ফর্ম জমা দিয়ে রিসিভ কপি নিলেও ভোটার তালিকাতে নাম নেই

নিতাই সরকার

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই চমকে উঠেছেন আলিপুরদুয়ার শহরের এক প্রৌঢ় ভোটার। নিয়ম মেনে এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। তাঁর হাতে রয়েছে বিএলও-র সই করা রিসিভ কপিও। পরিবারের বাবা-মা থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যদের নাম তালিকায় থাকলেও, একমাত্র তাঁর নামই নেই খসড়া ভোটার তালিকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, তাঁকে ‘খুঁজে পাওয়া যায়নি’ বলে বাদের তালিকায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা পরিবারে।

ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার শহরের ১২/১৭৮ নম্বর বুথ এলাকায়। ওই বুথের ভোটার নিতাই সরকার। অরবিন্দনগর জুনিয়র হাইস্কুলে অবস্থিত ১৭৮ নম্বর পার্টের খসড়া ভোটার তালিকায় পরিবারের সকলের নাম থাকলেও নিতাই সরকারের নাম ওঠেনি। উল্টে বাদের তালিকায় ৩৪ নম্বরে রয়েছে তাঁর নাম। নাম বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘খুঁজে পাওয়া যায়নি বা অনুপস্থিত’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিতাই সরকার অল্প বয়সে কাজের সূত্রে বাইরে থাকায় ১৮ বছর বয়সে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। পরে ২২ বছর বয়সে, ২০০৩ সালে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের তালিকায় বাবা-মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, তর্কের খাতিরে ধরে নিলেও যদি নিতাই সরকার সন্দেহজনক ভোটার ধরা হত, তা হলেও তাঁর নাম তো খসড়া তালিকায় থাকার কথা। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন তাঁকে শুনানিতে ডাকতে পারত। কিন্তু তা না করে এনুমারেশন ফর্ম জমা নেওয়ার পরেও কেন তাঁকে সরাসরি বাদের তালিকায় ফেলে দেওয়া হল?


নিতাই সরকারের দাবি, তিনি নিজে উপস্থিত থেকেই এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট বিএলও ফর্ম গ্রহণ করে সই করা রিসিভ কপিও তাঁকে দেন। তাঁর কথায়, ‘আমি নিজে ফর্ম জমা দিয়েছি। রিসিভ কপিও আছে। তার পরেও কীভাবে আমার নাম বাদ গেল, তা বুঝতে পারছি না। পরিবারের সবাই ভোটার, শুধু আমার নাম নেই। বলা হচ্ছে আমি নাকি অনুপস্থিত। বিষয়টা ভেবে ভীষণ আতঙ্কে আছি।’

এই ঘটনায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, নিয়ম মেনে সব নথি জমা দেওয়ার পরেও যদি ভোটারের নাম এভাবে বাদ যায়। তবে ভোটার তালিকা সংশোধনের উপর আস্থা রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আপাতত নিতাই সরকার ও তাঁর পরিবার তাকিয়ে রয়েছেন পরবর্তী সংশোধনী তালিকার দিকে, তালিকায় নাম ওঠে কিনা এখন সেটাই দেখার।

বিষয়টি জানার পর ১৭৮ নম্বর পার্টের বিএলও শুভ ভট্টাচার্য জানান, নিতাই সরকার তাঁর কাছেই এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেই রিসিভ কপিতে সই করেছিলেন। বিএলও-র বক্তব্য, ‘ওঁর নাম কেন খসড়া তালিকায় ওঠেনি, তা আমার কাছেও স্পষ্ট নয়। তবে একটি বিষয় ছিল, ওঁর বয়স ৪৫ বছরের বেশি হলেও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। সেই কারণে এক সময় অসঙ্গতির তালিকায় নাম ছিল। পরে ভেরিফিকেশনের একটি অপশন নির্বাচন কমিশন বন্ধ করে দেয়। এখন ঠিক কোন পর্যায়ে কী হয়েছে, বলা মুশকিল। তবে চিন্তার কিছু নেই। ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়া হয়েছে। নাম উঠে যাবে।’