গোটা দেশে বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে কেন জুন মাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে একই সময়ে বাংলাদেশি শনাক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলার জন্যই এই অভিযান। কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে তাই আদালতের নির্দেশ, এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হোক, নয়তো গোটা দেশে ভুল বার্তা যেতে পারে। হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ একথা বলেছে।
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার হাইকোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দিল্লির ঘটনা ভয়ঙ্কর। আমরা তদন্ত করে দেখেছি। ওঁরা এখানে থাকতেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রসচিব এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।’ যদিও দিল্লি পুলিশের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, তাঁরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা এদেশের নাগরিক নন। যদি তাঁরা বাংলাদেশে যান তাহলে কীভাবে হেবিয়াস কর্পাস মামলা? দিল্লি আদালতে এই পরিবার আলাদা মামলা করেছে, কিন্তু সে কথা গোপন করেছে— শুধু এই কারণে মামলা খারিজ হওয়া দরকার। এখানে কেউ জন্ম নিলেই সে এ দেশের নাগরিক বলে গণ্য হয় না।
বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীকে বলেন, ‘দিল্লি আদালতে আপনারা মামলা করেছেন, সেটা কেন জানাননি? এটা কী ধরনের আচরণ? পরিবারের অন্য কেউ গিয়ে মামলা করেছেন। আর এখানে বলছেন কিছু জানি না।’
কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এই তল্লাশি যদি একই সময়ে শুরু হয় তার একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কী কারণ রয়েছে। এটি কি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে?’ প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কেন জুন মাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আদালতের। কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর মন্তব্য করেন, ‘আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টি জানানো হোক। না হলে ভুল বার্তা যেতে পারে। কোনও ভুল পদক্ষেপ হতে পারে। কারণ অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলার জন্য আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।’
আদালতে কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর কারও সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলে তাঁকেই ডেকে পাঠানো হচ্ছে। বাংলা বলেন এমন সবাইকে আটক করা হয়নি। ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ৫ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে সেই ৫জন নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁরা বাংলাদেশি।
কেন্দ্রের আইনজীবী আদালতকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন।