যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার প্রকৃত কারণ খুঁজে দেখতে মাঠে নামল মুখ্যমন্ত্রীর গড়া তদন্ত কমিটি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা রবিবার স্টেডিয়ামের মাঠ ও গ্যালারির একাধিক জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে বিচারপতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো বা দায় নির্ধারণ করা ঠিক হবে না।
স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিচারপতি অসীম রায় বলেন, ‘এখনই কাটাছেঁড়া করবেন না। আমরা সক্রিয় ভাবে সব দিক খতিয়ে দেখছি। যা যা দেখা হয়েছে, তার বিস্তারিত নোট নেওয়া হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়েছে। রিপোর্টে সব কিছুরই উল্লেখ থাকবে।’ কার গাফিলতিতে শনিবার যুবভারতীতে এত বড় অশান্তি তৈরি হল— এই প্রশ্নে তিনি জানান, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
Advertisement
এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। তাঁরাও এই তদন্ত কমিটির সদস্য। যদিও তাঁরা কেউই সাংবাদিকদের সামনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং পার্বত্য বিষয়ক সচিব। মেসি যে পথ দিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিলেন, সেই পথ ধরেই তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে যান। পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যেরা বৈঠকেও বসেন। সব মিলিয়ে দুপুর তিনটে পনেরো নাগাদ তাঁরা যুবভারতী ছাড়েন।
Advertisement
উল্লেখ্য, শনিবার লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে যুবভারতী স্টেডিয়ামে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মেসির গাড়ি স্টেডিয়ামে ঢোকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ এবং রড রিগো ডি’পল। কিন্তু অনুষ্ঠান চলাকালীন আয়োজক ও বিভিন্ন বিশিষ্টজনদের ভিড়ে মাঠের মধ্যে কার্যত তিন ফুটবল তারকাকে ঘিরে ফেলা হয়। গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকরা স্পষ্টভাবে মেসিকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মেসি মাঠ ছাড়ার মিনিট কুড়ির মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বোতল ছোঁড়া, চেয়ার ভাঙচুরের জেরে যুবভারতী কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
এই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পাশাপাশি দর্শকদের টিকিটের টাকা ফেরতের নির্দেশও দেন তিনি। ঘটনার মূল উদ্যোক্তা হিসেবে চিহ্নিত বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার শতদ্রু দত্তকে পরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে বিধাননগর পুলিশ। রবিবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
এ দিকে রবিবার যুবভারতী পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে যা যা দেখেছেন, তার ভিত্তিতে একটি রিপোর্টও তৈরি করবেন। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেবেন বলে জানান রাজ্যপাল।
সব মিলিয়ে যুবভারতী কাণ্ডে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য এখনও অপেক্ষা। তদন্ত কমিটির রিপোর্টই ঠিক করবে, এই বিশৃঙ্খলার নেপথ্যে কার গাফিলতি ছিল এবং ভবিষ্যতে কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
Advertisement



