ভুল অস্ত্রোপচারের গুরুতর অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রোগীর বাঁ পায়ে চোট থাকলেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ডান পায়ে। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয়রা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পরে শনিবার বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে আক্রান্ত রোগীর পরিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সুতি থানার ছাপঘাটি এলাকার বাসিন্দা রেণু বিবি কয়েক দিন আগে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে গুরুতর চোট পান। তড়িঘড়ি তাঁকে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। জঙ্গিপুর হাসপাতালেই রেণু বিবির বাঁ পায়ের এক্স-রে করা হয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যরা সেই রিপোর্ট-সহ অন্যান্য নথি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জমা দেন।
অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত প্রায় বারোটা নাগাদ রেণু বিবিকে অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেই মারাত্মক গাফিলতি ঘটে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসকরা ভুল করে বাঁ পায়ের পরিবর্তে ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করে প্লেট বসিয়ে দেন। কিছু সময় পর বিষয়টি নজরে আসতেই তড়িঘড়ি আবার রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারে ডান পা থেকে প্লেট খুলে তা বাঁ পায়ে বসানো হয়।
এই ঘটনার পরই হাসপাতালে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর আত্মীয়রা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, একের পর এক অস্ত্রোপচারের ধাক্কায় রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।
রোগীর আত্মীয় আবদুল সেলিম বলেন, বেডে ফেরানোর পর আমরা দেখি ডান পায়ে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন। প্রশ্ন তুলতেই আবার রাতের মধ্যেই অপারেশন করা হয়। রোগীকে ভালো করার বদলে আরও অসুস্থ করে দেওয়া হয়েছে। এখন হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান অথবা অন্যত্র রেফার করুন। অথচ এই ভুলের দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। যিনি ভুল অস্ত্রোপচার করেছেন, তাঁর নাম এখনও জানানো হয়নি। আমরা দোষী চিকিৎসকের শাস্তি চাই।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রোগীর পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, শুরুতে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। যদিও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।