তেল ও তেলজাতীয় খাদ্যগ্রহণ না করে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে হৃদরোগ থেকে মুক্তি সম্ভব

হার্টের পক্ষে বিষজাতীয় খাবার (ছবি-Getty Images)

হৃদরোগ।বিশেষত ধমনীগত হৃদরােগে বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন।হৃদরােগ বর্তমানে পৃথিবীতে অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই রােগের অনেকগুলি ঝুঁকি বা কারণ থাকলেও অতি সাধারণ কারণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণ প্রণালী।একটু সতর্ক হয়ে চললে ও বেশ কয়েকটি নিয়ম অবলম্বন করলে এই রােগের হাত থেকে  অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তেলশুন্য খাদ্য প্রয়ােজন কেন?

ভারতীয় সংস্কৃতিতে খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।উৎসব এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে তেল এবং ঘি দিয়ে তৈরি আড়ম্বরপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়।এইসব খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে।ফলে  দৈহিক  ওজন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়।বেশি চর্বিযুক্ত খাদ্য দেহের চর্বির পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয় এবং একথা সর্বজনবিদিত যে,চর্বিযুক্ত খাবার পরিপাক হতে অনেক বেশি সময় নেয়  আর তার ফলেই দৈহিক স্থূলতা ক্রমশ বেড়ে যায়।দেহের এই বাড়তি চর্বি রক্তে মিশে রক্তে ফ্যাটের ভাগ বাড়িয়ে তােলে এবং ধমনীগুলির মধ্যে থিতিয়ে পড়ে ধীরে ধীরে জমতে থাকে এবং ধমনীর মধ্যে অবরােধ সৃষ্টি করে।তাই স্বাভাবিক অবস্থাতেও চর্বি জাতীয় খাদ্য নিয়মমাফিক গ্রহণ করা উচিত।


তেল জাতীয় খাদ্য কীভাবে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে

সমস্ত ধরনের তেলেই শতকরা ১০০ ভাগই চর্বি এবং ভােজ্য তেলে বেশিরভাগই আছে ট্রাইগ্লিসারাইডস।হৃদরােগের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ‘ব্লকেজ ‘।অন্যভাবে বলা যায় ,হৃদপিণ্ডে রক্ত সংযােগকারী নালিগুলির মধ্যে চর্বিজাতীয় পদার্থ সঞ্চিত হওয়া বা জমতে থাকা এই চর্বিজাতীয় পদার্থ বা ফ্যাট দুধরনের হয়।একটি হচ্ছে বেকালেস্টেরল এবং অপরটি হচ্ছে ট্রাইগ্লিসারাইডস।যখন আমরা খাদ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমাণে তেল গ্রহণ করি,তখন আমাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর বেড়ে যায় এবং পনি যখন রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর বিশেষ স্তর ছাড়িয়ে যায়(প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্ত ১৩০ মিলিগ্রাম বেশি হয়)তখন অবরােধের আকারও বাড়তে থাকে সেই কারণে যেকোনও তেল হৃদপিণ্ডের পক্ষে ক্ষতিকর।

বর্তমানে এই ধরনের সম্ভাবনাকে উত্তরােত্তর বাড়িয়ে দেয় বর্তমানের যান্ত্রিক জীবন বা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল জীবন বা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল জীবন এবং ক্রমহ্রাসমান কায়িক শ্রম।দিনের বেশির ভাগ সময়টা আমরা কাটাই গাড়ি চড়ে বা কম্পিউটারে কাজ অথবা টিভি দেখে কিংবা আড্ডা,গল্প করে।ফলে দৈহিক শ্রম সেরকম হয়না।এই কারণে খাদ্য হজমে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।

ট্রাইগ্লিসারাইডস বস্তুগুলি কী?

ট্রাইগ্লিসারাইডস হচ্ছে মূলত ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় পদার্থ। আমরা যেসব চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ করি, তার  ৯৯ শতাংশই ট্রাইগ্লিসারাইডস এবং মাত্র ১ শতাংশ  কোলেস্টেরল।সমস্ত প্রকার উদ্ভিজ ফ্যাট থেকে যেমন সানফ্লাওয়ার তেল,সর্ষের তেল,নারকেল তেল এবং বনস্পতি প্রভৃতি ট্রাইগ্লিসারাইডস ছাড়া আর কিছু নয়।পশুজাত ফ্যাটের মধ্যে অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী ট্রাইগ্লিসারাইডস তৈরি হয় গ্লিসারাইডের একটি অণুর সঙ্গে ফ্যাটি অ্যাসিডের তিনটি অণুকে যুক্ত করে।অতএব যারা অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বিজাতীয় বা তেলযুক্ত খাবার খান তাদের পক্ষে হৃদরােগের সম্ভাবনা প্রবল থাকে।এমনকী হৃদযন্ত্র বিকল হতে পারে।ফল মৃত্যু।

মনাে স্যাচুরেটেড তেল কী ?

ফ্যাটি অ্যাসিডের শৃঙ্খলের মধ্যে থাকে কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু।শৃঙ্খলের আকারে যুক্ত প্রত্যেকটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে দুটি করে হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত থাকে।যখন একটি হাইড্রোজেন পরমাণু এই ফ্যাটি অ্যাসিডের চেন বা শিকল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়,তখন ওই ফ্যাটি অ্যাসিডকে মােনাে স্যাচুরেটেড তেল বলা হয়।এই ধরনের সব তেল ক্ষতিকারক এবং কোলেস্টেরলের মতাে ধমনীতে অবরােধ সৃষ্টি করে।যেমন অলিভ অয়েল।

ঘি খাওয়া কি উপযুক্ত ?

ভারতের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে যে ঘি খেলে শরীর শক্তি ও পুষ্টি দুটোই পায়।এই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়।ঘি হচ্ছে সম্পৃক্ত ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ।কোলেস্টেরল ধমনীতে অবরােধ সৃষ্টি করে।সেজন্য অতিরিক্ত ঘি খাওয়া যেমন উচিত নয়।ঠিক উচিত নয় হৃদরোগীদের ঘি খাওয়া।এক্ষেত্রে একদমই ঘি খাওয়া যাবে না।

মাছের তেল কি খাওয়া যেতে পারে?

এটি একটি অতি সাধারণ ধারণা যে , মাছের তেল হৃদরােগীদের পক্ষে যথেষ্ট ভালাে,কারণ এতে বেশি পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।মনে রাখা প্রয়ােজন যে,মাছের তেল আসে মাছ থেকে অর্থাৎ প্রাণীজ উৎস থেকে,যা সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল পরিপূর্ণ হয় এবং কোলেস্টেরল হৃদরােগের অন্যতম কারণ।এই রােগে ডাল,খাদ্যশস্য খেতে পারা যায় অনায়াসে।এটি উদ্ভিদ উৎস এবং এখান থেকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়,যা হৃদরােগের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী।তবে মাছের তেল একেবারেই খাবেন না।

মার্জারিন খাওয়া উচিত

মার্জারিনে শতকরা ৭৮ শতাংশ সম্পৃক্ত তেল বা ফ্যাট থাকে,যা খাদ্যশ্রেণিভুক্ত বস্তু নয়।হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত করে একে সম্পৃক্ত ফ্যাটে পরিণত করা হয়। এগুলি যে শুধু বিভিন্ন ধরনের হৃদসমস্যার সৃষ্টি করে তাই নয়,বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার রােগেরও সৃষ্টি করে।এই জন্য মার্জারিন একেবারে বর্জন করা উচিত।