনাকে একবারের জন্য হলেও ভাবাবে। আপনারা যারা প্রতিদিন অফিস যান, নিজের ব্যবসাকে সফল করার জন্য সময় দেন , তিল তিল করে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, কিছুটা নিজের জন্য আবার বেশ কিছুটা আপনাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনাদের যে অমূল্য সময় আপনি অর্থ রোজগার করার জন্য ব্যয় করছেন, তার পাঁচ ভাগের একভাগ সময়ও কি আপনি আপনার বাচ্চাদের ভালো লাগা ,খারাপ লাগা নিয়ে ব্যয় করেছেন?
কোনদিন কি জানতে চেয়েছেন এই ইঁদুর দৌড়ের পৃথিবীতে তাদের ইচ্ছেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কিনা? ভেতরে ভেতরে তারা ইমোশনলেস মানুষ তৈরি হচ্ছে কিনা? যা আপনার জন্য তো বটেই, এই পৃথিবীর জন্য আগামী দিনে একটা বিশাল বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আনছে। আমরা বুঝতেই পারছি না, আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে , টিউশনে ,ফার্স্ট সেকেন্ড বা থার্ড হওয়ার চাপে কিভাবে ওদের ছেলেবেলাটা হারিয়ে যাচ্ছে!’তোর্ষা একটি নদীর নাম’ এরকমই একটি চলচ্চিত্র, যা একবার হলেও আপনাদের চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দেবে, সবাইয়ের প্রথম হওয়ার দৌড়ের এই পৃথিবীতে , লাস্ট বেঞ্চারদেরও একটা জায়গা রয়েছে! স্কুলে না যাওয়া বস্তির বাচ্চাদেরও , একটা নিজস্ব পৃথিবী রয়েছে! যে পৃথিবীতে রয়েছে, অমলীন বন্ধুত্ব, প্রাণখোলা হাসি, নদীর মত সহজ সরল জীবন, আর দিগন্ত বিস্তৃত খোলা পৃথিবী! তাই তো এই সিনেমায় , একটি বাচ্চা বলে ওঠে তোমরা আর যাই করো না কেন, ‘নদী তো আর বানাইতে পারো নাই!’
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে, বিভিন্ন থিয়েটার হলে ৩০ মে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে! পরিচালক কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহী বললেন, ‘আমার সিনেমা দেখলে দর্শক তার হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলায় ফিরে যাবেন, একথা হরফ করে বলতে পারি। এটি সম্পূর্ণরূপ নির্ভেজাল, নিষ্পাপ বন্ধুত্বের গল্প।’ কৃষ্ণেন্দুবাবুর মতে, এর আগে উত্তরবঙ্গকে কোন সিনেমাতে এইভাবে দেখানো হয়নি। তাঁর “তোর্ষা একটি নদীর নাম” উত্তরবঙ্গের খরস্রোতা নদী তোর্ষা পাড়ের জেলে বস্তিদের জীবনযাপনের কথা বলে, কথা বলে বস্তি পাড়ের ধুলো মাখা বাচ্চাদের সাথে, এই গল্পের প্রধান চরিত্র তোর্ষা সেনের বন্ধুত্ব!
স্থানীয় একটি বেসরকারি উচ্চবিত্তদের স্কুলে পড়ে গল্পের প্রধান চরিত্র ৯ বছরের বাচ্চা তোর্ষা সেন! যে আবার কুচবিহারের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব সেনের একমাত্র আদরের মেয়ে। রাজিব পত্নী নন্দা কখনোই চান না তার মেয়ে বস্তির বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব করুক। কীভাবে এই বন্ধুত্ব সব বাধাকে ভেঙে দিয়ে বস্তি উচ্ছেদের মত রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল, সমাজের উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই বন্ধুত্ব সত্যিই কি কোন সুতোর কাজ করতে পেরেছিল? এটা জানতে গেলে এই সিনেমাটা আপনাদের নিকটস্থ পেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতেই হবে। দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার জিতে নিয়েছে এই সিনেমাটি।
পরিচালক কৃষ্ণেন্দু জানালে, ‘আমরা দাদা সাহেব ফালকের অনারেবল জুরি মেনসেন পেয়েছি’, ফ্রান্স, ইউকে, ইউএসএ, বিদেশের বহু ফিল্ম ফেস্টিভালের বেস্ট ফিচার ফিল্ম হয়েছি। অনেক জায়গায় অফিসিয়াল সিলেকশন এসেছে। ভারতের রাজেশ্বরম ফিল্ম ফেস্টিভালে বেস্ট ফিচার ফিল্মের তকমা পেয়েছে ‘তোর্ষা একটি নদীর নাম’। এই চলচ্চিত্রে সংগীত ও আবহ সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র, গান গেয়েছেন রূপম ইসলাম, ইমন চক্রবর্তী, অন্বেষা দত্তগুপ্তর মত বড় শিল্পীরা।
ছবিটি সম্পাদনা করেছেন খাদান ও রঘু ডাকাত খ্যাত সম্পাদক মোহাম্মদ কালাম। শব্দ পরিকল্পনায় তীর্থঙ্কর মজুমদার। চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন পুনে ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউড থেকে পাশ করা তরুণ চিত্রগ্রাহক আবির দত্ত। তোর্ষা চরিত্রে অভিনয় করেছে, কাছের মানুষ, মির্জা খ্যাত চিত্রনাট্য সংলাপ লেখক অর্ণব ভৌমিকের মেয়ে কাব্য ভৌমিক। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সুদীপ মুখার্জী, লামা হালদার, দীপান্বিতা ঘোষ, কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী সহ অনেক থিয়েটারের অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ছবিটি প্রযোজনা করেছে ‘তিথোস এন্টারটেইনমেন্ট’। নিবেদন করেছেন যোগেন চৌধুরী, সহ-নিবেদনে নির্মাল্য ঘোষ।