‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ আলোড়ন তুলেছে

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

রাজনীতি, প্রশাসন এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের মধ্যে যোগসূত্রের আবহে, পশ্চিমবাংলার ২০০০ সালের পটভূমিতে লিখিত কাহিনীর জমজমাট চিত্রনাট্যে নেটফ্লিক্সের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ দর্শক মহলে আলোড়ন ফেলেছে। স্বনামধন্য চিত্রনাট্যকার নীরজ পান্ডে পুনরায় তাঁর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। বাংলার মেগাস্টার জিৎ এবং বাংলার তিনজন প্রখ্যাত চট্টোপাধ্যায় (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)-এর অভিনয়ের মেলবন্ধনে মোট সাতটি পর্বের সিরিজটি একটি অনন্য মাত্রা পেয়েছে। এই সিরিজে অভিনয় করেছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক ভৌমিক, আদিল জাফর খান, চিত্রাঙ্গদা সিং, মিমো চক্রবর্তী, আকাঙ্ক্ষা সিং, পূজা চোপড়া এবং আরো অনেকে। চিত্রনাট্যকার নীরজ সিং এর আগেও বিহার চ্যাপ্টার নির্মাণ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন। এবারে পশ্চিমবাংলার পটভূমিতে কাল্পনিক কাহিনী ‘খাকি: দা বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ নেটফ্লিক্সে সাম্প্রতিক রিলিজ করেছেন। দেবাত্মা মন্ডল এবং তুষারকান্তি রায়ের পরিচালনায় কলকাতার পটভূমিতে লিখিত চিত্রনাট্যগুলির বেশিরভাগ শুটিং কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে হয়েছে। কাহিনীটির মূল থিমে দেবদাস এবং পারোর কাহিনীর পরে বাংলার আরো এক রূপ দর্শন করতে বলা হয়েছে।

২০০০ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলার রাজনীতি, পুলিশ প্রশাসন এবং দুষ্কৃতীদের মধ্যে ত্রিকোণ সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ ঘুণ ধরে যাওয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত সাধারণ মানুষ, তাদের দুর্দশা। অপরদিকে ক্ষমতাশালী রাজনীতিবিদদের ঠান্ডা মাথার খেলায় সমাজের আইন প্রশাসনকে পকেটে পোরা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুষ্কৃতীদের আস্ফালন, খুন এবং অবৈধ কারবারের রমরমা, অসৎ এবং ঘুণ ধরে যাওয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নির্ভীক, সৎ, দক্ষ পুলিশ অফিসারের সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কাহিনী নিয়ে তৈরি এই বেঙ্গল চ্যাপ্টার। একজন সাধারণ মানুষ ঠিক কী পরিস্থিতিতে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়, সেই গল্পও স্থান পেয়েছে এই ছবির চিত্রনাট্যে। ঠান্ডা মাথার রাজনীতিবিদের (বরুণ রায়) ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যথারীতি অনবদ্য অভিনয় করেছেন এবং নিজেকে পুনরায় প্রমাণ করেছেন। একজন সৎ এবং দক্ষ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট পুলিশ অফিসারের (অর্জুন মৈত্র) চরিত্রে জিৎ অসাধারণ পারফর্ম করেছেন।


বর্ষীয়ান মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে ভোলা যাবে না। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডনের (শংকর বড়ুয়া ওরফে বাঘা) চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সাবলীল অভিনয় এই সিরিজটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। তাঁর অনবদ্য অভিনয়শৈলী প্রতিবারের মতো এবারও যেন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তিনি কত বড় মাপের একজন চরিত্রাভিনেতা।

পুলিশ অফিসারের (সপ্তর্ষি সিনহা) চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় যথেষ্ট মানানসই। দু’জন সমাজ- বিরোধী শাগরেদের ভূমিকায় ঋত্বিক ভৌমিক (সাগর) এবং আদিল জাফর খান (রঞ্জিত) অনবদ্য। বিরোধী রাজনৈতিক নেত্রীর (নিবেদিতা বসাক) ভূমিকায় চিত্রাঙ্গদা সিংয়ের অভিনয় আরও সাবলীল হলে ভালো লাগতো। রাজনীতি, প্রশাসন এবং আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সখ্য নিয়ে ছবি এর আগেও অনেক মুক্তি পেয়েছে। চরিত্রের জন্য অভিনেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নীরজ পাণ্ডে তাঁর যথাযথ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। বাংলার সফল চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন তাঁর এই ওয়েব সিরিজটি। কিন্তু এই সিরিজটির ক্ষেত্রে আকর্ষণের বিষয়বস্তু হল গল্পের টুইস্ট, যা সাতটি পর্বের সিরিজটি দেখার আকর্ষণ ধরে রাখবে। দর্শকদের কোথাও মনঃসংযোগ নষ্ট হতে দেবে না। বাংলার প্রেক্ষাপটে জমজমাট চিত্রনাট্যের, বলিষ্ঠ সংলাপ সম্বলিত অ্যাকশনে ভরপুর, সামাজিক থ্রিলার ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ দর্শক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত হবে।