সরকার ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা সফল হবে না : মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

যেদিন রাজ্যের অশান্ত অবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রিপাের্ট চেয়ে পাঠালেন, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী পরিস্থিতির সাপেক্ষে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সওয়াল করলেন, সেইদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে ‘বাংলা সবচেয়ে ভালাে’।

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে ফের কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের পথেই হাঁটতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে মমতার বক্তব্য, যে দু চারটে ঘটনা ঘটছে তা বিজেপি’র পার্টি ক্যাডাররা ইচ্ছাপূর্বক ঘটাচ্ছে। রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে। তবে সেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। বিধানসভা ভােট ২০২১ সালেই হবে।

নেত্রী হুংকার দিয়ে বলেন, আমার সরকার ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে, যদি বিজেপির লােকেরা মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্তব্ধ করবেন, তাহলে মনে রাখবেন মৃত বাঘের চেয়ে আহত ভয়ংকর। আমাকে জেলে পাঠালেও কোনও লাভ হবে না। বাংলাকে গুজরাট বানাতে দেব না।


সােমবার প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং সেরে মমতা গত আট বছরে রাজ্যের উন্নয়ন পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরেন। এরপর সন্দেশখালির প্রসঙ্গ না তুলেই মমতার সেই ঘটনাকে বিজেপির ‘প্ল্যান্টেড গেম’ বলে চিহ্নিত করেন। একই সঙ্গে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী একথাও স্বীকার করে নেন, কিছু কিছু জায়গায় থানার ওসি এবং সাব ইনস্পেক্টররা ঠিকমতাে কাজ করছে না। আমরা বিষয়গুলি দেখব এবং কড়া হাতে ব্যবস্থা নেব। এইসব ক্ষেত্রে তদন্তমূলক নজরদারি চালাবে পুলিশ।

তবে নির্বাচনের সময় থেকে শুরু করে বিজেপি সােস্যাল মিডিয়াকে যেভাবে ব্যবহার করছে, তা নিয়ে সােচ্চার হন মমতা। মমতার অভিযােগ, জঙ্গলমহল এবং দার্জিলিঙের পরিবেশকে অশান্ত করছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তােলেন, দার্জিলিং-এর কাউন্সিলরদের নেপালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর সেখানে তাদের ‘হাউজ অ্যারেস্ট’ হলেও তারপর দিল্লিতে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের সময় থেকেই সােস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঘটানােতেও বিজেপির হাত রয়েছে।

মমতা এদিন ফের, বিজেপি লােকসভার জয়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বিজেপি সারা দেশে ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এতদিনের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বহু জায়গায় ঢাকা ছড়িয়ে ভােট কেনা হয়েছে। বিভিন্ন বুথে বিজেপি পাওয়া ভােট নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বামফ্রন্টের কমে যাওয়া ভােট শতাংশেই বিজেপি জিতেছে, তা নিয়েও একমত নন মমতা।

তিনি বলেন, এই ভােট নিয়ে অনেক খেলা আছে। হয়তাে পরে সত্য উদঘাটন হবে। সােমবার প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং-এর পর ফের রাজ্যের উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে উদ্যোগী হন মমতা। কেন্দ্রকে এই বছরই ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ বাবদ শােধ করতে হবে। ঋণের পুনর্বিন্যাসের জন্য কেন্দ্রের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি।

গত ছ’মাসে রাজ্যকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার যােগান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। এছাড়া নির্বাচনী বিধির জন্য গত ছ’মাস কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি। একশ দিনের কাজ, ডেঙ্গু মােকাবিলা, ফণী’র তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি সামলানাে, কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করা নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলােচনা করা হয়। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় একশাে দিনের কাজে অবহেলা নজরে এসেছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরি, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি প্রকল্প রূপায়ন ইত্যাদির কাজে গতি আনার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়নে অনিয়ম ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে সংযােগ রেখে মনিটরিং সেল অন প্রােগ্রাম ইমপ্লিমেনটেশন নামে একটি গ্রিভান্স সেল তৈরি করা হবে। এই সেলের শীর্ষে থাকবেন কর্নেল দীপ্তাংশু। প্রকল্প নিয়ে কারাে কোনও অভিযােগ থাকলে ১৮০০ ৩৪৫ ৮২৪৪ টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করা যাবে। এসএমএসও করা যাবে ১০৭৩৩০০৫৪ নম্বরে। এছাড়া অভিযােগ নথিভুক্ত করা যাবে wbcmro@gmail.com এই ইমেল মারফত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন গত আট বছরে রাজ্যের উন্নয়নের সূচকগুলি তুলে ধরেন। যার নিরিখে এই রাজ্য সারা দেশের মধ্যে প্রশংসনীয় স্থানে আছে। মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত জিএসটি নীতি সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। রাজস্ব আদায় গত বছরের তুলনায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গত আট বছরে রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে ব্যয় ৬ গুণ, মূলধনী ব্যয় ১১ গুণ, সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় ৪ গুণ, কৃষি এবং সহযােগী ক্ষেত্রে ব্যয় ৯ গুণ, পরিকাঠামাে উন্নয়নে ব্যয় ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনের পর ফের সেই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।