আত্মঘাতী হলেন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত

সুশান্ত সিং রাজপুত (File Photo: IANS)

আবার একবার মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ ছুঁয়ে গেল বি-টাউনকে। ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের দেহ। রবিবার সকালে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় তাঁর নিজের ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস লাগানো দেহ দেখে বাড়ির পরিচারিকা ফোন করে পুলিসে খবর দেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান পুলিশের। তবে ঠিক কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা উঠে আসছে।

শোনা যাচ্ছে, বেশ কিছু ছবি মুখ থুবড়ে পড়ায় কিছুদিন ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনও কারও সঙ্গেই কথা বলতেন না সুশান্ত। জানিয়েছে তাঁর পরিচিতরাই। তার এই অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। ব্যক্তিগত কিছু সম্পর্ক থাকলেও আত্মহত্যার কারণ এখনও ধন্দে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, সপ্তাহ খানেক আগেই সুশান্ত সিংয়ের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান মুম্বইয়ের মালাডের একটি বহুতল থেকে ঝাঁপ দেন। সে খবরে ভেঙে পড়েছিলেন সুশান্ত। তবে কী কারণে সুশান্ত নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত সুশান্তের ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি বলেই জানাচ্ছে পুলিশ।


১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাটনায় জন্ম সুশান্ত সিংহ রাজপুতের। পরে দিল্লিতে চলে আসে তাঁর পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ে এবং থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। সম্ভবত, পাকাপাকিভাবে অভিনয়ের জগতে আসার জন্যই নাচও শিখতে শুরু করেন।

অভিনয়ের তাগিদে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ না করেই মুম্বইয়ে চলে আসেন সুশান্ত। সেখানে সালে প্রথম একতা কাপুরের প্রযোজনায় ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ পান। যদিও সেখানে তাঁর অভিনয়ের সুযোগ ছিল সীমিত। তবে সেখান থেকেই একতা কাপুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাঁর। সেই সূত্রেই ২০০৯ সালে ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

সিরিয়ালে অভিনয় করতে করতেই ‘জরা নাচকে দিখা’ এবং ‘ঝলক দিখলা যা’র মতো রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। আর এই সময়টাই ছিল সুশান্তর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। টিভি সিরিয়াল থেকে বলিউডের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন সুশান্ত। সেই মতো ‘পবিত্র বিস্তা’র কাজ ছেড়ে দিয়ে বিদেশে চলে যান সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করতে। সেখান থেকে ফিরে অভিষেক কপূরের ‘কাই পো চে’ ছবির জন্য অডিশন দেন।

এর পর একে একে ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘পিকে’, ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র মতো ছবিতে অভিনয় করেন সুশান্ত। ভারতীয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চরিত্রে তাঁর বায়োপিক ‘এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-তে তাঁর অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে।সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়োয়। ‘কেদারনাথ’ ছবিতে তাঁরই বিপরীতে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় সারা আলি খানের।

চেতন ভগতের ‘দ্য থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’ বইয়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘কাই পো চে’-তে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেন রাজকুমার রাও এবং অমিত সাধও। ছবিতে সুশান্তের অভিনয়ের প্রশংসা কুড়োয়। বাণিজ্যিকভাবেও ছবিটি সফল হয়।

২০১৭ সাল থেকে তাঁর সময় কিছুটা খারাপ চলতে থাকে। তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘রাবতা’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর গত বছর সুশান্তের তিনটি ছবি মুক্তি পায়। তার মধ্যে ‘ছিছোড়ে’ জনগনের আশীর্বাদ পেলেও, ‘সোন চিড়িয়া’ বক্সঅফিসে মুখথুবড়ে পড়ে। ‘ড্রাইভ’ ছবিটি সরাসরি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাবার পর সব জায়গা থেকেই নেগেটিভ রিভিউ পায় ছবিটি। তাতেই সুশান্ত ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

তবে ব্যক্তিগত জীবনেও বহু টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন সুশান্ত। সিরিয়ালে অভিনয় করার সময় অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখন্ডের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দু’জনে লিভ ইনও করতেন। কিন্তু সুশান্ত বলিউডে পা রাখার কিছু দিনের মধ্যেই সে সম্পর্ক ভেঙে যায়। সম্প্রতি অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল।