• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

বাণিজ্যিক পর্যটনে দেশের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ

রাজ্যের প্রশাসনিক মহল মনে করছে, পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উন্নয়ন আগামী দিনে রাজ্যের অর্থনীতিতে আরও নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বাংলার পর্যটন শিল্পে এখন শুরু হয়েছে নবজোয়ার। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশের পর্যটন মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ এখন অন্যতম সেরা স্থান দখল করেছে। বিশেষত বাণিজ্যিক পর্যটন বা ‘মাইস’ খাতে বাংলা এতটাই এগিয়ে যে, দেশের মধ্যে সরাসরি প্রথম গন্তব্য স্থানে উঠে এসেছে। রাজ্য সরকারের দাবি, শুধু পর্যটকের ভিড়ই নয়, পর্যটন-ভিত্তিক আয় এবং কর্মসংস্থানে পশ্চিমবঙ্গ এখন এক অনন্য নজির গড়ে তুলেছে।

সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত ‘সিআইআই ট্রাভেল ইস্ট ২০২৫’-এর নবম সম্মেলনে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী যে সব তথ্য তুলে ধরেছেন, তা রাজ্যের পর্যটন শিল্পের উত্থানকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি জানান, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বাংলায় ইতিমধ্যেই ১,২০০-র বেশি বাণিজ্যিক সভা-সেমিনার ও সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে। এতে রাজ্যে ব্যবসা হয়েছে প্রায় এক হাজার একশো কোটি টাকার বেশি। শুধুমাত্র অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের কোষাগারে প্রায় দুইশো কোটি টাকার রাজস্ব জমা পড়েছে।

Advertisement

নন্দিনীর বক্তব্যে উঠে এসেছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাঁর দাবি, ২০২৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কলকাতার প্রথম সারির সমস্ত হোটেলগুলি আগাম বুকিং হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী পর্যটকদের কাছে বাংলা এখন অন্যতম পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে। প্রশাসনিক দপ্তরের দাবি, সরাসরি আন্তর্জাতিক বিমান সংযোগ সীমিত হলেও পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisement

পর্যটন দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি পর্যটকের আগমনেও নতুন রেকর্ড গড়ছে বাংলা। আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি, ব্রিটেন এবং নেপাল—এই দেশগুলি থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এখন বাংলায় আসছেন। বিদেশি পর্যটকের আগমনের নিরিখে বর্তমানে রাজ্য সারাদেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

তবে রাজ্য সরকার শুধুমাত্র বাণিজ্যিক পর্যটনেই থেমে নেই। হেরিটেজ পর্যটন, খাদ্যভিত্তিক পর্যটন এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের আধিকারিক অভিষেক কুমার তিওয়ারি জানান, গোটা রাজ্যে বর্তমানে নথিভুক্ত হোম-স্টের সংখ্যা পাঁচ হাজার চারশোরও বেশি, যা সংখ্যার বিচারে দেশে দ্বিতীয় স্থানে। এটি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুন করে চাঙ্গা করে তুলছে। বিশেষত উত্তরবঙ্গে হোম-স্টের জনপ্রিয়তা এখন অভাবনীয় উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে।

এদিকে পর্যটন শিল্পের উদ্যোক্তারাও রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে যথেষ্ট প্রশংসা করেছে। এসকেএম গোষ্ঠীর কর্তা প্রশান্ত শর্মা বলেন, পাহাড়, বনাঞ্চল ও সমুদ্র— এই তিন ভিন্ন ভূপ্রকৃতি মিলিয়ে বাংলার প্রতি পর্যটকদের বিরাট আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এখানকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সরকারের যথাযথ প্রচার। ফলে বিদেশি পর্যটকের কাছে বাংলা এখন অন্যতম নির্বাচিত গন্তব্যস্থল।

রাজ্যের প্রশাসনিক মহল মনে করছে, পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উন্নয়ন আগামী দিনে রাজ্যের অর্থনীতিতে আরও নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।

Advertisement