আমার মেয়ের কাছে আমি সিনেমার হিরো নই, শুধুই ওর বাবা: চিরঞ্জিত

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রশ্ন: ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’। তোমার নতুন সিনেমা আসছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে টলিউডে তোমার রাজত্ব বহু বছর হল। এই ছবি নিয়ে কিছু বলো।
চিরঞ্জিত: আমি আমেরিকায় ছিলাম। এই ছবির পরিচালক ও স্ক্রিপ্ট রাইটার অর্ণব মিদ্দা আমাকে ফোন করে জানান, একটা বাবা ও মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি যদি করি! তারপর আমাকে স্ক্রিপ্ট পাঠান উনি। স্ক্রিপ্ট পড়ে বাবা-মেয়ের গল্প আমার দারুণ লাগে, তবে আরও একটা ব্যাপার হল, সেই সময় আমিও আমার মেয়ের বাড়িতে। এটা একটা সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার। সব মিলিয়ে গল্পটা আমার ভালো লাগে। হালকা কমেডি। মজার পাশাপাশি একটা দায়িত্বের গল্প।

প্রশ্ন: এই যে বাবা মেয়ের গল্প, আমেরিকায় মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেলিব্রিটিদের পরিবার নিয়েও দর্শকদের মধ্যে একটা কৌতূহল থাকে। কিন্তু তোমার পরিবারের কিছু খবরই থাকে না। নিদেন পক্ষে ছবি পোস্ট!
চিরঞ্জিত: আসলে আমি ফেসবুক ইনস্টা কিছুতেই নেই। তাই আমার ছবি পোস্টের তাগিদ নেই। (হাসি) আর সিনেমা আমার কাছে প্রাধান্য পায়। ওটা আমার কাজ। পরিবার ব্যক্তিগত জীবন, এসব নিয়ে প্রচার বেশি করি না এই আর কী।

প্রশ্ন: তোমার মেয়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন? মেয়ের সিনেমা নিয়ে ইন্টারেস্ট ছিল না?
চিরঞ্জিত: মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভীষণ ভালো। ও আমাকে ছোট থেকে মানে, যখন থেকে দেখেছে, তখন আমি পিক টাইমে। আমার একটা ইনফ্লুয়েন্স আছে বইকি। তবে ওর কাছে আমি ওর বাবা। আর সিনেমা নিয়ে ওর তেমন ইন্টারেস্ট ছিল না। আমি চেয়েছি, আমার মেয়ে তার মনোমত কাজ করুক। তাই কখনও সিনেমা করা নিয়ে কিছু বলিনি। ও নিজের জীবন নিজের মতো সাজিয়েছে। তবে ও খুব সিনেমা দেখে। ভালো ভালো সিনেমা দেখে। আমাকে আবার সাজেস্ট করে, এটা দেখো, ভালো। ওটা দেখো।


প্রশ্ন: প্রায় ৫০ বছর হল এই ইন্ডাস্ট্রিতে। বহুরূপে পেয়েছি তোমাকে। এখন তো লিগ বদলাচ্ছো। ওটিটি কাঁপাচ্ছো। সিনেমায় অন্য চরিত্র। কেমন লাগছে?
চিরঞ্জিত: কাজ করতে ভালোই লাগে। আর এখন বয়স বেড়েছে। বয়স অনুসারে বাবা দাদুর রোল পাচ্ছি। নীরেন ভাদুড়ি করছি। আসলে সৌমিত্রদা চলে গিয়েছেন, পরাণদা করতে পারছেন না। আমিও বুড়ো হয়েছি, তাই আমার কাছে এসব রোল আসছে। তবে আবারও বলছি কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমি এনজয় করি। এ কথা ঠিক আমি একটু বেছে কাজ করি। তা না হলে, ৫০ বছরে ৫০০ ছবি হওয়ার কথা ছিল। সেখানে হয়তো ২০০, কী তার বেশি হয়েছে।

