এই মুহূর্তে বাংলা ছবির জগৎ তোলপাড়। একদিকে পুজোর ছবিগুলোর শেষ বেলার প্রচার তুঙ্গে আর অন্যদিকে তরজা অভিনেতা এবং প্রযোজকের। পুজোয় আসতে চলেছে আবীর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘যত কান্ড কলকাতাতেই’ এবং ‘রক্তবীজ ২’। আবীর ‘যত কান্ড…’ প্রযোজক ফিরদাউসুল হাসানকে জানান তিনি ছবির প্রচারে থাকতে পারবেন না কারণ তিনি শুধুমাত্র ‘রক্তবীজ ২’ প্রচারের শর্তে চুক্তিবদ্ধ। আর ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়েই প্রযোজক ফিরদাউসুল হাসান কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।
পুজোয় রিলিজ ভাবনা নিয়ে প্রযোজক বলেন, “আমরা ২০২৩-এর ২৪ অগস্ট ঘোষণা করেছিলাম, ২০২৪-এর পুজোয় ছবিটা আসবে। তখনও শুটিং শুরু হয়নি। আমরা সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরু করি। এবার দুটো প্রেক্ষিত হতে পারে। এক, যদি আমি ধরি যে আমার ছবি শুরুর আগেই আবীর চুক্তি করে নিয়েছিলেন, তাহলে তাঁর তখনই আমাকে বলা উচিত ছিল যে, পুজোতে রিলিজ করলে আমি ছবিটা করতে পারব না। দ্বিতীয়ত, যদি ধরি আবীর আমার ছবি শেষ হওয়ার পরে চুক্তি করেছেন, তাহলে, ওঁর আমাকে জানানো উচিত ছিল যে এরকম একটা চুক্তির অফার পাচ্ছি।”
কিন্তু প্রযোজক এবারের পুজোয় রিলিজ কথা জানিয়েছিলেন? প্রযোজক জানালেন, “২০২৪ এর মার্চ মাসে আমরা আবীরকে বলি ছবিটা পুজোয় রিলিজ করব। যখন ওঁকে ডাবিংয়ের জন্য বলা হয়, তখন প্রথমে ডেট দেননি। তারপরে নিজেই আমাকে বলেন, এখন রিলিজ কোরো না হাসানদা, পুজোতে আমার ‘বহুরূপী’ আসছে। আমি ওঁর অনুরোধটা রাখি। আমি তখনই ঠিক করি, এই পুজোয় না করলে পরের পুজোয় রিলিজ করব। আবীর অনুরোধ না করলে জিনিসটা অন্যরকম হত।”
কিন্তু আবীর বলছেন, ছবি তৈরি ছিল না। ২০২৫ এর ৩০ অগস্টও তাঁকে ‘প্যাচ ডাবিং’ করতে হয়েছে! ফিরদাউসুল জানান, “আমি এক বছর ধরে ছবি তৈরি করে ফেলে রাখব কেন? সবাই শেষে এসেই ফিনিশিং টাচ দেয়, যদি না ফেস্টিভ্যালে যায়। ফেলে রাখার একটা রিস্কও তো আছে। ছবিটা তো লিক হয়ে যেতেও পারে। তাহলে আমি সেটা কেন করব? তাই আমার অন্যান্য ছবিগুলোতে মনযোগ দিয়েছি। কিন্তু জোর গলায় বলছি, অনুরোধটা আমি রেখেছিলাম।”
ফিরদাউসুল আরও বলেন, “আরেকটা কথা, ‘প্যাচ ডাবিং’ কিন্তু প্রফেশনাল অভিনেতার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। এটা করে কোনোভাবেই প্রযোজক বা পরিচালককে ধন্য করে দিচ্ছেন, তা নয়।”
কথা উঠছে যে ইচ্ছাকৃতভাবে ‘প্যাচ ডাবিং’টা করিয়ে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে। সরাসরি নাকচ করে ফিরদাউসুল বলেন, “শনিবার, ৩০ তারিখে ‘প্যাচ ডাবিং’ করবেন বলে আবীর নিজেই ডেট দিয়েছিলেন। তিনি বিকেল ৫ টায় ডাবিং করেন। আর ১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র সাংবাদিকদেরকে পাঠানো হয়েছে তার অনেক আগেই। আমার তো ভাবা উচিত ছিল, কেউ যদি তাঁকে বলেন, তিনি হয়ত ডাবিং করতে আসবেন না!”
