রাজনীতিতে অবসরের বয়স নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তিনি আগেই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, সকলের জন্য রাজনীতিতে ৬৫ বছরই সর্বোচ্চ বয়স হওয়া উচিত। আর নিজে ৬০ পেরোলেই রাজনীতি থেকে সরে যাবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, বয়সবিধি সবসময় সরলভাবে প্রযোজ্য নয়। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ৪০ বছরের অনেক তরুণ দলের কাজে নিষ্ক্রিয়, আবার ৮০ ছুঁইছুঁই বয়সী নেতা দাপিয়ে কাজ করছেন। এই বাস্তব চিত্র দেখেই অভিষেকের বয়স সংক্রান্ত ধারণায় কিছুটা নমনীয়তা এসেছে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি অভিষেক দু’জন প্রবীণ তৃণমূল নেতার উদাহরণ দিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন অশোক দেব, যিনি ডায়মন্ড হারবারের বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্রের মানুষের সেবায় সক্রিয়। বিয়ে, পুজো, শ্রাদ্ধ বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাকলেই হাজির হন। খড়দহের বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি ও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও নিজের বিধানসভা ও মন্ত্রিত্বের কাজের পাশাপাশি দলের কাজে সক্রিয়। অভিষেকের মতে, এই ধরনের ‘ব্যতিক্রমী’ নেতাদের উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বয়সবিধি মানলেও তা নিয়ে কোনও গোঁড়ামি কাম্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে তৃণমূলের অন্দরমহল তপ্ত হয়েছিল। প্রথম সারির একাধিক নেতা প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণদের প্রার্থী করা হবে। যদিও দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই বলেছিলেন, ‘মনের বয়সটাই আসল।’ বাস্তবে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যের ৪২টি লোকসভার মধ্যে ৩৯টি কেন্দ্রে দলের প্রার্থীদের প্রচারে গিয়েও তিনটি কেন্দ্রে অংশ নেননি অভিষেক। পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে, সেই তিন কেন্দ্রের প্রার্থীরা দীর্ঘ সময়ে অসুস্থ ছিলেন। আবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৭০ ছুঁইছুঁই বয়সেও সংসদ ও কেন্দ্রীয় কাজে সক্রিয় ছিলেন।
বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে অভিষেকের এই ‘ব্যতিক্রমী বার্তা’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। দলের অনেকের মতে, অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, প্রার্থী চয়নের ক্ষেত্রে কেবল বয়সকেই সূচক হিসেবে ধরা হবে না। তরুণ মানেই নির্বাচিত, বৃদ্ধ মানেই বাদ— এমন সরলীকরণ করা হবে না। দলের অন্দরমহলে তার অনুগামীদেরও এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।