প্রশ্ন: অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি। তুমি রাজনীতিটাও খুব সুন্দর করে সামলাও। তোমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই?
চিরঞ্জিত: না, আমি মানুষের জন্য কাজ করি। গল্প করি। মিটিং করি। কাজের জন্য টাকা দিই। রাজনীতির কথার পাশাপাশি সাধারণ আলোচনা করি। বারাসাতের মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসেন। কখনও হারিনি। এবারে মমতাকে বলেছি, আর দাঁড়াব না। ‘অনেক দেরি আছে। পরে কথা বলব’ বলে কাটিয়েছে। তবে আমার এখন হাতে, কোমরে খুব ব্যথা। এবার আর পারব না বোধহয়। আগে সৌমিত্রদা বলতেন। যখন কথা হত বলতেন, ‘কোমরে কী রে, আমার সারা শরীরে ব্যথা’। ফিজিও করে শুটিংয়ে আসতেন। মজার মানুষ ছিলেন।

প্রশ্ন: তোমার ছবি ইফিতে ওপেনিং ফেস্টিভ্যালে হবে। কেমন লাগছে।
চিরঞ্জিত: অবশ্যই খুব ভালো লাগছে।

প্রশ্ন: অর্ণব নতুন পরিচালক। ঠিক কী কারণে এই ছবির জন্য হ্যাঁ বললে?
চিরঞ্জিত: অল্প কাজ করেছেন ঠিকই। কিন্তু এই গল্পটা দারুণ লিখেছেন। শেষের দিকে কিছু সাজেশন থাকলেও, গল্পটা অসাধারণ সাজিয়েছেন। অনেক শেড আছে। মানুষ রিলেট করতে পারবে।

প্রশ্ন: রুক্মিনীর সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল? যদিও সেই ‘চ্যাম্প’ থেকে তোমাদের পরিচয়।
চিরঞ্জিত: ও খুব ছটফটে। ফুল অফ লাইফ। খুব ভালো লাগে কাজ করতে ওর সঙ্গে। ছবিতে আমি ওর অবাধ্য বাবা। ও যা বলে তার উল্টোটা করি। কিন্তু দু’জনের জন্য দু’জনের ভিতরে ভীষণ ভালোবাসা।

প্রশ্ন: এখন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক সমস্যার মধ্যেও ছবি রিলিজ করছে, এগোচ্ছে। তোমাদের সময়ও সমস্যা হত। সিনিয়র হিসেবে এ বিষয় নিয়ে কী বলবে।
চিরঞ্জিত: অবশ্যই হত। এখন পলিটিক্যাল প্রভাব একটু বেশি পড়েছে। আগেও ছিল। এতটা নয়। টেকনিশিয়ান ছাড়াও ছবি হয়। কিন্তু সেগুলো এক্সপেরিমেন্টাল বা ফেস্টিভ্যালের জন্য, কিংবা ইউটিউবের জন্য। যখন এমন ছবি প্রোডিউসারের কাছে চলে যায়, তখন কর্পোরেট হয়ে যায়। আর তখনই টাকা দিতে হয়। এসব মাথায় রেখে ছবি বানাতে হবে। এইসব ঝামেলা আছে। তবে কাজ ভালো হলে মানুষ দেখবেন। এটাই আসল।

প্রশ্ন: ছবি আঁকা তো তোমার নেশা। সময় হয়?
চিরঞ্জিত: একটা ক্যানভাসে রং লাগাতে পারিনি কাজের চাপে। রং কিনে রেখেছি। সময় হয়নি। আঁকা আসলে আমার শান্তি। ভালো লাগে আঁকতে।

প্রশ্ন: কী বলবে ছবি নিয়ে দর্শকদের?
চিরঞ্জিত: আমাদের ছবিটা দেখুন। হলে গিয়ে দেখুন। বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ালে দেখতে পাবেন না। সামনে বসে ছবি দেখুন। জানান কেমন লাগল।