কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের পরীক্ষা দিতে স্বামী ও চার বছরের শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে রওনা হয়েছিলেন তরুণী। দীর্ঘ প্রায় ৭০ কিমি পথ পাড়ি দেওয়ার সেই সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল। ঘন কুয়াশার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাইকটি। রাস্তায় ছিটকে পড়ার পর পিছন থেকে ধেয়ে আসা একটি ১০ চাকার ট্রাকের চাকায় পিষে মৃত্যু হল ওই তরুণী পরীক্ষার্থীর। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলায়।
মৃতার নাম মাধবী বর্মণ সরকার (২৫)। তিনি জলপাইগুড়ির ঘুঘু ডাঙার সাহা পাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ধূপগুড়িতে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদের পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষায় অংশ নিতে সকালেই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে স্বামীর বাইকে চেপে রওনা দেন মাধবী।
বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি। সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ছিল ঘন কুয়াশার দাপট। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা ছিল অত্যন্ত কম। জলপাইগুড়ি–হলদিবাড়ি রাজ্য সড়কের উপর ঘুঘু ডাঙার সাহা পাড়ার কাছে আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাইকটি। তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন।
ঠিক সেই সময় পিছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে একটি ১০ চাকার ট্রাক আসছিল। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকের চাকা পিষে দেয় মাধবীকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্বামী ও চার বছরের সন্তান অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দুর্ঘটনা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ছুটে আসেন। তাড়া করে ওই ঘাতক ট্রাকটিকে ধরে ফেলা হয়। চালককেও আটক করা হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
একদিকে পুলিশের চাকরির স্বপ্ন, অন্যদিকে জীবনযুদ্ধ। কুয়াশা আর গতির মাঝেই স্তব্ধ হয়ে গেল মাধবীর জীবন। দীর্ঘ পথ বাইকে পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি, ঘন কুয়াশায় যান চলাচলের নিরাপত্তা এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব নিয়ে এই দুর্ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল।