আন্তর্জাতিক মাইক্রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কলকাতার ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরের মুখোমুখি

পরবর্তী সময়ে আমরা মুখোমুখি হলাম কমলিকা দত্তের সঙ্গে যিনি একজন প্রতিযোগী থেকে এই মুহূর্তে আই এম এফ এফ কলকাতা ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছেন। তিনি নিজের এই জার্নি সম্পর্কে আমাদের সাথে আলোচনা করেন।

১. কলকাতা ইন্টার ন্যাশন্যাল মাইক্রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সাথে আপনি কিভাবে যুক্ত হলেন?

— যুক্ত হয়েছিলাম একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাড দেখি। তারপর স্ক্রিপ্ট পাঠিয়েছিলাম সিনেমাটিক স্টোরি রাইটিং কম্পিটিশনে। এভাবেই আসা।


২. আপনার পূর্বাপর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটু সংক্ষেপে জানতে চাই।

—- পূর্ব অভিজ্ঞতা তো বললামই। কনটেস্টট্যান্ট হিসেবে অংশগ্রহণ। তারপর এডিটিং এ যুক্ত ছিলাম। কিন্তু পরবর্তী অভিজ্ঞতা এক্কেবারেই আলাদা। কারণ অংশগ্রহণ, এডিটিং এগুলো এক ধরনের বিষয় আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রোল প্লে করা সম্পূর্ণ অন্যরকম। এটি সত্যিই গুরু দায়িত্ব কারণ এখানে বহু মানুষ ও তাদের শৈল্পিক সত্তা যুক্ত।

যদিও যে কনসেপ্টের ওপর এই পুরো বিষয়টা দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আমাকে আগেও প্রভাবিত করেছিল। থ্যাংকস টু মিঃ নীলাঞ্জন ভৌমিক, চেয়ার পার্সন অফ দ্য ফেস্টিভ্যাল, ফর ইনিশিয়েটিং সাচ আ স্ট্রাইকিং আইডিয়া। তবে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করতে হবে ভাবিনি। আমাকে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে ডিক্লেয়ার হয়ত এই চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি করেছেন।

তবে প্রকৃত অর্থে আমাকে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর হতে সাহায্য করেছেন বা বলতে পারেন বানিয়েই ছেড়েছেন আমার সতীর্থ বিরোধীরা।
একজন ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরকে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং নানামুখী সমস্যার সমাধান করতে হয়, সব ক্ষেত্রগুলির মধ্যে একটা সমতা রক্ষা করে।

তাই সামগ্রিকভাবে এটা টাফ টু হ্যান্ডেল। তবে আমার কো ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর মিঃ বিভাস গুহ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মিঃ ভাস্কর ব্যানার্জী দুজনেই কো- অপারেটিভ। সুতরাং পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব হয়নি। এখন একটা চলমান অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেটা একদিকে কঠিন আবার অন্যদিকে আমাকে সমৃদ্ধও করছে।

৩. ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কবে থেকে কিভাবে আপনি যুক্ত হলেন?

—- বিষয়টা একটু ঘুরিয়ে বলি? যুক্ত হয়েছি আগে, পরে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর। আসলে কেউ যদি যুক্ত হওয়ার মত করে যুক্ত হয়ে যান তাহলে ধীরে ধীরে তাঁর ওপর হয়ত দায়িত্ব এসেই যায়। আর এইভাবে যুক্ত হওয়াটা যখন নিজের অজ্ঞাতে, পরিকল্পনাহীন ভাবেই হয়ে যায় তখন সেটাকে যুক্তিকরণ না বলে সংযুক্তিকরণ বলাটাই শ্রেয়।
ধরুন, আমি যদি এই দায়িত্ব কখনও কাউকে হস্তান্তর করতাম, তাহলে কি তাঁর নাম, ধাম, বয়স, তিনি কত বিখ্যাত –এসব দেখে করতাম? নিশ্চিত নয়। অন্তত দুটি দিক তো অবশ্যই বিবেচনা করব।
এক, যাঁর মধ্যে একটা প্রকৃত শিল্পী সত্তা আছে এবং যিনি শিল্পের প্রতি ট্রুলি কমিটেড এন্ড ডিভোটেড, সেই সঙ্গে ডিসিসিভ।
আর যেটা বলব সেটা অন্যভাবে নেবেন না। যিনি শিল্পের স্বার্থে, তাঁর কমিটমেন্ট রক্ষার ক্ষেত্রে কাউকেই পরোয়া করেন না, এমনকি নিজেকেও না।
যাঁরা আমাকে নির্বাচন করেছেন তাঁরাও নিশ্চয়ই কোনো না কোনো যুক্তির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা তো তাঁরাই ভালো জানবেন, তাঁরা কেন এই জায়গায় আমাকে সিলেক্ট করলেন।

৪. পুরো আয়োজনে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরসদের ভূমিকা কি? কিভাবে কো-অর্ডিনেশন করছেন?

