সংগীত শিল্পী অন্বেষা দত্ত গুপ্ত তাঁর প্রথম মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘হমসাজ’ নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন দর্শকদের সামনে। শুধু অভিনয় নয়, এই হিন্দি ছবিটিতে থাকছে তাঁরই সুর দেওয়া এগারোটি গান। নিজে গেয়েছেন এবং সুরারোপও করেছেন তিনিই। সৌম্যজিৎ গাঙ্গুলি নির্দেশিত ছবিটির প্রিমিয়ার আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি। তার আগে গায়িকার সঙ্গে সেরে নিলাম কিছু কথোপকথন।
‘হমসাজ’-এ তো শুধু গান গাওয়া নয় অভিনয় করা, গান লেখা, সুর দেওয়া- এতগুলো বিভাগ কী করে সামলাচ্ছেন?
এই ছবির প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ২০২৩ থেকে। মিউজিক প্রোডাকশনের কাজটা আমাদের অনেক আগে শুরু হয়েছিল। ফলে গানগুলো আমি আগেই তৈরি করে নিয়েছিলাম । গান করা, লেখা, সুর দেওয়া এগুলো যেহেতু আমার ইন্টারেস্টের মূল বিষয়, তাই আমি খুব এক্সাইটেড যে একটা ছবিতে এতগুলো ভূমিকায় কাজ করব।
‘হমসাজ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিলেন?
এটা নির্দেশক সৌম্যজিৎ গাঙ্গুলির সম্পূর্ণ অন্য ধরনের কনসেপ্টের একটা ছবি। এর থিমের সঙ্গে মিশে আছে প্রকৃতি এবং বন্ধুত্ব। তিন বান্ধবী খনক, জোয়া আর নিশা বেরিয়ে পড়ে একটা ছোট্ট ছুটিতে। সেখানে তাদের এক পূর্ব পরিচিতের সঙ্গে দেখা হয়। তারপর একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। নর্থ বেঙ্গলে ডুয়ার্সে শ্যুট হয়েছে ছবিটির।
ছবিতে যাঁরা গান করেছেন তাঁরাই অভিনয়ও করেছেন। মানে হলিউড মিউজিকাল-এ যেমন আমরা দেখি। এখানে চরিত্রগুলির একটি গুরুকূল থেকে বন্ধুত্বের সূত্রপাত। ফলে গান ছবির অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে। এ দেশে তো এরকম ধারার ছবি খুব একটা হয় না, ফলে প্রস্তুতিতে অনেকটা সময় লেগেছে। আমি তো রয়েছিই এ ছাড়া ধ্রুপদী আর প্রকৃতির মতো ইমার্জিং আর্টিস্টরাও রয়েছেন। মহম্মদ ইকবাল যিনি এই ছবিতে আমার লাভ ইন্টারেস্টের রোলটা করেছেন, উনি ছাড়া সকলেই সিঙ্গার। ফলে আমাদের অভিনয়ের দক্ষতাটা বারবার এক সঙ্গে রিহার্সাল করে অর্জন করতে হয়েছে। কোনও ফিল্ম স্কুলে গিয়ে ওয়ার্কশপ করাটা যেহেতু খুব দীর্ঘ একটা প্রসেস, সেটা আমরা করতে পারিনি। তবে স্ক্রিপ্ট বারবার পড়া, চরিত্রটাকে বোঝা- এই প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।
সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরা অভিনয় করেছেন, এরকম তো আগেও হয়েছে। কিশোর কুমার , লতাজি এমন কী জাকির হোসেনও অভিনয় করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা কে?
