মোদিবাবু আর অমিত শাহবাবুর সাইনবোর্ড উঠিয়ে দেবই : মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS/File)

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া, ৬ মার্চ- দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাজের চেয়ে নিজের বিজ্ঞাপন বেশি করেন। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেড়ান। আমি মোদির মতো বাথরুম উদ্বোধন করতে যাই না। এত পাবলিসিটি কেন? বুধবার দুপুরে হাওড়ার সাত্রাগাছি মৌজার আড়ুপাড়ায় রাজ্যের প্রথম হিন্দি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন এবং একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই মোদিকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, সেখানেই বিজেপি’কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, বিজেপি সরকারের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ হয়ে গিয়েছে। মোদিবাবু আর অমিত শাহবাবুর সাইনবোর্ড উঠিয়ে দেবই।

মমতা এদিন সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে নাম না করে মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাবে। তাই এখন মিসাইল দেখাচ্ছেন, মানুষের মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। জওয়ানদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছেন। লজ্জা করে না? সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য দেখানো হচ্ছে। এক একজনকে একদিনের জন্য বোকা বানানো যায়, কিন্তু চিরদিনের জন্য বোকা বানানো যায় না।

মমতা অভিযোগ করেন, বিজেপি কর্মীরা সারাদিন ধরে গুগল সার্চ করছে। গুগলে সার্চ করে আমার ধর্ম দেখছে। আমার ধর্ম মানবতা। আমি কিছুতেই দাঙ্গা করতে দেব না। কেউ মোদি সরকারের বিরোধিতা করলে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ যেন গব্বর সিং।


মুখ্যমন্ত্রী এদিনের অনুষ্ঠানে মোদি সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরতে বলেন, নোটবন্দির সময় দু’কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে। যেখানে রাজ্য সরকারের আমলে ৪০ শতাংশ বেকারি কমেছে। কর্মসংস্থান তৈরিতে রাজ্যই এখন প্রথম। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দিলেন, আমাদের এখন নির্বাচন নয়, আমাদের এখন অনেক উন্নয়ন করতে হবে।

বুধবার হাওড়ায় একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মমতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যুবশ্রী-অর্পণ। যার ফলে রাজ্যের ৫০ হাজার কর্মহীন শিক্ষিত তরুণ তরুণীকে এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। যাতে তারা নিজেদের মতো করে কোনও ব্যবসা শুরু করতে পারে। ভোটের আগে রাজ্যের যুবশ্রী’দের এই ‘অর্পণ’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ধানের সহায়ক মুল্যও কুইন্টল প্রতি ১৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭৫০ টাকা করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এছাড়া এদিন স্বাস্থ্যভবনকে সল্টলেক থেকে নবান্নে স্থানান্তরিত করার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। নবান্নের পেছনে যে তিন একর জায়গা রয়েছে, সেখানেই এই স্বাস্থ্যভবন তৈরির জন্য ডিপিআর তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে।

এছাড়া পুরুলিয়াতে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যা বাস্তবায়িত হলে পুরুলিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। বর্তমান সরকারের আমলে ১৩ টি নতুন হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে।

রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের উদ্যোগে তৈরি ৩১ টি হিমঘর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে ঝাড়গ্রাম (৩), পূর্ব মেদিনীপুর (১), জলপাইগুড়ি (১), বীরভূম (৫), নদীয়া (২), বর্ধমান (৫), মুর্শিদাবাদ (৯), উত্তর চব্বিশ পরগণা (৩), উত্তর দিনাজপুর (২)। এছাড়া কোচবিহার ও ঝাড়গ্রামে দু’টি খাদ্যভবনেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। চালু করা হয় দার্জিলিং-এর ২১ টি চা বাগান অঞ্চলে ন্যায্য মূল্যে ওষুধের দোকান। এছাড়া হুগলিতে নতুন অগ্নিনির্বাপন কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনেরও উদ্বোধন করা হয় এদিন।

এছাড়া বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎশক্তির মান বাড়ানো, রাস্তাঘাটের উন্নতি, মাটিগড়া ও নকশালবাড়িতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি, ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের অন্তর্গত একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মমতা। প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার ২১৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মমতা। ভোটের দিন ঘোষণার আগে জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে মমতা রাজ্যবাসীর মন জয় করার পথেই হাঁটলেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রুটিগুলিও তুলে ধরলেন।