— ভূমিকা তো জিনিসপত্র কেনা থেকে প্যান্ডেল বাঁধার। তার সঙ্গে আবহাওয়া কেমন থাকবে, রোদ উঠবে কিনা, বৃষ্টি হবে কি হবে না, হলে কি ব্যবস্থা নিতে হবে, মানে শুরু থেকে শেষ, আসা থেকে যাওয়া পর্যন্ত –স্বস্তি নেই। স্টেজ ডেকোরেশন থেকে সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট–
এভরিথিং। অবশ্য এগুলো কারো পক্ষে একা করে ওঠা তো সম্ভব নয়। হোল টিম এখানে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেন।
আর কো অর্ডিনেশন বলতে বিষয়ভিত্তিক দায়িত্ব আলাদা করে দেওয়া আছে। কিন্তু ওভারঅল খতিয়ে দেখা এবং পুরো আয়োজনটা যাতে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এগিয়ে চলে সেদিকে খেয়াল রাখা। আমি সমস্ত সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই যে তাঁরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন, এমনকি এই কোভিড সিচুয়েশনেও। সত্যি বলতে আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন — ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারিজ, এডিটরস এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট রাইটারস এন্ড ফিল্ম মেকারস — এঁদের সহযোগিতা ছাড়া ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর একটা শব্দবন্ধ মাত্র।

৫. এই মুহুর্তে কি কাজ থেমে আছে? না প্রস্তুতি চলছে?

— কাজের শেষ নেই। সুতরাং থেমে থাকার প্রশ্নই নেই। আর এই ফেস্টিভ্যাল দুটো পার্টে হয় । সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে কাজ করে করে শেষ করা যায় না। প্রস্তুতি প্রতিনিয়ত চলছে। তবে একটা ফেভারেবল সিচুয়েশনের অপেক্ষায় আমরা সবাই। কারণ সবার নিরাপত্তার কথাটাও তো ভাবতে হবে।।

৬. বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে কি আপডেট দেবেন?

—- আমরা সবসময়ই সিস্টেমেটিক আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। এ বছরও দিয়েছি। কিন্তু এই মুহুর্তে কি পরিস্থিতি সে তো সকলেই জানেন। কোভিড সিচুয়েশনে আমরাও কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তাই ফেস্টিভ্যালের ঠিক আগে আগে যে ধরনের আপডেটগুলো দেওয়া হয় সেগুলো দিতে হয়ত আমরা আর একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি। কারণ অবিবেচকের মত ডিক্লারেশন দেওয়ার তো কোনো মানে হয় না। তাতে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা হবে।

৭. একজন অংশগ্রহণকারী থেকে শুরু করে আজ এই দায়িত্বে – এই পুরো জার্নিটায় কি ধরনের চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয়েছে বা হচ্ছে?

—-দেখুন চ্যালেঞ্জ অ্যাকচুয়ালি দু’ধরনের। একটা হল নিজের সঙ্গে নিজের। একজন ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরকে একটা পুরো ফেস্টিভ্যালের রূপরেখা তৈরি করতে হয়, যে কোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে শুধু পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়েই সবসময় হয়না। বিকজ দ্য ফর্মস এন্ড শেপ্স আর এভারচেনজিং। তাই কিছুটা অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিছুটা দূরদর্শিতা, সাহস, কিছুটা অনুমানও মেশাতে হয়। অনেক সময় অনস্পট ডিসিশনও নিতে হয়। সর্বোপরি মাথায় রাখতে হয় যে কোনো সিদ্ধান্তই কিন্তু সার্বিক স্বার্থে। সুতরাং এটা এক্সপেরিমেন্টাল এবং সেই সঙ্গে বেশ চ্যালেঞ্জিং।

আর একটা চ্যালেঞ্জ হল বাহ্যিক বিরোধিতা বা ক্রিয়েটেড সমস্যা। দেখুন মানুষ যখন, তখন আমার শত্রু, মিত্র দুই-ই থাকবে। শুভাকাঙ্ক্ষীও যেমন থাকবে অ-শুভাকাঙ্ক্ষীও থাকবে। যে কোনো সিদ্ধান্তেরই ত্রুটি ধরার লোকও থাকবে। আবার অ-গঠনমূলক সমালোচনা করার লোকও থাকবে। সংস্কৃতির বিপরীতে অপসংস্কৃতিও থাকবে। তবে আই ডোন্ট বদার টু ফেস দোজ মিনিংলেস চ্যালেঞ্জেস কারণ আমি মনে করি তারা নিশ্চিত রূপে শৈল্পিক চেতনা থেকে অনেক দূরে বসবাস করেন। ভুলভাল বিরোধিতা করতে গিয়ে যদি শিল্পের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটান তাহলে সেটাতে সামাজিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেরও ক্ষতি করছেন।

 

৮. অণুছবি চলচ্চিত্র উৎসব অন্য ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের থেকে কোথায় আলাদা?

— কনসেপ্ট ও প্রোজেকশন দু’দিক থেকেই এই চলচ্চিত্র উৎসব আলাদা।
এর আগে থেকেই হয়ত অনেক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে এবং চলছেও, কিন্তু সিনেমাটিক স্টোরি রাইটিং কম্পিটিশন এ যাবৎ কোথাও দেখিনি। এইভাবে অনেক নন সিনেমাটিক সাবস্ট্যান্সকেও ফিল্ম উপযোগী করে তুলতে পারছি আমরা। ফলে একটা স্টোরির মেটামরফোসিস ঘটিয়ে গল্পের শরীর ছেঁকে সিনেমাটিক আইডিয়া আবার সিনেমার শরীরকে ডিফারেন্ট ফ্লেভারের গল্পে সমৃদ্ধ করা– এই টু ফোল্ড পার্সপেক্টিভ নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।
প্রোজেকশনের ক্ষেত্রেও দেশ বিদেশ থেকে আসা ফিল্মগুলিকে যে পরিবেশগত ও পরিকাঠামোগত মান বজায় রেখে প্রদর্শন করা হয়, সেখানেও তফাৎ আছে।
এছাড়া আদর্শগত কিছু পার্থক্যও আছে। সেটা এত অল্পে বলা সম্ভব নয়।

৯..ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

— দেখুন বর্তমানের মধ্যেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিহিত থাকে। ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারী
স্ক্রিপ্ট রাইটার ও ফিল্ম মেকারদের ক্রিয়েটিভ দক্ষতা, ফেস্টিভ্যালের উদ্দেশ্য অনুধাবনের মাধ্যমে বিষয়ের সাথে তাঁদের একাত্ম হয়ে ওঠা — এভাবেই তো আগামীর অবয়ব ফুটে উঠবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা তো অনেকটাই তাঁদের ওপর নির্ভর করছে।
আমরা তো পরিকল্পনার রূপকার মাত্র। তবে, পাশাপাশি আমাদেরও কিছু নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করার ইচ্ছে আছে । তবে সেগুলো এখনো আভ্যন্তরীণ আলোচনা সাপেক্ষ।

 

১০.উৎসবের প্রাককালে একজন ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে সবার উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

— সবাইকে আমার তরফ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আপনারা যেহেতু শিল্প সংস্কৃতি ও মৌলিক ভাবনার সঙ্গে যুক্ত আছেন, আশা করব আপনারা সুস্থ চিন্তার মানদণ্ডে, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে এবং নিরপেক্ষ যুক্তিবোধের নিরিখে অণুছবি চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে আলিঙ্গন করবেন, কোনোরকম কৃত্রিম প্রভাব ব্যতিরেকে। কারণ জাহাজের যাত্রী তো আপনারাই।
আপনারা ছাড়া তো এই ফেস্টিভ্যাল সম্ভব নয়। আপনাদের সৃজনশীলতা, সহযোগিতা, শুভকামনা তার সঙ্গে আমাদের ভাবনা ও পরিশ্রমের ফসল যেন সার্বিক রূপ নিয়ে সাফল্যমন্ডিত হয় এটুকুই বলব।