একদমই স্বাধীন একটা ভাবনা থেকে আমার ‘হমসাজ’ ছবিটার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা। কারণ গানের বাইরে অন্য কিছু করায় আমার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়। শিল্পীদের একটা পার্সোনা প্রথম থেকেই লোকের মনে গেঁথে থাকে। তাই নির্দেশক আমায় প্রথম থেকে সেই ঝুঁকিটার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। কারণ বাকিরা নতুন, কিন্তু আমার একটা ইমেজ আছে।
তবে জানেন, যখন আমি প্রথম কম্পোজ করতে শুরু করি, তখনও অনেকে বলেছিল যে, আমি সুর করছি দেখে আমাকে হয়তো আর অন্য সুরকাররা সুযোগ দেবেন না। ঝুঁকি ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে থাকবেই। সেটাকে গুরুত্ব দিলে নতুন কিছু করা যাবে না। আমি মনে করছি এর চেয়ে বেটার ডেবিউ আমার জন্য হতে পারত না, কারণ এতে মোট এগারোটা গান আছে।
কেরিয়ারে একটা সফল জায়গায় পৌঁছে নতুন চ্যালেঞ্জ কেন নিতে ইচ্ছে হল?
এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবিনি, এটা করতে আমার খুব ভালো লাগছিল। আমি বাংলা হিন্দি ছাড়াও নানা ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছি। তাই এই ডাইভার্সিফিকেশনটা আমায় খুব আনন্দ দিয়েছে। নিজের কথা, সুর সবই তো সৃষ্টিশীল কাজ, সেটা আমি স্বাধীনভাবে করতে পেরেছি এই ছবিতে। এই ক্রয়েটিভ এক্সপোজারটা আমায় একটা তৃপ্তি দেয়। এর আগে দুটো বাংলা ছবিতে সুর করেছি গান লিখেছি, একটা মারাঠি ছবিতে সুর আর ব্যকগ্রাউন্ড স্কোর করেছি। এটা আমার প্রথম হিন্দি ছবি একজন সুরকার হিসেবে, আমি তাই ছবিটার ব্যাপারে খুব অবেগপ্রবণ।
এত সব কাজে আপনার রেওয়াজ ব্যাহত হয় না?
না রেওয়াজের সময়টাও বের করে নিতে হয়। দেহের জন্য মানুষ যেমন ব্যায়াম করেন, গানের জন্য রেওয়াজ। তাই ব্যস্ত থাকলেও, সেটার সময় বের করে নিই।
আপনি রিয়ালিটি শো দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন এই ধরনের শোয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন? তারা কীভাবে শুরুটা করবেন?
আমি রিয়ালিটি শোয়ের বিপক্ষে নই। কিন্তু এখন এই শোগুলো খুবই ব্যবসাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সেখানে প্রতিযোগিতাটা খুব সেকেন্ডারি। যদি কোনও প্রতিযোগী বেসুরো গায়, তাহলে বেসুরোটাই শোনানো উচিত। তাহলেই তো সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার ভুল ত্রুটিগুলো যদি কারিগরির সাহায্যে ঢেকে দেওয়া হয়, তাহলে তো প্রতিযোগিতার কোনও মানেই থাকে না। তবে সব সত্ত্বেও বলব, ঠিক জাজমেন্ট হলে, নতুনদের জন্য রিয়ালিটি শো একটা খুব ভালো প্ল্যাটফর্ম।
এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে,পরিশ্রম না করেই সহজে বিখ্যাত হওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন করেছেন আপনি। সুতরাং এগুলো কি আপনাকে পীড়া দেয় না?
একদিকে যারা নতুন শুরু করছে, যাদের সে অর্থে কোনও ব্যাকিং নেই- সমাজ মাধ্যম তাদের জন্য খুব ভালো প্ল্যাটফর্ম। সত্যিকারের মেধাবী শিল্পীও কিন্তু এখান থেকে উঠে আসতে পারে। ফলে ট্যালেন্ট বেছে নেওয়াটা আমাদেরই হাতে। অনেকেই আছেন যাদের ট্যালেন্ট কম কিন্তু জাঁকজমকে মোড়া একটা প্যাকেজের সাহায্য়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার ষোলো বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে, আমাকে হয়তো নতুন করে আর কিছু প্রমাণ করতে হবে না। কিন্তু যারা নতুন, তাদের জন্য সমাজ মাধ্যম একটা বড় চ্যালেঞ্জও। কারণ ভার্চুয়াল মিডিয়াতে কম্পিটিশনটাও অনেক বেশি।