টোটা-অনির্বাণ
শীতকাল মানেই ফেলুদা সিনেমা। ওটিটিতে ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ আসছে। আচ্ছা তোমরাও শীতকালে ফেলুদা দেখতে যেতে নিশ্চয়?
টোটা: হ্যাঁ, ফেলুদা পড়া, ফেলুদা বড়পর্দায় এলে হলে দেখতে যাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। আমাদের জেনারেশন সন্দীপ রায়ের ফেলুদা দেখতে যেত। সন্দীপ রায় বেশিরভাগ সময়ই শীতকালে, মানে ডিসেম্বরে ‘ফেলুদা’ রিলিজ করতেন। এটা একটা প্রচলিত ধারা হয়ে গিয়েছে।
অনির্বাণ: হ্যাঁ, আমিও শীতকালে ফেলুদা দেখতে যেতাম ঠিকই। কিন্তু এখন অন্য একটা বিষয় বলব। সেটা হল, শীতকালের শুটিং আমরা গরমকালে কাঠফাটা রোদ্দুরে সোয়েটার, জ্যাকেট পরে করেছি। ছবিটা যখন দেখবেন মানুষ, ভাববেন বাহ! আমিও সোয়েটার পরে আছি চরিত্রও সোয়েটার পরে আছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল শুট করতে।
কোথায় শুট করেছো?
অনির্বাণ: উত্তরবঙ্গে। ডুয়ার্সে। আরও নানান জায়গায়। এর আগেও তোমায় ফেলুদা হিসেবে দেখেছি। আলাদা কোনও প্রিপারেশন লাগে তোমার ফেলুদা হয়ে উঠতে?
টোটা: প্রিপারেশন না, প্যাশনটাই যথেষ্ট। অভিনেতা হিসেবে হোমওয়ার্ক তো দরকার। টাইম লাইনটা বুঝে নিই। গল্প পড়ি বারবার। তারপর সেই শিশুসুলভ আনন্দ, ফেলুদা করছি
ফেলুদা করছি। এই আনন্দে কাজ করি। তাই কাজে প্যাশন আর ভালোবাসাটা দরকার। আগের দুটোতে সৃজিত বলেছিল, এনজয় কর প্রসেসটাকে। এবারেও পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এই কথাই বলেছেন। আর আমাদের ট্রায়োর একটা ভালো বন্ডিং
রয়েছে। এইটাই সব।
ফেলুদাতে জটায়ু। একেনবাবুরও কিন্তু একটা জায়গা হয়েছে।
টোটা: হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমি নিজে একেনবাবুর ফ্যান। আমি বাচ্চা হলে ফেলুদাকে যতটা ভালোবাসতাম, একেনবাবুকেও। আমার মনে হয় বিগত ১৫ বছরে একেনবাবু একটা সাকসেসফুল ক্যারেক্টার। অনির্বাণ দারুণভাবে কাজ করেছে। মানুষ ওকে ভালোবেসেছে ওই চরিত্রে।
আচ্ছা ফেলুদা করার লোভ ছিল কখনও?
টোটা: চরিত্রটা বরাবর করার লোভ ছিল। যতদিন সব্যসাচী ফেলুদা হতেন সাহস হয়নি বলার বা করার। আমি জানি বেস্ট ফেলুদা হচ্ছে। সেকেন্ড বেস্ট কেন দরকার হবে। তাই বলিওনি। তবে এখন করতে পেরে আনন্দ হচ্ছে। ভালো লাগছে।
জটায়ুরূপে সন্তোষ দত্তকে বাঙালি চিরকাল মনে রাখবে। তারপরও বেশ কয়েকজন অভিনেতা জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু অনির্বাণ চক্রবর্তী আবার যখন জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করছেন, কতটা চাপ বা চ্যালেঞ্জ?
অনির্বাণ: আমার কাছে চাপ বা চ্যালেঞ্জ কোনটাই নয়। কারণ আমি অভিনয়টাই করতে এসছি হুট করে। আমি যদি কোনো চরিত্র নিয়ে চাপ অনুভব করি, অভিনয়টাই করতে পারবো না। আমি অভিনয়টাই খুব এনজয় করি। জটায়ুর চরিত্রে সৃজিত যখন আমাকে প্রথম কাস্ট করে আমাদের তিনজনকে একটা কথাই বলেছিল যে, এই চরিত্রগুলো অলরেডি বাঙালির মনে একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। তাই তাদের অনুকরণ না করে তোমাদের মতো করে চরিত্রগুলোকে করো। এটা শুনে আমার অভিনয় করাতে খুব সুবিধা হয়েছে। কারণ, আমি অনুকরণ করতে পারতাম না।
সন্তোষ দত্ত জটায়ুরূপে মাত্র দুটো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আর তাতেই তিনি বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন। আপামর বাঙালি জটায়ু বলতে শুধু সন্তোষ দত্তকেই মানেন, আমিও তাই মানি। তারপরেও অনেক বড় বড় অভিনেতা কিন্তু এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অনুপ কুমার, রবি ঘোষ থেকে শুরু করে অনেকেই। আমি যখন এই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই, আমি খুব আনন্দ করেই আমার কাজটুকু করার চেষ্টা করেছি। তবে আমি এও জানি এই কাজ নিয়ে তুলনা হবে।
টোটাদা তুমি কিছু বলবে এ বিষয়ে?
টোটা: দেখো, আমি একটা কথাই বলবো। আমাদের আগে যাঁরা এই কাজটা করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নমস্য ব্যক্তি এবং ছোটবেলা থেকে আমরাও তাঁদের কাজের ভক্ত। আমরাও তাঁদের কাজ দেখে বড় হয়েছি। ফেলুদা সবার প্রিয়। আমি যখন ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করছি এবং আমরা সবাই আমাদের বেস্টটুকু দিয়ে এই কাজটা করেছি। দর্শকদের সমালোচনা শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত।
বিবর্তনের হাত ধরে আজ ফেলুদা মুঠো ফোনে বন্দী?
টোটা: একদমই তাই। আমাদের ছোটবেলায় আমরা ফেলুদা বইয়ের পাতায় পড়েছি। তারপরে চলচ্চিত্রের পর্দা এবং ফেলুদা শুনেছেন মানুষ বেতারে। সব্যসাচী চক্রবর্তী ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতেন বেতারে। তাঁর সেই ব্যারিটোন ভয়েস। উনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ছোট পর্দাতেও ফেলুদা হয়েছেন। আর এখন ওটিটিতে। তবে একটা কথা বলবো বাঙালি সমাজ যতদিন থাকবে, ফেলুদা ততদিন থাকবে। তবে ফেলুদার বই পড়ে যে রস পাওয়া যায়, তা আর অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায় না।
সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় আর কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়— দুই পরিচালকের সঙ্গে তোমদের কাজ করে কেমন লাগলো?
টোটা: এদের দু’জনের সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যে কথাটা বলতে হয়, এরা দু’জনেই সত্যজিৎ ফ্যানাটি। দু’জনের গল্প বলার ধরন আলাদা। তবে দু’জনেই কিন্তু আমাদের খুব স্বাধীনতা দিয়েছে কাজে।
অনির্বাণ: দেখ, ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ এর আগে মানুষ বইয়ে পড়েছেন। ছবিতেও দেখেছেন। কমলদা কিন্তু সেই পুরনো ব্যাপারটাই ধরে রেখে তাঁর ছন্দে গল্পটা বলেছেন।