ঠাকুরবাড়ির সিএএ ক্যাম্পে নাগরিকত্ব নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নাগরিকত্বের আশায় দেড় মাস ধরে ঠাকুরবাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মতুয়া। ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হয়েছিল সিএএ ক্যাম্প। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং তাঁর দাদা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর— দুই ভাই আলাদা আলাদা ক্যাম্প চালান। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেও আজও স্পষ্ট নয়, আসলে কতজন মতুয়া নাগরিকত্ব পেলেন। এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মতুয়াগড় জুড়ে।

দুই শিবিরের দাবি একে অপরের সঙ্গে মিলছে না। সুব্রত ঠাকুরের বক্তব্য, তাঁর ক্যাম্প থেকে ১৫০ থেকে ২০০ জন মতুয়া নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট পেয়েছেন। অন্যদিকে, শান্তনু ঠাকুর ঘনিষ্ঠ সংগঠনের দাবি, তিন থেকে চার হাজার মতুয়া নাগরিকত্ব পেয়েছেন। কিন্তু দুই পক্ষের কেউই সেই তথ্যের পক্ষে নির্দিষ্ট তালিকা বা নথি প্রকাশ করতে পারেননি। ফলে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে সন্দেহ আরও বেড়েছে।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন মতুয়াগড় এলাকা থেকে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন ভোটারকে শুনানিতে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মতুয়া ভোটার। যাঁরা নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় ক্যাম্পে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই এখন বুঝতে পারছেন, তাঁদের সামনে কঠিন আইনি প্রক্রিয়া অপেক্ষা করছে।


প্রসঙ্গত, গত দেড় মাস ধরে শান্তনু ঠাকুরের উদ্যোগে তাঁর বাড়ির সামনে ও নাটমন্দির এলাকায় বসেছিল সিএএ ক্যাম্প। চেয়ার, টেবিল ও কম্পিউটার বসিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলত। মাইকে ঘোষণা করা হতো, মতুয়া কার্ড, ধর্মীয় শংসাপত্র ও নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় শংসাপত্রের জন্য নেওয়া হতো ২০০ টাকা। নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য এফিডেভিট-সহ খরচ পড়ত প্রায় ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে হাজার টাকা করে খরচ করেছেন বহু পরিবার। শান্তনু শিবিরের দাবি, তাঁদের ক্যাম্পে প্রায় ২০ হাজার মতুয়া আবেদন করেছেন। সুব্রত ঠাকুরের ক্যাম্পে আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

তবে বাস্তবে কতজন নাগরিকত্ব পেলেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সম্পাদক সুখেন গাইন বলেন, ‘শান্তনু ঠাকুরের ক্যাম্প থেকে ঠিক কতজন নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট পেয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’ এই বক্তব্যই অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ঠাকুরবাড়িতে বসে এই সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব নয়। গোটা বিষয়টাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।’

মতুয়াগড়ের বাসিন্দারা বলেন, নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমরা ক্যাম্পে আবেদন করেছি। এখন শুনানিতে হাজির হতে বলা হচ্ছে। আমাদের হাতে কোনও পাকা নথি নেই। আর এক মতুয়া নেতার অভিযোগ, তিনি এখনও পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির ক্যাম্প থেকে কোনও মতুয়া নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট পাননি।

এই আবহেই প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে নাগরিকত্ব ইস্যুতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও কর্মসূচি নেই বলেই জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। ফলে নাগরিকত্বের স্বপ্ন দেখা বহু মতুয়া পরিবারের মনে এখন গভীর অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।