কিন্তু, ব্যাপারটা সাংবাদিক সম্মেলন করে তিক্ত না করার উপায় কি প্রযোজক হিসেবে তাঁর ছিল না? সপাট উত্তর, “না। ছিল না। প্রযোজক হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে। অনেক সাংবাদিকই আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, আবীর কেন আমার পোস্ট শেয়ার করছেন না! আবীর কি প্রমোশন করবেন না! কেন? আমার মনে হয়েছে, কনফিউশনটা ক্লিয়ার করে দেওয়া খুব দরকার। না হলে, প্রত্যেক মিডিয়া যে যার নিজের মতো লিখতে থাকবে। কেউ হয়ত লিখবে, আবীরের ছবিটা দেখে ভাল লাগেনি সেই কারণে নিজেকে যুক্ত রাখতে চাইছেন না। কেউ বলতে পারেন, আবীর টাকা পাননি তাই আসছেন না। সেটা অভিনেতা যখন খোলসা করলেন না, আমাকে করতে হল।”
কিন্তু চুক্তি বিতর্ক তো এই ছোট ইন্ডাস্ট্রিতেও দুই প্রধান প্রযোজনা সংস্থার সম্পর্কে ছাপ ফেলবে? ফিরদাউসুল প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই বলেন, “না। আমি একবারও বলিনি যে অন্য প্রযোজনা সংস্থার এই ব্যাপারে কোনো দায় আছে। এখনও বলছি, তাঁদের কোনও দোষ নেই। আবীর চুক্তি করেছেন। আমি তো বলতে পারি, আবীর আমার সঙ্গেও পুজোয় রিলিজ না করানোর চুক্তি করে নিলেন না কেন? তিনি তো অন্ধকারে রেখেছেন। আমি তো বলতেই পারি যে উনি ইচ্ছে করেই আমার সঙ্গে চুক্তিটা করেননি, যাতে লুপহোলস্ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন।”
কিন্তু চুক্তি, ঘোষণা আর সাংবাদিক সম্মেলনের বেশ খানিকটা গ্যাপ কেন? প্রযোজক জানালেন, “আমরা যখন এ বছরে জুনে প্রথমবার ঘোষণা করলাম পুজোতে ছবিটা আনব, তখনই ওঁকে অফিসিয়ালি ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম যে আমাদের ছবিটা রিলিজ করছি। আবীর আমাকে ফোন করেছিলেন। তারপরে আমরা বসেও ছিলাম।ওঁকে বলি, জানি তোমার চুক্তি রয়েছে, তুমি প্রমোশন করতে পারবে না। কিন্তু তুমি ট্রেলার লঞ্চ আর প্রিমিয়ারে অন্তত এসো। দরকার হলে বোলো, আমি তোমার প্রযোজকের সঙ্গে একবার বসব। আমাকে ওঁর সেক্রেটারি বললেন যে আবীর একটা প্যাচ শুটে বাইরে আছে, অ্যারেঞ্জ করছি। জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এই ব্যস্ততার পর্ব চলেছে। যখন অগস্টের শেষের দিকে বললাম যে আমি প্রিমিয়ারের ডেট করছি ২৪ সেপ্টেম্বর, তুমি আসবে তো? তখন বলা হল, টেলিভিশন শোয়ের শুট চলছে, তারপরে বলা হল পুজো পরিক্রমা আছে। আমার মনে হল, আমি তো ভিক্ষা করছি না! এই কথাটা তো, জুন মাসেই আমাকে বলতে পারতেন। সবশেষে আমি নিজে সরাসরি আবীরকে মেসেজ পাঠিয়ে জানাই আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। বলেন, ব্যস্ত আছি, বাড়ি ফিরে ফোন করব। জানাই, আমি ওঁর ফোনের অপেক্ষা করব। কিন্তু তারপরেও উত্তর না পেয়ে আমাকে বাধ্য হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকতে হয়েছে। “তবে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন কিন্তু এই ঘটনা তুলে দিয়ে গেল, প্রফেশনালিজমে এখনও কতটা পিছিয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি? এর উত্তর হয়ত সত্যিই আমাদের কাছে নেই।